dse lago curentশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দীর্ঘ চার বছর অতিবাহিত হলেও ধরে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ডিএসই’র সংস্কার প্রস্তাব। ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনা শেষে একগুচ্ছ চূড়ান্ত প্রস্তাবনা তৈরি করে ডিএসই কর্তৃপক্ষ অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দিয়েছে। প্রস্তাবনা জমা দেয়ার এক দুই বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়নে জোর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

তবে সম্প্রতি পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোম্পানির মূলধন উত্তোলন কিংবা মূলধন বাড়ানোর বিষয়ে নীতিমালা জারি করেছে। অথচ বাজারের উন্নয়নের স্বার্থে এসব সুপারিশগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরী বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, সংস্কার প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে। এতে করে পুঁজিবাজারে  লেনদেনের স্বাভাবিক গতি ফিরে আসবে। যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বাজারমুখী করে তুলবে। তাই এ প্রস্তাবগুলো যত দ্রুত সম্ভব চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ার পরামর্শ দেন তারা।

জানা গেছে, এর আগে ওই একই বছরের ১১ অক্টোবর ডিএসই তাদের প্রস্তাবগুলো বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে জমা দেয়। এর পর একই বছরের নভেম্বর মাসের ৭ তারিখে এ বিষয়ে ডিএসই’র সঙ্গে বিএসইসি’র বৈঠক হলেও তা ফলপ্রসু হয় নি। পরবর্তীতে ১৮ নভেম্বর ডিএসই’র তৎকালীন সভাপতি রকিবুর রহমান অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলমের হাতে এসব সংস্কার প্রস্তাব জমা দেয়।

ডিএসইর সংস্কার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- তালিকাভুক্ত কোম্পানির নতুন ক্যাটাগরি শ্রেনীবিভাগ, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অর্থের ব্যবহার, উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার বিক্রয়ের নীতিমালা, প্রিমিয়াম সংক্রান্ত নীতিমালা, প্রাইভেট প্লেসমেন্ট নীতিমালা এবং রাইট শেয়ার সংক্রান্ত নীতিমালা। এ প্রস্তাবে উদ্যোক্তা পরিচালকদের পাবলিক মার্কেটে শেয়ার লেনদেন বন্ধ করে ব্লক মার্কেটে লেনদেনের সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, আইপিওর মাধ্যমে টাকা তোলার সময় কোম্পানিকে নিশ্চয়তা দিতে হবে পরবর্তী ৩ বছরে তালিকাভুক্তির বছরের তুলনায় বেশি লাভ করবে। প্রিমিয়াম নিয়ে কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে চাইলে কোম্পানিকে নিশ্চয়তা দিতে হবে ৬ মাসের মধ্যে শেয়ারের দর ২০ শতাংশের নিচে নামবে না। যদি শেয়ারের দর ২০ শতাংশের নিচে নামে তবে কোম্পানিকে যে কোনো উপায়ে তা কিনে নিতে হবে।

একইভাবে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্যাটাগরি ‘পি’তে  স্থান পেতে কোম্পানিকে চারটি শর্তপূরণ করতে হবে। শর্তগুলো হলো- ৩০ শতাংশের ওপরে ডিভিডেন্ড দিতে হবে, এনএভিতে নিট গ্রোথ থাকতে হবে, বিএসইসির কর্পোরেট গভর্নেন্স গাইডলাইন পুরোপুরি মেনে চলতে হবে এবং আর্থিক প্রতিবেদন আইএএস ও আইএফআরএস অথবা বিএএস ও বিএফআরএসের সব নীতি মেনে তৈরি করতে হবে।

অবশ্য ইতিমধ্যে কর্পোরেট গভর্নেন্স গাইডলাইনের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া বিএইসি’র পক্ষ থেকে আর্থিক প্রতিবেদন আইএএস ও আইএফআরএস অথবা বিএএস ও বিএফআরএসের সব নীতি মেনে তৈরি করারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

রাইট শেয়ারের বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাবে করা প্রস্তাবনাগুলো হচ্ছে, শুধু ইজিএম করেই রাইটের জন্য বিএসইসির কাছে অনুমোদনের জন্য আবেদন করা যাবে না। আবেদন করতে হলে আগে রাইটের জন্য যে শর্ত রয়েছে তা পূরণ করতে হবে।

সাধারণ বিনিয়োকারীরা রাইট শেয়ারের জন্য আবেদন করে ভোগান্তিতে না পড়ে সেজন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে চাঁদা চাওয়ার আগেই কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের রাইটের জন্য টাকা বিএসইসিতে জমা দিতে হবে।

জানা গেছে, ইতিমধ্যে বিএসইসি কোম্পানিগুলোর মূলধন উত্তোলনে শর্তারোপ করেছে। যেখানে আইপিওর অর্থে এক-তৃতীয়াংশের ঋণ পরিশোধে ব্যয় করতে পারবে না; তালিকাভুক্তির তিন বছরের মধ্যে রাইট ইস্যু করতে পারবে না।

এছাড়া কোন কোম্পানি বা এর উদ্যোক্তা, পরিচালক, কর্মকর্তা-কর্মচারি বা নিযুক্ত এজেন্ট কোন ব্যক্তি, অন্য কোন বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারের কাছ থেকে বিএসইসির অনুমোদনের পূর্বে শেয়ারে ধারনের জন্য অর্থ নিতে পারবে না।

তবে বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডরদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে এ অনুমোদন লাগবে না। এর ফলে এখন থেকে কোন কোম্পানি বা এর উদ্যোক্তা পরিচালক বা ইস্যু ম্যানেজার চাইলেই শেয়ার অ্যালোটমেন্ট, আইপিও কিংবা রাইট ইস্যু করতে পারবে না।

বিশ্লেষকদের মতে, পুঁজিবাজার উন্নয়নে অনেক পদক্ষেপ নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয় খুবই ধীরগতিতে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে তার বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায় না। এ বাজারের জন্য যে কোনো ইতিবাচক পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন হলে তা বিনিয়োগকারীদের জন্য মঙ্গলজনক। এর ধারাবাহিকতায় ডিএসই’র সুপারিশগুলোর অনুমোদন দেয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।