spd budgutশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজার ও ব্যাংক খাত নাজুক অবস্থায় আছে বলে মনে করছে বেসকারি গবেষণা সংগঠন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারের জন্য বাজেটে রাখা বিশেষ তহবিলের ব্যবহার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য। আজ শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘জাতীয় বাজেট ২০১৬-১৭: সিপিডির পর্যালোচনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে না। নাজুক অবস্থায় আছে এ খাতটি। ফলে এখানে বিনিয়োগ নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে।  এ খাত থেকে মুনাফা পেতে হলে ব্যাপক আইনি সংস্কার করতে হবে। যদি এটি করা যায়; তাহলে এ খাত থেকে মুনাফা পাওয়া সম্ভব।

বাজেট বাস্তবায়ন বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, ‌‘আপানার যদি একটা লক্ষ্য থাকে, তাহলে একটা তীর চালাতে হবে। সেই তীরের জন্য একটা ধনুক লাগবে। এই ধনুকটা হলো আয়, তীরটা হলো ব্যয়। আমরা সেই তীর এবং ধনুকের লক্ষ্য ভেদ করার সম্ভবনা দেখছি না। অর্থাৎ বর্তমান বাজেট কাঠামোর মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়।’

‌আমি একটা অস্বস্তিমূলক স্বস্তির মধ্যে আছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাজেটে বিনিয়োগের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সেটা বাস্তবায়নে ব্যক্তিখাতে বাড়তি ৮০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এই টাকা কোথা থেকে আসবে, ব্যাংক থেকে না পুঁজিবাজার থেকে এই বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য নেই।’

২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন ব্যয়ের চেয়ে অনুন্নয়ন ব্যয় তুলনামূলক অনেক বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাধারণত বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয়ের চেয়ে উন্নয়ন ব্যয় বাড়নো দরকার। কিন্তু আমাদের বাজেটে উন্নয়ন ব্যয়ের চেয়ে অনুন্নয়ন ব্যয় তুলনামূলক অনেক বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও এটি লক্ষ্য করা গেছে।’

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি, বিভিন্ন খাতে ভূর্তকি প্রদান, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের অর্থ বরাদ্দসহ বিভিন্ন কারণে অনুন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় বেশি বরাদ্দ রাখা দরকার বলে মনে  করেন এই অর্থনীতিবিদ।

তিনি বলেন, আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করের হার কম এবং কর রেয়াতের ক্ষেত্রেও বৈষম্য রয়েছে। চলতি বাজেটে করের হার স্থিতিশীল রাখা হয়েছে; যা বিশ্বের আর কোনও দেশে দেখা যায় না। বাজেটে কম আয়ের থেকে বেশি আয়ের ব্যক্তির কর ও কর রেয়াতের বৈষম্য লক্ষ্যণীয়।

নতুন কর নীতিমালা তৈরিসহ কর সংগ্রহের পদ্ধতি আরও সহজ করার পাশাপাশি প্রত্যক্ষ করের প্রতি জোর দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সব ধরনের রফতানি খাতে সমান সুযোগ দেওয়ার সমালোচনা করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, আমদানি ও রফতানি শুল্কের পরিমাণ বাস্তবসম্মত নয়। বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহার, এডিপির বাস্তাবায়ন ও কর আহরণের ক্ষেত্রে সমস্যা রয়ে গেছে। এর বাইরে জাতীয় বাজেটের আর্থিক কাঠামোর ক্ষয় হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রসঙ্গ তুলে ধরে ড. দেবপ্রিয় বলেন, এডিপি নিয়ে নতুন কোনও ধরনের অগ্রগতি লক্ষ্য করছি না। মেগা প্রকল্পগুলো আগের মতো অবস্থায় রয়েছে। এডিপির তহবিল গতবারের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি। এটা ব্যবহার করতে হলে যে নীতির পরিবর্তন দরকার, যে অবকাঠামো দরকার তা নেই।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এডিপির অনেক প্রকল্প রয়েছে যার ৫০ শতাংশই সম্পন্ন হয়নি, যে প্রকল্পগুলো শেষ হবে বলা হচ্ছে সেগুলোতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ১৮টি প্রকল্পে মাত্র ১ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, ২০টিতে মাত্র ১ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়া অন্যগুলোতে পর্যাপ্ত অর্থায়ন করা হয়নি। ভর্তুকির ক্ষেত্রে একটা জাতীয় নীতিমালারও দাবি জানিয়েছেন সিপিডির এই বিশেষ ফেলো।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাজেটের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ঠিক আছে। তবে আয়-ব্যয় কাঠামোতে স্বচ্ছতার ঘাটতি আছে। নিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি, জিডিপির প্রবৃদ্ধি, রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধিসহ বেশ কিছু কারণে এবারের বাজেট প্রণয়ন তুলনামূলক স্বাচ্ছন্দময় হয়েছে।

সিপিডির বাজেট প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেন হোসেন, রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।