৭৮২ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে একমি
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সদ্য তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড ৭৮২ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে হাঁটছে। প্রথম দিনের লেনদেনে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ২১তম বড় কোম্পানি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড।
গত মঙ্গলবার দিনের লেনদেন শেষে কোম্পানিটির বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। ডিএসইর শীর্ষ মূলধনি কোম্পানি হচ্ছে গ্রামীণফোন। এ কোম্পানির বাজার মূলধন ৩৪ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। এদিকে কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে- বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির মোট ঋণের পরিমাণ ৭৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্বল্প ৩১০ কোটি টাকা এবং দীর্ঘমেয়াদি ৪৭২ কোটি টাকা ঋণ।
মঙ্গলবার ডিএসইতে ১২৪ টাকা দরে প্রতিষ্ঠানটির লেনদেন শুরু হয়। এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১৩৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। তবে দিন শেষে তা ১১৯ টাকায় নেমে আসে। বুধবার কোম্পানির সর্বশেষ লেনদেন হয় ১১২ টাকায় ।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন ২১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। তবে নিয়ম অনুসারে প্রথম একমাস কোম্পানি মার্জিন ঋণ সুবিধা পাবে না। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে নিয়ন্ত্রকসংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিএসইসির ৫৬৭তম সভায় কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেয়া হয়। বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে কোম্পানির শেয়ারটির দর নির্ধারিত হয় ৭৭ টাকা। এক্ষেত্রে ১০ টাকার শেয়ারে আরও ৬৭ টাকা প্রিমিয়াম পেয়েছে কোম্পানিটি। ওষুধ খাতের এ কোম্পানিটি ৫ কোটি টাকা শেয়ার ছেড়ে ৫০ কোটি টাকা নিয়েছে। তবে প্রিমিয়ামসহ এ টাকার পরিমাণ ৪০৯ কোটি ৬০।
এর মধ্যে ৫০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য, ১০ শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ডের এবং বাকি ৪০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য। এই টাকা দিয়ে কোম্পানিটি ৩টি নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। গত ১৫ মে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে কোম্পানির আইপিও লটারির অনুষ্ঠিত হয়। সব প্রক্রিয়া শেষে মঙ্গলবার লেনদেন শুরু হয়।
কোম্পানিটির বিগত ৫ বছরের নিরীক্ষিত বিবরণী অনুযায়ী, শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৪ টাকা ০৭ পয়সা। আর ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছর অনুযায়ী ইপিএস হয়েছে ৫ টাকা ৭০ পয়সা। কোম্পানির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য বা এনএভি ৭০ টাকা ৩৭ পয়সা। ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট। জানা গেছে- ২০১৩ সালে আইপিওর প্রক্রিয়া শুরু করে একমি ল্যাবরেটরিজ।
কিন্তু ওই সময়ে আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির আইপিরও অনুমোদন না দেয়ার জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়। কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখ করেছিল, একমির চেয়ারম্যান নাসির-উর-রহমান সিনহা আল আরাফা ব্যাংকের শ্যামলী শাখার একটি ঋণের গ্যারান্টার।
ওই সময়ে ঋণটি খেলাপি হয়ে যায়। মেসার্স সিনহা ইন্টিগ্রেটেড বিজনেস সার্ভিসেসের নামে নেয়া ওই ঋণের পরিমাণ ছিল ২৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর নাসির-উর-রহমান সিনহা একমি ল্যাবরেটরিজের কোম্পানির ১ কোটি ৩৪ লাখ শেয়ারের মালিক। যা মোট শেয়ারের ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এরপর কোম্পানির বাজারে আসা নিয়ে একটু জটিলতা তৈরি হয়। তবে শেষ জটিলতার নিরসন হলে ২০১৬ সালে বাজারে প্রতিষ্ঠানটি।
গত মঙ্গলবার লেনদেন শুরুর দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) মিলে ১৬২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৪০ কোটি টাকা এবং সিএসইতে ২২ কোটি টাকা। ডিএসইতে মোট লেনদেনের প্রায় ৩০ শতাংশই ছিল একমির। তবে শুরুর দিনে শেয়ারটি ১৩৫ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরে ওষুধ কোম্পানিটিকে বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় মোট পাঁচ কোটি শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ৪০৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা মূলধন উত্তোলনের অনুমোদন দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। প্রথমে ৫০ শতাংশ শেয়ারের জন্য ৮৫ টাকা ২০ পয়সা দর (কাট-অফ প্রাইস) প্রস্তাব করেন যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। একই দরে মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য বরাদ্দ হয় ১০ শতাংশ বা ৫০ লাখ শেয়ার।
বাকি ৪০ শতাংশ বা দুই কোটি শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৭৭ টাকায় বিক্রির অনুমোদন দেয় বিএসইসি। চাঁদাগ্রহণের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর সম্প্রতি কোম্পানিটি জানায়, সব ক্যাটাগরি মিলিয়ে তাদের চাহিদার ৬ দশমিক ৭১ গুণ আবেদন জমা পড়েছে।
খসড়া প্রসপেক্টাস অনুসারে, শেয়ারবাজার থেকে সংগৃহীত অর্থে তিনটি নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং আইপিও প্রক্রিয়ার ব্যয় নির্বাহ করবে একমি ল্যাবরেটরিজ। ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। আর রেজিস্ট্রার টু দ্য ইস্যু হিসেবে রয়েছে প্রাইম ফিন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।
১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত একমি ল্যাবরেটরিজ ফার্মাসিউটিক্যাল, হার্বাল, আয়ুর্বেদিক ও ভেটেনারিসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির পাঁচ শতাধিক ওষুধ উত্পাদন করে। ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (আইএসও) সনদ পাওয়া একমি ল্যাবরেটরিজের পণ্য অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রির পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্য আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও রফতানি হয়।