institutional lagoশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে বিতর্কিত পন্থায় দুর্বল কোম্পানির তালিকাভুক্তি বর্তমান বাজার স্থিতিশীলতার জন্য প্রধান অন্তরায়। এভাবে পুঁজিবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বেরিয়ে যাচ্ছে, শেষ পর্যন্ত যার ফলাফল ভালো হচ্ছে না। সরকারসহ পুঁজিবাজারের নীতি নির্ধারকদের নানা পদক্ষেপে বার বার বাজারে সুচকের উকি মেরে ও বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না।

তবে এবার কি বাজার স্থিতিশীল হবে এমন প্রশ্ন বিনিয়োগকারীদের। নাকি বরাবরের মত বাজার আর দুই এক দিন সুচকের উকি মেরে তলানিতে যাবে। এছাড়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে তালিকাভুক্তির পরই কোম্পানির প্রকৃত চিত্র বিনিয়োগকারীদের সামনে আসে। কিন্তু তত দিনে সেই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তারপরও যখন বাজারে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোর শেয়ারই অবমূল্যায়িত হচ্ছে- ঠিক তখনই একের পর এক কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। অথচ ২০১০ সালের প্রাক্কালে যখন কোম্পানির শেয়ার দর অতিমূল্যায়িত হচ্ছিল তখন নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তির প্রয়োজন ছিল।

কিন্তু সেই সময় রহস্যজনক কারণে নীরবতা পালন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আর নানা বিতর্ক উপেক্ষা করে দুর্বল কোম্পানিকে প্রতিনিয়ত বাজারে আনা হচ্ছে। এভাবে আসলে ডুবন্ত একটি জাহাজের ওপর আরো বোঝা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।

নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি এবং লেনদেনের জের ধরে মাঝে মাঝে বাজারে সাময়িক স্ফীতাবস্থা দেখেছি। কিন্তু বোঝা চাপিয়ে দেয়া বন্ধ না হলে পরিণতি ভালো হবে না। বিতর্কিত পন্থায় নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত বাজার স্থিতিশীল হবে সে আশায় বুক বাঁধতে পারছি না।

এদিকে পুঁজিবাজারের লেনদেন উন্নয়নে মাঝে মধ্যে দৌঁড় ঝাপের কমতি নেই। কিন্তু তবুও যেন অধরা থেকে যাচ্ছে লেনদেনসহ বাজারের উন্নতি। ফলে আবারও লেনদেনে নেতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা গেছে। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন (টার্নওভার) কমেছে ১৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

এদিকে দেশের পুঁজিবাজারে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে এক্সপার্ট বা দক্ষ ও যোগ্য জনবলের অভাবেই স্থিতিশীল হচ্ছে না পুঁজিবাজার। দক্ষ ও যোগ্য জনবলের অভাবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সঠিক সময়ে সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। যা বাজারের দীর্ঘ মেয়াদী স্থিতিশীলতার অন্যতম অন্তরায় হিসাবে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।

জানাযায়, ২০১০ সালের ধ্বস পরবর্তী সময়ে বাজার অস্থির হতে থাকে। আর এই প্রেক্ষাপটে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ থেকে সরে দাঁড়ায়। তারা বলছে বাজার স্থিতিশীল না হলে বিনিয়োগে ফিরবে না। অথচ বাজারকে স্থিতিশীলতায় ফিরিয়ে আনা ও তা ধরে রাখার দায়িত্ব প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এমন সমন্বয়হীন সিদ্ধান্তের কারণে এই অস্থিরতার চিত্র আজও টিকে আছে বাজারে।

সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। অথচ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা চাইলে বা তাদের যদি এক্সপার্ট থাকতো তা হলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হত না। কারণ বাজারে সবগুলো কোম্পানিতো আর খারাপ না।

তারা বেছে বেচে কিছু কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারতো। এতে করে একদিকে বাজারের গতিশীলতা রক্ষা করা যেত অন্যদিকে বাজারের স্থিতিশীলতাও ফিরিয়ে আনা সম্ভব হত। বাজারের বর্তমান প্রেক্ষাপটে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বলছে, তাদের হাতে বর্তমানে টাকা আছে। টাকা নেওয়ার মত গ্রাহক নেই। অন্যদিকে বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন গ্রাহক থাকতে হবে কেন তারা চাইলেও তো নিজ উদ্যোগে বাজারে বিনিয়োগ করতে পারে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় সীমা (এক্সপোজার লিমিট) ইস্যুতে দীর্ঘ দিন বাজারে মন্দা অবস্থা বিরাজ করে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক শেয়ার না বিক্রি করে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় করার নীতি সহায়তা দিয়েছে।

তারপরও বাজারে লেনদেন পুরোপুরি গতি ফিরে পাচ্ছে না। এতে বুঝা যাচ্ছে এখনও বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হয়নি। তাই সূচক বাড়লেও লেনদেন সেই হারে বাড়েনি। ফলে বাজারের লেনদেন এখনও ৩০০ কোটি টাকার ঘরেই ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারে সক্রিয় হলে লেনদেনে গতি ফিরে পাবে বলে মনে করছেন তারা।