শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে বাড়ছে ঋণ খেলাপি, এমডি ব্যস্ত ডলার কারসাজিতে
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: একটি ব্যাংকের জন্য খেলাপি ঋণ সব দিক দিয়েই খারাপ। খেলাপি ঋণ একটি ব্যাংককে পথে বসিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কোনোভাবেই এই খেলাপী ঋণ বাড়তে দেওয়া যাবে না বলে ২০২৩ সালে মন্তব্য করছেন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ্ উদ্দীন আহমেদ। অথচ তার আমলে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এখন প্রশ্ন হলো এমডি কী এ কথা কথার কথার বলছেন। নাকি মিডিয়ার সামনে নিজেকে জাহির করার জন্য এমন কথা বলছেন এ প্রশ্ন এখন আমানতকারী সহ সংশ্লিষ্টদের।
ফলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি শাহজালার ইসলামী ব্যাংক পিএলসি বড় পরিসরে খেলাপি ঋণের ভারে ধুঁকছে। এনিয়ে সঠিক সময়ে ব্যাংকটি থেকে অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে আমানতকারীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা বেড়েই চলছে। তাই অচিরেই ব্যাংকটির ঋণ খেলাপির সাথে যারা জড়িত সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আমানতকারীরা। পাশাপাশি ব্যাংকটি থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করে বিদেশে পাচার হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার আহবান জানিয়েছেন আমানতকারীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২৪ সালে সর্বনিম্ন মুনাফা করেছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক। ঋণ খেলাপির বিপরীতে প্রভিশন বেড়ে যাওয়ায় মুনাফা বা শেয়ার প্রতি আয় কমেছে কোম্পানিটির। একদিকে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের বেড়েছে খেলাপী ঋণ অন্যদিকে ব্যাংকটির এমডি মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ফের ডলার কারসাজির অভিযোগ উঠেছে।
মুলত ব্যাংকটির ডলার কারসাজির মূল হোতা ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসলেহ উদ্দিন। তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিয়মবহির্ভূতভাবে উচ্চমূল্যে ডলার বিক্রি করেছে। তদন্তে দেখা গেছে, ব্যাংকটির ঢাকা প্রধান কার্যালয়, উত্তরাসহ একাধিক শাখা গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৮৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায় করেছে। অভিযোগের প্রমাণ মিললে এক ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) ও একজন এভিপিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর তীব্র ডলার-সংকটের সুযোগে এ অনিয়মে জড়ায় শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক। অতিরিক্ত দরে ডলার বিক্রির দায়ে ২০২৩ সালেই ব্যাংকটিকে জরিমানা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ডলার কারসাজির মূল পরিকল্পনায় ছিলেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসলেহ উদ্দিন ও তৎকালীন ডিএমডি মোস্তফা হোসেন। মোসলেহ উদ্দিন ২০২২ সালে এনসিসি ব্যাংক থেকে শাহজালালে যোগ দিয়েই ঢাকা ব্যাংক থেকে মোস্তফা হোসেনকে নিয়ে আসেন এবং প্রধান কার্যালয়ের দায়িত্ব দেন।
এই দুজনের যোগসাজশে গ্রাহকের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করে তা ব্যাংকের হিসাবে না জমিয়ে ব্যক্তিগত হিসাবে লেনদেন করা হতো। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অডিটে বিষয়টি ধরা পড়ে। অডিট টিম এভিপি ও ইমপোর্ট ইনচার্জ মোহাম্মদ নকিবুল হকের ড্রয়ার থেকে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্যাশ চেক ও পে-অর্ডার উদ্ধার করে, পাশাপাশি ২৮ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায়।
তদন্তে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৮ মে পর্যন্ত অতিরিক্ত এক্সচেঞ্জ গেইনের নামে আদায় করা হয় ৮৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে গাজী ইন্টারন্যাশনাল, গাজী ট্যাংক, গ্লোবাল ব্র্যান্ড প্রাইভেট লিমিটেড থেকে নগদে নেওয়া হয় ৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এছাড়া ইনগ্লোন ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের কাছ থেকে ‘স্পনসরশিপ’-এর আড়ালে নেওয়া হয় ৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। ব্যাংকের অডিটে গাজী ট্যাংকের কাছ থেকে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকার ৮টি চেক উদ্ধারের তথ্যও রয়েছে, যা নির্ধারিত হিসাবে জমা হয়নি।
