দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের একের পর এক গুজবে ভর করে বাজারের সুষ্ঠু পরিবেশ একটি চক্র নষ্ট করছে। এরা কারা এ প্রশ্ন খোদ বিনিয়োগকারীদের। আর পুঁজিবাজারের ইতিহাসে গুজব নতুন কিছু নয়। কিন্তু এবারের গুজব ও হুজুগ সবমাত্রাকেই ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু এবারের বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। যাই ক্ষতির শিকার হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারী।

আগামী অর্থবছরের জন্য ঘোষণা করতে যাওয়া মুদ্রানীতি ও বাংলাদেশ কমার্র্স ব্যাংক সিকিউরিটিজের হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড অপারেশনের পদত্যাগের গুজবকে কেন্দ্র করে বাজারে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দেয়। বিশেষ করে গত কিছুদিন ধরে আলোচনায় থাকা শেয়ারগুলো এক পর্যায়ে ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বাজারে এক শ্রেণীর চতুর বিনিয়োগকারী আগেও গুজব ছড়িয়ে শেয়ার হাতিয়ে নিয়েছে অভিযোগ রয়েছে। আতঙ্কে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করলেও তারা অল্প দামে শেয়ার কিনে থাকেন। তাছাড়া পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার আভাসে নতুন করে বিনিয়োগ আসছে। পাশাপাশি আসছে বড় বিনিয়োগ।

আর এ বড় বিনিয়োগে নাম লেখাচ্ছেন বিএনপি ও জামায়াত পন্থী বড় ব্যবসায়ীরা। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের নামে বড় বিনিয়োগ নিয়ে সক্রিয় এখন তারা। কয়েকজন বিএনপি ও জামায়ানাত পন্থী বড় ব্যবসায়ী রীতিমতো গ্যাম্বলারের ভুমিকায় নেমেছেন। তারা পুঁজিবাজারকে নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। যে কোন মুল্যে পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করতে হবে।

তারা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে পুঁজিবাজার থেকে রাতারাতি টাকা আয় করার মিশনে নেমেছেন। স্বল্প সময়ে বাজার থেকে মুনাফা তুলে নিতে তারা বাজারে সক্রিয় হয়েছেন বলে জানা গেছে। একাধিক সিকিউরিটিজ হাউজের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।ঐ চক্রটি ঘাপটি মেরে থেকে একের পর এক গুজব বাজারে ছড়াচ্ছে।

বর্তমান বাজারে নতুন গুজব কর্মাস ব্যাংক সিকিউরিটিজের এভিপি সাইফুল ইসলামের পদত্যাগ। সাইফুল ইসলামকে টার্গেট করে তারা নতুন মিশনে নেমেছেন। অস্থির পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীলতার স্বার্থে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেড। গত কিছুদিন ধরেই লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছিল কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজ।

বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের তালিকায়ও ছিল ব্রোকারেজ হাউসটি। এই হাউসের বিনিয়োগকারীরাও অন্যদের তুলনায় বেশ ভাল মুনাফা করেছে বলে তারা জানান। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ডিএসইর তালিকাভুক্ত আরও কিছু প্রভাবশালী হাউস বিশেষ করে শীর্ষস্থানীয় একাধিক মার্চেন্ট ব্যাংকের ক্ষোভের শিকার হয় হাউসটি। এছাড়া এক শ্রেণীর চতুর বিনিয়োগকারীও হাউসটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে আসছেন বিভিন্ন মহলে।

বুধবার ও বৃহস্পতিবার ডিএসইর বিভিন্ন হাউসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিনিয়োগকারীদের মুখে মুখে ছিল কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজের হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড অপারেশন সাইফুল ইসলাম স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সঙ্গে মতবিরোধের জেনে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে নিয়েছেন।

মূলত বাজারে এই নেতিবাচক প্রচার চালানোর কারণেই বেশ কিছু কোম্পানির ক্রেতা সঙ্কট দেখা দেয়। যদিও কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজ কর্তৃপক্ষ তার পদত্যাগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। শুধু তাই নয় সাইফুল ইসলাম নিজেও পদত্যাগের বিষয়টি উড়িয়ে দেন। তিনি জানান, অন্যদিনের মতো বুধ ও বৃহস্পতিবার তিনি নিয়মিত বিনিয়োগকারীদের জন্য শেয়ার কেনাবেচা করেছেন। নিজেদের মধ্যে কোন ভুল বোঝাবুঝি নেই।

