sharebarta lagoশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের শেয়ারের দিকে ঝোঁক এখন বিনিয়োগকারীদের। দীর্ঘ সময় পর বাজার পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক আচরন করায় ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ার হিসেবে পরিচিত জ্বালানী খাতের শেয়ারের দিকে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। তাছাড়া জ্বালানী খাতের কয়েকটি শেয়ারের দর অনেক নিচে দামের পড়ে থাকায় এসব শেয়ারের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

দীর্ঘদিন নেতিবাচক গন্ডির মধ্যে আটকে থাকা বাজার থেকে বিনিয়োগকারীদের অর্জিত অভিজ্ঞতার ফল এটি। কারণ, ভয়াবহ ধসের আগে দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ার কিনেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা। ধসের পর দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে বাজার। বিশেষ করে সরকার পুঁজিবাজারের প্রতি মনোযোগী হওয়ায় পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে।

ধীরে ধীরে সব শ্রেনীর বিনিয়োগকারী বাজারমুখী হতে শুরু করেছেন। তবে পূর্বের মতো এবার দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ার এড়িয়ে চলছেন বিনিয়োগকারীরা। এর পরিবর্তে মৌল ভিত্তি শেয়ারগুলোর প্রতি বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছেন বিনিয়োগকারীরা।

dse indexনির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে বড় মূলধনি কোম্পানি, বিশেষ করে বিদ্যুৎ জ্বালানী ও বহুজাতিক কোম্পানিতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া সিমেন্ট খাতের কোম্পানিতেও তাদের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

পুঁজিবাজারে গত কয়েক মাস ধরেই জ্বালানী খাতের শেয়ারে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করছে। গত দুই অর্থবছর ধরেই দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ( ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে ছিল জ্বালানী খাত।

তবে এ কেন জ্বালানী খাতের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের এত আগ্রহ। এ নিয়ে শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমের একটি টিম অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করছে। এর মধ্যে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোট লেনদেনের প্রায় ২০ শতাংশই রয়েছে জ্বালানী খাতের দখলে। অপরদিকে চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) এ খাতের শেয়ারগুলো শক্ত অবস্থানে রয়েছে।

Screenshot_1-59এক সময় জায়গাটি ছিল ব্যাংক খাতের দখলে। পুঁজিবাজারের প্রাণ হিসেবে পরিচিত এই ব্যাংক খাত এখন বেশ তলানিতে। ধারাবাহিকভাবে কমছে এ খাতের অবদান। তাছাড়া সরকারের নীতি নির্ধারকসহ সব মহলে আন্তরিকতার ফলে গত সপ্তাহে বাজার কিছুটা স্থিতিশীলতার আভাস ছিল।

ধারাবাহিক দরপতন ঠেকাতে স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে নানামুখি তৎপরতা আর সরকারের পক্ষ থেকে বর্তমান বাজারের পরিস্থিত উন্নয়নের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা জ্বালানী খাতের শেয়ার বিনিয়োগ করছেন বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন।

titas scriptডিএসইর লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৭ দশমিক ৭৪ শতাংশই হয়েছে জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলো ঘিরে। এর আগের অর্থবছরেও (২০১৩-১৪) ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষে ছিল এ খাত। সে সময় জ্বালানি খাতে লেনদেন হয়েছে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। কিন্তু কেন জ্বালানী খাত ঘিরে বিনিয়োগকারিদের এত আগ্রহ? প্রথমত, সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য জ্বালানি খাতকে খুবই প্রাধান্য দিচ্ছে। সরকারের নানা প্রতিশ্রুতিও রয়েছে এ খাত ঘিরে।

বর্তমানে দেশে সবচেয়ে ভাইব্রেন্ট খাত হলো জ্বালানি উল্লেখ করে বিশ্লেষকরা বলেন, এ খাতের কোম্পানিগুলো গত কয়েক বছর ধরেই ভালো ব্যবসা করছে। যার ফলে তারা বিনিয়োগকারিদের ভালো মুনাফাও দিচ্ছে। ফলে শেয়ারবাজারেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোর প্রতি আগ্রহ অনেক বেশি।

spclদ্বিতীয়ত, জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সর্বশেষ হিসাব বছরে শুধু একটি কোম্পানি বাদে সব কোম্পানিই শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এ খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে লিন্ডে বিডি ৩১০ শতাংশ, পদ্মা অয়েল ১০০ শতাংশ, যমুনা অয়েল ১০০ শতাংশ, সিভিও পেট্রোকেমিক্যালস ৪০ শতাংশ, শাহজীবাজার পাওয়ার ৩১ শতাংশ, বারাকা পাওয়ার ১৬ শতাংশ, ডেসকো ১৫ শতাংশ,

ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ৩০ শতাংশ, এমজেএলবিডি ৩০ শতাংশ, জিবিবি পাওয়ার ১৫ শতাংশ, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ১০৫ শতাংশ, পাওয়ার গ্রীড ১৫ শতাংশ, সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ার ২৫ শতাংশ, সামিট পাওয়ার ১৮ শতাংশ, তিতাস গ্যাস ১৫ শতাংশ, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন ৩০ শতাংশ এবং বিডিওয়েল্ডিং ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে।

sppclবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাত হিসেবে একটি খাতের প্রায় সব কোম্পানি ভালো পরিমাণে মুনাফা করা এবং তা বিতরণ করা খুবই ভালো দিক। এজন্যই এ খাতের দিকে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশী। শেয়ারবাজারের উন্নয়নের জন্য কোম্পানিগুলোর ভালো মুনাফা করা জরুরী। কারণ কোম্পানিগুলো ভালো মুনাফা করতে পারলে কোম্পানিগুলোর দিকে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে। এতে বাজারও ইতিবাচক হবে।

এদিকে আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রোববার বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, এ অর্থে ৮৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছে সরকার। আর এ খবরে আজ এক সাথে ঝলসে উঠে এ খাতের বেশীরভাগ কোম্পানির শেয়ার। এদিন লেনদেন শুরুর প্রথম দুই ঘন্টায় (সাড়ে ১২টায়) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের প্রায় ৯৫ শতাংশ কোম্পানির দর বেড়েছে।

powerডিএসই সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ১৯টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ১৮টি কোম্পানির দর বেড়েছে এবং কমেছে ১টির শেয়ার দর। এদিন এ খাতের তিতাস গ্যাসের দর বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৩.৫০ টাকা বা ৭.৬৪ শতাংশ। এ সময়ে কোম্পানিটির মোট ২ লাখ ৯৬ হাজার ১৫৪টি শেয়ার মোট ২ হাজার ৯৮৭ বাজার হাতবদল হয়। আর শেয়ারটি সর্বশেষ লেনদেন হয় ৪৯.৩০ টাকা দরে।

এছাড়াও এ খাতে থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে, ডেসকোর দর বেড়েছে ২.৪০ টাকা, লিনডে বিডির ৩৩.১০ টাকা, ইউনাইটেড পাওয়ারের ২.৭০ টাকা, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টসের ২১.১০ টাকা, বারাকা পাওয়ারের ০.২০ টাকা, বিডি ওয়েল্ডিংয়ের ০.৪০ টাকা, সিভিও পেট্রোর ০.৩০ টাকা, ডোরিন পাওয়ারের ০.১০ টাকা,

জিবিবি পাওয়ারের ০.৪০ টাকা, যমুনা ওয়েলের ২.৬০ টাকা, কেপিসিএলের ১.০০ টাকা, এমজেএল বিডির ০.৭০ টাকা, মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ৩.৮০ টাকা, পদ্মা অয়েলের ১.৯০ টাকা, পাওয়ার গ্রিডের ১.৮০ টাকা, সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ারের ০.৮০ টাকা এবং সামিট পাওয়ারের শেয়ার দর বেড়েছে ০.৫০ টাকা। আর একমাত্র শাহজিবাজার পাওয়ারের দর কমেছে ১.৮০ টাকা।

জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য জাতীয় বাজেটে ১৪ হাজার ৯৫১ কোটি ৯ লাখ টাকার একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ১৩ হাজার ৪০ কোটি ৯ লাখ টাকার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এছাড়া ১ হাজার ৪৯০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

এদিকে, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে অনুন্নয়ন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। যা ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ ছিল ১৮ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। ১৮ হাজার ৫৪০ কোটি টাকার মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগে বরাদ্দ ছিল ১৬ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। আর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে ছিল ২ হাজার ৩৭ কোটি টাকা।

Share Barta 24 | Latest Share News