প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের শক্ত এনক্রিপশনের কারণে আইফোন ব্যবহারের দিকে ঝুকঁছে অপরাধীরা। অপরাধের পর সে বিষয়ে যেন কোনো তথ্য বের করা না যায় সেজন্য নিজেদের ডিভাইস বদলে ‘পছন্দের ডিভাইস’-এর তালিকায় আইফোনকেই বেছে নিচ্ছে তারা– যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালতে দাখিল করা নথিতে এমনটাই দাবি করেছে ‘ফেডারেল ল’ এনফোর্সমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’সহ তিনটি আইন-শৃংখলা প্রয়োগকারী সংস্থা।

বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সঙ্গে অ্যাপলের চলমান লড়াই নিয়ে পর্যবেক্ষণের সময় বিচারকের কাছে ওই তথ্য দেয় ওই সংস্থাগুলো। তারা জানায়, ‘অনেকক্ষেত্রেই’ তারা এ বিষয়টি লক্ষ্য করেছেন- অপরাধীরা তাদের ব্যবহৃত অন্যান্য ফোনগুলো বদলে আইফোন ব্যবহার শুরু করেছে। কিন্তু তারা এইসব ঘটনার কোনো নির্দিষ্ট তালিকা দেননি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

তাদের দেওয়া ওই নথিতে কারাগার থেকে করা একটি ফোন কলের বিবরণ উল্লেখ করা হয়। ২০১৫ সালে নিউ ইয়র্ক কর্তৃপক্ষ এই ফোন কলে আড়ি পেতেছিল। এই ফোন কলে একজন কারাবাসী অ্যাপলের এনক্রিপ্টেড অপারেটিং সিস্টেম-কে ‘বিধাতার উপহার’ হিসেবে ডাকেন বলে জানিয়েছে তারা।

স্যান বার্নার্ডিনো হত্যাকাণ্ড তদন্তের স্বার্থে এফবিআই-কে সহায়তায় অ্যাপল-কে নির্দেশ দেয় মার্কিন এক আদালত। ফেব্রুয়ারির ১৬ তারিখ যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের আদালতের এক বিচারক জানান, হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা সৈয়দ রিজওয়ান ফারুক-এর ফোনের এনক্রিপশন ভাঙতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে সহযোগিতা করতে হবে মার্কিন এই টেক জায়ান্টের।

আদেশে বিচারক শেরি পিম জানান, তদন্তের স্বার্থে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার যে কারিগরি সহযোগিতার প্রয়োজন পড়বে অ্যাপলকে তা অবশ্যই করতে হবে। হত্যাকাণ্ডের মূল হোতার ব্যক্তিগত ফোনটি হচ্ছে আইফোন ৫সি। আর তাই অ্যাপলের উদ্দেশ্যে আদালত ওই নির্দেশ জারি করে। কিন্তু আদালতের নির্দেশে বেঁকে বসে অ্যাপল।

কারণ হিসেবে জানানো হয়, কেবল ওই একটি ফোন নয়, যাবতীয় বিদ্যমান আইফোনে ব্যাকডোর তৈরি করে দেওয়ার আবদার করে বসেছে এফবিআই, যদিও এফবিআই বলছে মাত্র একবারই তারা ওই ব্যাকডোর ব্যবহার করবে। এর বিপক্ষে অ্যাপলের বক্তব্য হচ্ছে– ওই ব্যাকডোরের সুযোগ পরবর্তীতে যে কেউ নিতে পারবে এবং আইফোন ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।

গুগল, ফেইসবুক, মাইক্রোসফটসহ আরও ২৪টিরও বেশি বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলকে সমর্থন জানিয়ে বৃহস্পতিবার আদালতে নথি দাখিল করেছে। অন্যদিকে, আইন-শৃংখলা প্রণয়নকারী সংস্থাদের দলসহ স্যান বার্নার্ডিনো ঘটনার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ছয়জন আত্মীয় বিচার বিভাগকে সমর্থন জানিয়েছেন। তবে, ঘটনায় গুলিবিদ্ধ অ্যানিসের স্বামী সালেহিন খন্দকার সমর্থন জানিয়েছেন অ্যাপল-কে।

অ্যাপলের এমন মনোভাব যুক্তরাষ্ট্রে ‘তদন্তকার্যের জন্য বিরাট হুমকি’ বলে দাবি করেছে আইন-শৃংখলা প্রণয়নকারী সংস্থাগুলোর ওই দল।

বৃহস্পতিবার আরেকটি নথিতে স্যান বার্নার্ডিনো কাউন্টি ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি’স অফিস জানায়, হত্যাকাণ্ডের সময় ৯১১ নাম্বারে (যুক্তরাষ্ট্রের জরুরী প্রয়োজনে সাহায্য চাওয়ার নাম্বার) অন্তত দুটি ফোন কলে তিনজন আক্রমণকারীর কথা বলা হয়েছে, দুইজন নয়।

যদিও এই তথ্য ‘নিশ্চিত নয়’, তবে যদি সেখানে তিনজন আক্রমণকারী থেকে থাকে তাহলে “অজানা ওই সহ-আক্রমণকারীকে’ চিহ্নিত করতে” ফারুকের আইফোন আনলক করা প্রয়োজন হবে, ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি-এর পক্ষ থেকে দাখিলকৃত নথিতে এমনটাই দাবি করা হয়।

অ্যাপল জানিয়েছে, তারা এফবিআই-কে সম্মান করে এবং তারা নিজেদের অধিকারে রেখে এই ডেটা দিতে চায়। কিন্তু বাঁধ সেধেছে অ্যাপল-কে করা শেষ অনুরোধটি, সেখানে ফোন আনলকের জন্য অ্যাপলকে একটি ‘ব্যাকডোর’ তৈরি করে দিতে বলা হয়েছে। এমন কোনো সফটওয়্যারের কোনো অস্তিত্ব নেই বলে জানিয়েছে অ্যাপল।