পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে বাজারবিমুখ হয়ে পড়েছে হাজার হাজার বিনিয়োগকারীরা। তারা পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে আর আস্থা রাখতে পারছেন না। তেমনি নিয়ন্ত্রক সংস্থার আচরনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। এছাড়া পুঁজিবাজার ধারাবাহিক দরপতনে ফোর্স সেলের আতঙ্কে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। গতকাল ডিএসই তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ হাউজগুলোতে শেয়ার বিক্রিয়ের হিড়িক ছিল। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, এ কেমন আচরন। বছরের পর বছর দরপতন ঘটলোও বাজার ঠিক হচ্ছে না।

পুঁজিবাজার নিয়ে কারা কলকাঠি নাড়ছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এমনকি দ্রুত কারসাজির চক্রের বিচারের আত্ততায় আনা উচিত। তা না হলে কি কারনে বাজার অস্থিতিশীল হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে গুজবকারীদের বিরুদ্ধে বিএসইসি’র পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে ক্রমাগত দর পতনের ফলে পুঁজিবাজারের সব টাকা যাচ্ছে সঞ্চয়পত্রে, এমনটিই মনে করছেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা।

যেখানে লাভ বেশী, সেখানেই মানুষের আগ্রহ বেশী। পুঁজিবাজার সহ ব্যাংকের সুদ ক্রমাগত কমে যাওয়াতে বিনিয়োগকারীদের এখন ভরসা সঞ্চয়পত্রে। অধিকাংশ বিনিয়োগকারী বলছে, সঞ্চয়পত্রেই তাদের আশা ভরসার শেষ স্থল। এখানে পুঁজি হারানোর কিছু নাই। সঞ্চিত টাকা যে সঞ্চয়পত্রেই যাচ্ছে তা জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্যতেই পাওয়া যায়।

জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের আগস্ট মাসে এ খাতে নীট বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৬৫১ কোটি ২৮ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১৮০ কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছরের জুলাই মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিক্রি আসে ২ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা।

তার আগের দুই মাস জুন ও মে মাসে বিক্রির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২ হাজার ১৭০ কোটি এবং ২ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। গত বছরের আগস্টে ২ হাজার ৪৭১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ৪ হাজার ৬২৭ কোটি ১৯ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৩২৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

অন্যদিকে পুঁজিবাজারের টাল মাতাল পরিস্থিতিতে বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে কিছু কিছু বিনিয়োগকারী বাজার পর্যবেক্ষন করছেন। তারা বাজারের উপর ভরসা না পাওয়ায় নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছে না।

এমনকি বর্তমান বাজারের এই ত্রান্তিকালে মার্চেন্ট ব্যাংকত্ত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিরব ভুমিকা পালন করছেন। একাধিক বিনিয়োগকারীরা বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকান্ডে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফিরে আসছে না। বরং আস্থার ফাটল ধরছে।

ফলে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীরা বাজারবিমুখ হয়ে পড়ায় বাজারের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হচ্ছে না। এই মুহুর্তে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে হলে প্রথমেই বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফিরাতে হবে। তেমনি টানা বাজার স্থিতিশীল রাখতে হবে।

কেননা বিনিয়োগকারীদের মাঝে পুঁজিবাজার নিয়ে যে নৈতিকতা সৃষ্টি হয়েছে তা দুর করতে হবে। এদিকে গতকাল বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর কমে যাওয়ায় বড় ধরনের দরপতনে চলছে দেশের উভয় বাজারের লেনদেন।

গতকাল প্রথম দুই ঘণ্টার লেনদেন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৫৫.৭২ পয়েন্ট। এর ফলে দুপুর সাড়ে ১২টায় সূচক দাঁড়িয়েছে ৪৬২০.৯০ পয়েন্টে। এ সময়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের ৭৮ শতাংশেরই দর কমেছে।

লেনদেনে অংশ নেয়া ৩০০টি ইস্যুর মধ্যে দর বেড়েছে ৪৪টির, কমেছে ২৩৪টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টির দর। দরবৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে কে এ্যান্ড কিউ। ৯.৬৭ শতাংশ দর বেড়ে এ কোম্পানির শেয়ার ১৭ টাকায় লেনদেন হচ্ছিল।

দরবৃদ্ধির দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইপিডিসির দর ৭.৫১ শতাংশ বেড়ে ২২.৯ টাকায় ও তৃতীয় স্থানে থাকা মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের দর ৫.০৩ শতাংশ বেড়ে ১৬.৭ টাকায় লেনদেন হচ্ছিল। দরবৃদ্ধিতে এর পর রয়েছে বার্জার পেইন্টস, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ও মেঘনা পিইটি।

আমিনুল ইসলাম