শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেডের শেয়ারের দর কোন কারন ছাড়াই টানা বাড়ছে। ফলে এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ তুলছেন বিনিয়োগকারীরা। সম্প্রতি বাজারে নানামুখী গুজব ছড়িয়ে পড়েছে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সকে ঘিরে।

আর গুজবের উপর ভর করে শেয়ারের দর টানা বাড়ছে। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, টানা দর বৃদ্ধির পরও কোম্পানিটির উপর কোন নজরধারী নেই নিয়ন্ত্রক সংস্থার। এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ন্ত্রন কাদের হাতে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আর্থিক খাতের লংকাবাংলা ফাইন্যান্স শেয়ার নিয়ে ভিত্তিহীন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ফেসবুকে ছড়ানো হচ্ছে। এসব খবরের উপর ভিত্তি করে কোম্পানিটির শেয়ারদর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। যদিও কোম্পানি কর্তৃপক্ষের দাবী, যে খবর ফেসবুকে ছড়ানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ গুজব। সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স রাইট ইস্যু করবে।

এদিকে টানা শেয়ারের দর বাড়ার বিষয় ডিএসই এবং সিএসই’র চিঠির জবাবে দর বাড়ার কোন কারন নেই বলে  জানিয়েছেন খোদ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ অস্বাভাবিক হারে শেয়ারদর বাড়লেও তার কোন কারণ জানে না লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ৬১ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ২৯.৭০ টাকা, যা শতকরা হিসেবে প্রায় ১০৯ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি; যা অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ নভেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ২৭ টাকা ৩০ পয়সা। সর্বশেষ কার্যদিবসে (বৃহস্পতিবার) যার সমাপনী দর ছিল ৫৭ টাকা। সে হিসেবে, ৬১ কার্যদিবসে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে প্রায় ১০৯ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার ডিএসইতে দর বাড়ার শীর্ষে ছিল লংকাবাংলা ফাইন্যান্স। এদিন শেয়ারটির দর চার টাকা ১০ পয়সা বা সাত দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়েছে। শেয়ারটি সর্বশেষ ৫৭ টাকা ২০ পয়সা দরে লেনদেন হয়। এদিন কোম্পানিটি চার হাজার ৭৩১ বারে এক কোটি তিন লাখ ৭২ হাজার ৪০৭টি শেয়ার লেনদেন করে। যার বাজার দর ছিল ৫৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

জানতে চাইলে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স কোম্পানি সচিব মোস্তফা কামাল বলেন, ‘কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়ার পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। কে বা কারা বাড়াচ্ছে, তা-ও আমাদের জানা নেই। আমি এর বেশি কিছু বলতে রাজি না।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লংঙ্কাবাংলা ফিন্যান্সের এক কর্মকর্তা দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, আমার দৃষ্টিতে শেয়ারের দর বাড়ার বা কমার কোন কারন আমাদের জানা নেই। তবে কিজন্য বাড়ছে তা আমরা বুঝি না। ফেসবুকে আমাদের কোম্পানি সম্পর্কে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। গুজব হিসেবে যেসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে এর সাথে কোম্পানির কোন সম্পর্ক নেই। আমরা বিষয়টি বিএসইসি, ডিএসই এবং সিএসই-কে জানিয়েছি। তবে কারা এ গুজব ছড়াচ্ছে তা আমরা ধরতে পারি নাই।

এদিকে ২০১৬ সালের অক্টোবরে লংকাবাংলা ফিন্যান্সের পরিচালনা পর্ষদ রাইট শেয়ার ও সেকেন্ড নন-কনভারটেবল জিরো কুপন বন্ড ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নেয়। কোম্পানিটি ২:১ অনুপাতে অর্থাৎ দুটি সাধারণ শেয়ারের বিপরীতে একটি রাইট ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিটি রাইট শেয়ারের মূল্য ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। লংকাবাংলা ফিন্যান্স বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদনসাপেক্ষে রাইট শেয়ার ও বন্ড ইস্যু করতে পারবে।

‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৬ সালে। লংকাবাংলা ফিন্যান্সের মোট শেয়ারের ৩৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে যথাক্রমে ৩১ দশমিক ৮১ ও তিন দশমিক ৭৬ শতাংশ। বাকি ২৯ দশমিক ৬০ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, পুঁজিবাজারে ইদানিং হরহামেশা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। বিভিন্ন মাধ্যমে এ কোম্পানিটির শেয়ার নিয়েও গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। আর কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলেছে, এসব গুজব ভিত্তিহীন। পরিস্থিতি বিবেচনায় বোঝা যাচ্ছে শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে। এ অবস্থায় সাধারন বিনিয়োগকারীর স্বার্থে কোম্পানির লেনদেন নজরদারীতে রাখা উচিত।

পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারি তদন্ত কমিটির প্রধান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি হযবরল অবস্থা। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিকে পুঁজিবাজার বলা যায় না। এটা একটা খেলার বাজার হয়ে গেছে। আমি মনে করি, এখন যেসব শেয়ারের দর অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে, তা কোম্পানির নিজেদের লোকেরাই করছেন। তারা নিজেরাই লেনদেন করে শেয়ারের দর বাড়াচ্ছেন। আর দর বাড়িয়ে একসময় তারা এই শেয়ারগুলো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে চলে যাবেন। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত এর দায়ভার নিতে হবে সাধারণ বিনিয়োগকরীদের। বিষয়টি বিনিয়োগকারীদেরই বোঝা উচিত।

এ প্রসঙ্গে আরিফ হোসেন নামে একজন বিনিয়োগকারী বলেন, তালিকাভুক্তির পর থেকেই এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে নানা ধরনের গুজব শুনে আসছি। কোনো কারণ ছাড়াই বেশ কিছু দিন ধরে এ কোম্পানির শেয়ারের দর অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে বিষয়টি সন্দেহজনক।

অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, যারা বেশি দামে শেয়ার কেনেন, আমার মতে তারা বিনিয়োগকারী নন। তারা হচ্ছেন ডে ট্রেডার। এরা বেশি দামে শেয়ার কিনে আরও বেশি দামে বিক্রির মনোভাব পোষণ করেন। কিন্তু এর ফল শুভ হয় না।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এদের চরম মূল্য দিতে হয়। কারণ শেয়ারের দাম যতই বাড়–ক না কেন, একটা সময়ে দাম আবার নি¤œমুখী হতে শুরু করে। ফলে বেশি দামের শেয়ার সর্বশেষ যার কাছে থাকে, তাকেই ভোগান্তি পোহাতে হয়। তিনি বলেন, যারা প্রকৃত বিনিয়োগকারী, তারা সবসময় তুলনামূলক কম দামে শেয়ার কিনতে চান। আর এটাই হওয়া উচিত।