lubricants lagoফাতিমা জাহান, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের কোম্পানি ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টসের শেয়ারে নতুন চমক দেখিয়েছেন। আজ লেনেদেনের শুরুতে ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস বিক্রেতা উদাও হয়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা নতুন করে ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টসের শেয়ারের দিকে ঝুঁকছেন বলে বিভিন্ন সিকিউরিটিজ হাউজ সুত্রে জানা যায়। সামনে এ কোম্পানির শেয়ারের দাম আরো বাড়বে বলে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগ করছেন।

এদিকে আজ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের আধা ঘণ্টার মধ্যে বিক্রেতা উধাও গেছে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টসের শেয়ারের। এতে কোম্পানির শেয়ারটি হল্টেড হয়ে মূল্য স্পর্শ করছে সার্কিট ব্রেকারে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, বেলা ১১টা ১০ মিনিট পর্যন্ত কোম্পানিটির স্ক্রিনে সর্বশেষ ৩ হাজার ৪৭০ টি শেয়ার কেনার প্রস্তাব দেখাচ্ছিল। কিন্তু বিক্রেতার ঘরে কোনো শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব ছিল না। হল্টেডের আগে সর্বশেষ লেনদেনটি হয় ৫৮৬ টাকা ৯ পয়সা দরে। গতকাল এই শেয়ারের সমাপনী দর ছিল ৫৪৬ টাকা।

এদিকে লুব্রিক্যান্টের জন্য বেইজ অয়েল আমদানি ও তা বিক্রি থেকে বড় ধরনের মুনাফা পাচ্ছে ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস ব্লেন্ডার্স লিমিটেড। আমদানিকৃত পণ্যটি অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে সরাসরি বিক্রি করে দ্বিতীয় প্রান্তিকে এ কোম্পানি পরিশোধিত মূলধনের চেয়েও বেশি মুনাফা করে। এর ধারাবাহিকতায় তৃতীয় প্রান্তিকে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণের বেইজ অয়েল আমদানি করেছে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটি। এবার ট্রেডিং ব্যবসা থেকে গত ১৫ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মুনাফার আশা করছে তারা।

জানা গেছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অনুমতি পাওয়ার পর গত বছরের এপ্রিলে প্রথমবারের মতো ৫৪০ টন লুব্রিকেটিং বেইজ অয়েল আমদানি করে ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস। রাষ্ট্রায়ত্ত পদ্মা অয়েল কোম্পানির কাছে তা বিক্রি করে ১ কোটি ৪২ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ট্রেডিং মুনাফা করে তারা। এর সুবাদে দ্বিতীয় (অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়ায় ১০ টাকা ৯৯ পয়সা।

দ্বিতীয় দফায়, সেপ্টেম্বরে আরো ১ হাজার টন লুব্রিকেটিং বেইজ অয়েল আমদানির জন্য দরপত্র আহ্বান করে কোম্পানিটি। চলতি বছরের শুরুতে তা তাদের হাতে পৌঁছায়। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এর সিংহভাগই পরিশোধন বা সরাসরি বিক্রি হয়ে গেছে। কোম্পানি আশা করছে, বাকি অংশও চলতি মাসেই বিক্রি হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টের কোম্পানি সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দ্বিতীয় চালানে আনা লুব্রিকেটিং বেইজ অয়েলের বড় অংশই বিক্রি হয়ে গেছে। আশা করছি, মার্চের মধ্যে এ চালানের বাকি অংশও বিক্রি হবে। ১৬ ফেব্রুয়ারি আরো এক হাজার টন লুব্রিকেটিং বেইজ অয়েল আমদানির দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমরা শুধু পদ্মা অয়েলকে লুব্রিকেটিং বেইজ অয়েল সরবরাহ করছি। একই ব্যবসার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য দুই তেল কোম্পানি মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও যমুনা অয়েলের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। কিছুদিনের মধ্যেই অন্তত একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি হতে পারে।

জানা যায়, বেসরকারি খাতে সরাসরি লুব্রিক্যান্টস পণ্য আমদানির পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা-মেঘনা থেকে ব্লেন্ডিং অর্ডার কমে যাওয়ায় সংকটে পড়ে ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস। কোম্পানিটি তাদের উত্পাদন সক্ষমতার ১০ শতাংশও ব্যবহার করতে পারে না।

ফলে কোম্পানিটি পরিচালন লোকসানের মুখে পড়ে। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে লুব বেইজ অয়েল আমদানি ও অন্য কোম্পানির কাছে তা সরাসরি বিক্রি এবং জাপানের ইউয়াসা ব্র্যান্ডের ব্যাটারি বিপণনের মাধ্যমে ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টসের ব্যবসা বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নেয় বিপিসি।

চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকেও লোকসান দেখায় ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস। তবে বেইজ অয়েল ট্রেডিং ব্যবসার সুবাদে দ্বিতীয় প্রান্তিকে বড় মুনাফা পায় তারা। সিএফও আশা প্রকাশ করেন, ব্যাটারি বাজারজাতের আর্থিক সুফলও তৃতীয় প্রান্তিকের ফলাফলে দেখা যাবে।

গত ১৭ জানুয়ারি ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্ট দ্বিতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সে প্রান্তিকে কোম্পানির মুনাফায় উল্লম্ফন দেখা যায়। ২০১৫ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১০ টাকা ৯৯ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৪ পয়সা। ফলে প্রথম প্রান্তিকের লোকসান কাটিয়ে অর্ধবার্ষিকীতে কোম্পানির ইপিএস দাঁড়ায় ১০ টাকা ৭৯ পয়সায়, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৫৬ পয়সা।

কোম্পানির দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটি ৫ লাখ ৭৮ হাজার টন লুব্রিক্যান্ট ব্লেন্ডিং করেছে। এ বাবদ কোম্পানির আয় হয়েছে ১৯ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। আর ব্লেন্ডিংয়ে খরচ হয়েছে ৩১ লাখ ১২ হাজার টাকা। এতে উত্পাদন পর্যায়েই লোকসান হয়েছে ১১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।

আর প্রশাসনিক খরচ শেষে পরিচালন লোকসান দাঁড়ায় ১৫ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। তবে লুব বেইজ অয়েল আমদানি এবং সরকারি অন্যান্য কোম্পানির কাছে তা বিক্রি করে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ট্রেডিং মুনাফা হয়েছে ১ কোটি ৪২ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ১ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এতে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৯৯ পয়সায়।

আগের ৫ বছরের ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য ৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ অনুমোদন পেয়েছেন ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টসের শেয়ারহোল্ডাররা। সমাপ্ত হিসাব বছরে এর ইপিএস ছিল ৩ টাকা ৩৯ পয়সা। ২০১৪ হিসাব বছরে ইপিএস ছিল ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) আওতাধীন প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭৬ সালে পুঁজিবাজারে আসে। এর অনুমোদিত মূলধন ৫ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১ কোটি টাকা। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের কাছে কোম্পানির ৫১ শতাংশ শেয়ার, প্রতিষ্ঠান ৩০ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং বাকি ১৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।