বর্তমানে একটা চক্র গুজব ছড়াচ্ছে, বাংলাদেশ কর্মাস ব্যাংক সিকিউরিটিজের অন্যতম শীর্ষ পোর্টফলিও ম্যানেজার সাইফুল ইসলামকে ছাটাই করা হয়েছে বা পদত্যাগ করানো হয়েছে। কিন্তু ঘটনা সম্পূর্ন বিপরীত।

চলতি মাসে প্রিমিয়ার ব্যাংক সিকিউরিটিজের এক কর্মকর্তাকে ডিএসই সাসপেন্ড করে। পুঁজিবাজারে কারসাজির অভিযোগে ১৪ দিনের যা ১০ কর্মদিবসের জন্য ট্রেডিং এক্টিভিটিস থেকে বিরত থাকার জন্য জন্য ডিএসই থেকে প্রিমিয়ার ব্যাংক সিকিউরিটিজের কর্মকর্তা আকরাম হোসেনকে নির্দেশ দেয়।

সুত্র জানায়, একই সময়ে একই ব্যাক্তির বিও একাউন্টে একই কোম্পানির সমপরিমান শেয়ার ক্রয় এবং বিক্রয় করার কারনে অটো সেল বাই করার অভিযোগে এই সাসপেন্ড করা হয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ( ট্রেডিং রাইট এন্টাইটেলম্যান্ট সার্টিফিকেট) রেজ্যুলেশনস ২০১৩ আইনের ১৪ এর ২ ধারা অনুযায়ী আকরাম হোসেনের বিরুদ্বে এই ব্যাবস্থা নেয় ডিএসই । এর পুর্বে একই ভুল করার জন্য ডিএসই থেকে তাকে সতর্ক করা হয়েছিল। তাই তার বিরুদ্বে এমন শাস্তিমুলক ব্যাবস্থা নেয় ডিএসই কতৃপক্ষ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে আকরাম হোসেন দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, ভুলবসত একই গ্রাহকের বিও একাউন্টে একই কোম্পানির সমপরিমান শেয়ার একই দরে ক্রয় এবং বিক্রয় হয়ে গেছে। ফলে ডিএসই থেকে এটাকে ননকমপ্লায়েন্স হিসেবে বিবেচনা করেছে। আমাকে শুনানীর জন্য ডিএসই ডেকেছে এবং আমি আমার ব্যাখ্যা দিয়েছি। হয়তো ডিএসই আমার ব্যাখ্যায় সন্তুস্ট হয়নি তাই আমাকে ১৪ দিনের জন্য ট্রেডিং থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে।যা চলতি মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত কার্যকর হয়।

তিনি বলেন, মানুষ মাত্রই ভুল করে, আর তাই অনিচ্ছাকৃতভাবেই আমার ভুলটা হয়েছে। যেখানে শেয়ার সংখ্যাও অনেক কম ছিল। এক কোম্পানির শেয়ার ছিল ৮শত আরেকটার ছিল দেড়শত এর মত। আর পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ ঘুরে দেখা যায় এই গুজবকে কাজে লাগিয়েই এক শ্রেনীর মানুষ গুজব ছড়াচ্ছে আলোচিত পোর্টফলিও ম্যানেজার সাইফুল ইসলামকে নিয়ে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষ স্থানীয় একাধিক মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, গত কিছুদিন ধরে টানা পতন থাকলেও কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারীরা অন্যদের তুলনায় ভাল করেছেন। এতে বাজারের অন্যপক্ষ খুব ভাল চোখে দেখেনি।

এছাড়া যখন সরকার বাজারকে একটি স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন, সেখানে এক শ্রেণীর বড় বিনিয়োগকারী বাজারকে অস্থিতিশীল করতে কখনও মুদ্রানীতির নামে আবার কখনও কোন ব্রোকারেজ হাউস সম্পর্কে নেতিবাচক গুজব ছড়িয়ে ফায়দা হাসিল করতে চাচ্ছেন।

গুজবের প্রসঙ্গে সাইফুল ইসলাম দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, এই ধরনের গুজবের কোন ভিত্তি নেই, এটা সম্পুর্ন ভিত্তিহীন। সরকারকে চাপে ফেলার জন্য এবং পুঁজিবাজারের পরিবেশ নস্ট করার জন্য একশ্রেনীর মানুষ এ গুজব ছড়াচ্ছে। আমাকে কেন সাসপেন্ড করা হবে? আমার বিরুদ্বে তো কোন অভিযোগ নেই।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মন্দা পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীলতার স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছি। এটা যদি আমার অপরাধ হয় তা হলে আর কি বলব। বর্তমান সরকার পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমরা ও সাধ্যমত চেষ্টা করছি। বাজারে একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হতে না হতে একটি চক্র ঘাপটি মেরে থাকা নানা গুজব ছড়াচ্ছে।