শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিএসইসির নানামুখী উদ্যোগের পরও বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। বাজার আজ ভাল তো কাল খারাপ। এ অবস্থায় মধ্যে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও একটি স্থিতিশীল বাজার ফিরে পাচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা। তাছাড়া কোনভাবেই পুঁজিবাজারের দরপতন থামছে না। চলতি মাসের শুরু থেকেই পুঁজিবাজার দরপতনের বৃত্তে আটকে আছে।

সপ্তাহে একদিন ভালোতো পরের দু-তিন দিন ক্রমাগত পতন। তেমনি দৈনিক লেনদেনের চিত্র আরো ভয়াবহ। প্রতিনিয়তই পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এমনি অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তাদের অভিযোগ, পুঁজিবাজার রক্ষায় এখন কেউ নেই। যারা আছন, তারা নিজেদের আখের গোছানোরি কাজেই ব্যস্ত।

এছাড়া নির্বাচনী মুহুর্তে নানা গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে একটি চক্র। তারা সরকারের অর্জনকে স্লান করতে চাচ্ছে। ফলে পুঁজিবাজারে ভবিষ্যত নিয়ে দু:চিন্তিত হয়ে পড়ছে বিনিয়োগকারীরা।

তবে পুঁজিবাজার বাজারে টাকার প্রবাহ বাড়ানোর বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ভালো কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা, বিদেশি যেসব কোম্পানি দেশে ভালো ব্যবসা করছে তাদের মূলধনের একটি অংশ বাজারে ছাড়া, শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানো, তাদের মূলধনের জোগান বাড়াতে তহবিলের উৎস বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তাতেও কোন কাজে আসছে না পুঁজিবাজার। তেমনি পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রাষ্টায়াত্ব বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) জন্য ২ হাজার কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন করেছে। গত বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি) থেকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। উক্ত বন্ডে করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিনিয়োগ পুঁজিবাজার এক্সপোজারে অন্তর্ভুক্তি থেকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাজার বিশ্লেষকরা বলেছেন, পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে হলে তারল্য প্রয়োজন। তারল্য সংকট দুর করতে হবে। বর্তমান বাজারে তারল্য সংকট বিরাজ করছে। পুঁজিবাজারে আইসিবির ২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করলে কিছুটা হলে তারল্য সংকট দুর হবে। এছাড়া বর্তমান উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজার উপকৃত হবে। এর সঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যরা চীনা কনসোর্টিয়াম থেকে পাওয়া অর্থও পুঁজিবাজারে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনিয়োগ করলে বাজার আরো স্থিতিশীল হবে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।

একাধিক সিকিউরিটিজ হাউজের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, কিছুদিন আগেও ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে বিনিয়োগকারীদের সরব উপস্থিতি ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নির্বাচনী ইস্যুতে পুরাতন বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি নতুনদেরও বাজারের প্রতি আগ্রহে কিছুটা ভাটা পড়েছে। ফলে আজ ব্রোকারেজ হাউজগুলোয় বিনিয়োগকারীদের আনাগোনা অনেকটা কম ছিল। যারাও বা এসেছিল তাদের সবার চোঁখ ছিল দরপতনের ধূ ধূ।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী বলেছেন, পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনে নি:স্ব হয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। ফান্ডামেন্টাল, অ্যানালাইসিস, বিনিয়োগ শিক্ষা কোনো কাজে আসছে না। সামগ্রিক পুঁজিবাজার ভালো না থাকলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বাজারকে গতিশীল করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সুদৃষ্টি কামনা করলেও তারা বাজারের স্বার্থে কাজ করছে না। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে নয় বরং কতিপয় মহলকে বিশেষ সুবিধা দিতে বিএসইসি কাজ করছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, ২০১০-২০১১ সালে ধসে যেমন আমরা আন্দোলন করে বিএসইসি পুন:গঠন করিয়েছি। তেমনি আবারো বর্তমান বিএসইসিকে পুন:গঠনের দাবি জানাচ্ছি। এখানে দক্ষ ও বাজার বান্ধব লোকবল দরকার। পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করতে অনতিবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে সরকারের আহবান জানিয়েছেন ঐক্য পরিষদের সভাপতি।

আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হক দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা রাখতে নগদ অর্থের প্রবাহ দরকার। তারল্য সংকট কাটাতে বন্ড ইস্যুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আশা করি বন্ডের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের বেশির ভাগ অর্থই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হবে। এর প্রভাব অবশ্যই পুঁজিবাজারে পড়বে। এ জন্য বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য্য ধারন করতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিশ্চিত অর্থমন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, পুঁজিবাজার ইস্যুতে সরকার উদ্বিগ্ন। সরকারের শেষ সময় যে কোন মুল্যে পুঁজিবাজার চাঙ্গা রাখতে চায়। এই জন্য দুই মন্ত্রীতে পুঁজিবাজারের দেখা শেনার দায়িত্ব দিয়েছেন। সম্প্রতি পুঁজিবাজারে টানা দরপতন ঘটায় তারা এ বিষয় উদ্বিগ্ন অবস্থায় রয়েছেন। তেমনি বিএসইসি’কে চাপে রাখছেন পুঁজিবাজারকে যে কোন মুল্যে স্থিতিশীল রাখতে হবে।