BANK LAGOআমীনুল ইসলাম, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আইনি সীমায় নামিয়ে এনেছে ১৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মূলধন বৃদ্ধির মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেয়ারবাজারের অতিরিক্ত বিনিয়োগ আইনি সীমায় নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এতে আইনি সীমার মধ্যে থেকেই শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর নতুন করে বিনিয়োগের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে।

সব মিলিয়ে ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে আরো সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে। আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। এতে ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে নতুন করে আরো ১৫শ কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী।

সুর চৌধুরী বলেন, ‘সাবসিডিয়ারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ব্যাংকগুলোর ১ হাজার ৯৮৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা ঋণ ছিল। ওই টাকার পুরোটাই এখন মূলধন হিসেবে যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ১ হাজার ২শ ৯৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার, ৪১ কোটি ৯২ লাখ টাকার মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও ২২০/২২৫ কোটি টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ারও মূলধনে রুপান্তরিত হয়েছে। ফলে সাবসিডিয়ারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মূলধনের পরিমান দাড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৪০ কোটি টাকায়।’

তিনি বলেন, ‘শুধু ১৩টি ব্যাংকই নয়, বর্তমানে তালিকাভূক্ত সকল ব্যাংকের ক্ষেত্রে মোট ৪ হাজার ৫শ কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এক্সপোজার আইনী সীমার মধ্যে আসার ফলে ব্যাংকগুলো যে টাকাটা ঋণ হিসেবে তাদের সাবসিডিয়ারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছিল তারা লস করতে পারতো, ক্লাসিফাইড (খেলাপি) হতে পারতো, প্রভিশন রাখা লাগতো।

এখন আর সেই ঝুঁকিগুলো থাকলো না। কারণ ব্যাংকগুলো তাদের সাবসিডিয়ারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে যে ঋণ প্রদান করেছিল তা এখন মূলধনে রূপান্তর করা হয়েছে। এর ফলে ঐসব প্রতিষ্ঠানের সুদ দেওয়ার বিষয়টাও আর নেই। আর মূলধন বৃদ্ধি পেলে তো প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে দীর্ঘমেয়াদে সুফল পাওয়া যাবে।’

সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ওই ব্যাংকের আদায়কৃত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, বিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন আর্নিংসের ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। ১৩ টি ব্যাংকের এ সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ ছিল।

সমন্বয় করার পর ব্যাংকগুলোর বর্তমানে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের পরিমান দাড়িয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ২৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ, পূবালীর ২০ দশমিক ১৫, এবি ব্যাংকের ২১ দশমিক ৯৯, মিউচ্যুয়াল ট্রাষ্টের ২৩ দশমিক ৬৯, ওয়ান ব্যাংকের ২৩ দশমিক ৯৯, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২২ দশমিক ৩৯, দ্য সিটি ব্যাংকের ১৪ দশমিক ৬৬, সাউথইষ্ট ব্যাংকের ১১ দশমিক ৯, ন্যাশনাল ব্যাংকের ২১ দশমিক ৩, শাহজালাল ব্যাংকের ২৩ দশমিক ৫৫, আইএফআইসি ব্যাংকের ১৯ দশমিক ৩, জনতা ব্যাংকের ২৩ দশমিক ৮১ এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ২১ দশমিক ৭১ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, অতিরিক্ত সমন্বয় করার পর ব্যাংকগুলোর বর্তমানে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ২৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ, পূবালীর ২০ দশমিক ১৫, এবি ব্যাংকের ২১ দশমিক ৯৯, মিউচুয়াল ট্রাস্টের ২৩ দশমিক ৬৯, ওয়ান ব্যাংকের ২৩ দশমিক ৯৯,

প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২২ দশমিক ৩৯, দ্য সিটি ব্যাংকের ১৪ দশমিক ৬৬, সাউথইস্ট ব্যাংকের ১১ দশমিক ৯, ন্যাশনাল ব্যাংকের ২১ দশমিক ৩, শাহজালাল ব্যাংকের ২৩ দশমিক ৫৫, আইএফআইসি ব্যাংকের ১৯ দশমিক ৩, জনতা ব্যাংকের ২৩ দশমিক ৮১ এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ২১ দশমিক ৭১ শতাংশ।

অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় করতে গিয়ে এই ১৩ ব্যাংকের বিনিয়োগ শুধু ২৫ শতাংশের নিচে নেমে আসেনি, বরং তাদের আইনি সীমার মধ্যে থেকেই অতিরিক্ত দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘আমরা ১৩টি ব্যাংককে যে আইনি সীমার মধ্যে তাদের বিনিয়োগ সীমা নামিয়ে আনার সুযোগ দিয়েছি, তারা নির্ধারিত সময়েই এটি করেছে। এর ফলে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে আরো বাড়তি ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে। পুঁজিবাজারের এই মন্দা সময়ে এটি একটি ভালো খবর। এতে বিনিয়োগকারীরা আরো উত্সাহিত হবে।’

তিনি আরো জানান, শুধু ১৩টি ব্যাংকই নয়, বর্তমানে তালিকাভুক্ত সব ব্যাংকের ক্ষেত্রে মোট ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে বাড়তি বিনিয়োগের এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবে কিনা, তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়। এক্ষেত্রে আইনি কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, চলতি বছরের ২১ জুলাইয়ের মধ্যে শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। ২০১৩ সালে কার্যকর হওয়া এ আইনে ব্যাংকগুলোর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সীমা পুনর্র্নিধারণ করা হয়।

আইন সংশোধনের আগে ব্যাংকগুলো দায়ের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারত। সেটি সংশোধন করে ইকুইটির সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়া হয়। শেয়ারবাজারের বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আমানতকারীদের স্বার্থ ও ব্যাংকের আর্থিক ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে এ সংশোধনী আনা হয় বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এক্সপোজার আইনি সীমার মধ্যে আসার ফলে ব্যাংকগুলো যে টাকাটা ঋণ হিসেবে তাদের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছিল, এতে তাদের লোকসান হতে পারত। কারণ এ ঋণ ক্লাসিফাইড (খেলাপি) হতে পারত। এতে সঞ্চিতি রাখার প্রয়োজন দেখা দিত।

এখন আর সেই ঝুঁকিগুলো থাকল না। কারণ ব্যাংকগুলো তাদের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে যে ঋণ প্রদান করেছিল, তা এখন মূলধনে রূপান্তর করা হয়েছে। এর ফলে ওইসব প্রতিষ্ঠানের সুদ দেয়ার বিষয়টাও আর নেই। আর মূলধন বৃদ্ধি পাওয়ায় সাবসিডিয়ারিগুলোর ভিত শক্তিশালী হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে দীর্ঘমেয়াদে সুফল পাওয়া যাবে।

সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ব্যাংকগুলোর ১ হাজার ৯৮৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা ঋণ ছিল জানিয়ে সুর চৌধুরী বলেন, এ টাকাটা এখন পুরোটাই মূলধন হিসেবে যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ১ হাজার ২৯৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার, ৪১ কোটি ৯২ লাখ টাকার মিউচুয়াল ফান্ড ও ২২০ থেকে ২২৫  কোটি টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ারও মূলধনে রূপান্তর হয়েছে। ফলে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মূলধনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৪০ কোটি টাকায়।