ডলার সংকটের সময়ে শুধু শাহজালাল নয়, অন্তত ২০টি ব্যাংক ঘোষিত রেটের বেশি দামে ডলার বিক্রি করেছে বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন। তাদের দাবি, আমদানি বিল মেটাতে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো ঘোষিত দামের চেয়ে অন্তত ১ টাকা বেশি রেটে ডলার সরবরাহ করত। ফলে ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে বেশি দামে ডলার কিনে লেনদেন করত, যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকে ঘোষিত রেটই দেখানো হতো এবং অতিরিক্ত অর্থ ভাউচার বা চেকের মাধ্যমে সমন্বয় করা হতো।
ব্যাংকটির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ১৬৯ কোটি ৩৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে এক দশমিক ৫২ টাকা। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে মুনাফা হয়েছিল ৩৫৮ কোটি ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
২০২২ সালে যা ছিল ৩৫৮ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর ২০২০ ও ২০২১ সালে মুনাফা হয়েছিল যথাক্রমে ১৯১ কোটি ৩৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও ২৫৯ কোটি ১৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২৪ সালে সর্বনিম্ন মুনাফা হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে, কোম্পানিটি ২০২১ সালের প্রায় এক কোটি টাকা অবণ্টিত লভ্যাংশ ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে (সিএমএসএফ) জমা দেয়নি। তিন বছরের মধ্যে কোম্পানির অবিণ্টিত লভ্যাংশ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী উল্লেখিত ফান্ডে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু অবণ্টিত লভ্যাংশ এই ফান্ডে জমা না দিয়ে বিএসইসির নির্দেশনা অমান্য করেছে শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক।
মুলত ২০২১ সালের ৮৫ লাখ ৫৬ হাজার ১৯৪ টাকা অবণ্টিত লভ্যাংশ তিন বছর অতিবাহিত হলেও ৭ মে, ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত উল্লেখিত ফান্ডে জমা দেয়নি কোম্পানিটি। এদিকে বিএসইসির নির্দেশনা অমান্য করায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বলেন, আমরা সকলেই জানি অন্যান্য কোম্পানির তুলনায় অধিকাংশ ব্যাংকে সুশাসন বিরাজমান। কিন্তু সেই ব্যাংকেই যদি কমপ্লায়েন্স না মানা হয়, সুশাসন না থাকে, তবে তা দুঃখজনক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ ‘এসজেআইবিপিএলসি চতুর্থ সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড’ নামে ৬০০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী টায়ার-২ ক্যাপিটাল শক্তিশালী করার জন্য প্রাইভেট প্লেসমেন্টে এ বন্ড ইস্যু করা হবে, যা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসইসির অনুমোদন সাপেক্ষে ইস্যু করা হবে।
গত ২৯ মে এ সংক্রান্ত খবর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়। সাত বছর মেয়াদি এ বন্ডের বৈশিষ্ট্য হবে ফুললি রিডিমঅ্যাবল, আনসিকিউরড, নন-কানভার্টেবল ও ফ্লোটিং রেট। ব্যাংকটির প্রতিনিয়ত ঋণ খেলাপির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুশাসনে ঘাটতি রয়েছে। এমন একটি ব্যাংক বন্ড ছেড়ে সেই বন্ডের অর্থ সুদে আসলে সঠিকভাবে পরিশোধ করতে পারবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে, ২০২৩ সালে শাহজালাল ইসলামি ব্যাংকের ঋণ খেলাপির পরিমাণ ছিল এক হাজার ৬৮ কোটি ৯০ লাখ ১৭ হাজার ৮৯০ টাকা। আর ২০২৪ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১১৯ কোটি ১০ লাখ ৫৪ হাজার ৬৯৭ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ঋণ খেলাপির পরিমাণ বেড়েছে এক হাজার ৫০ কোটি ২০ লাথ ৩৬ হাজার ৮০৭ টাকা।
এছাড়াও ২০২৪ সালে কোম্পানিটির মোট লোন বা ইনভেস্টমেন্ট রয়েছে ২৬ হাজার ৮৯৪ কোটি ৬৪ লাখ ৮৪ হাজার ৬৬৩ টাকা। এর বিপরীতে ঋণ খেলাপির পরিমাণ এসে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এর আগের বছর ঋণ খেলাপির পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ।
এদিকে ২০২৪ সালে ঋণ খেলাপির বিপরীতে শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক প্রভিশন হিসেবে রেখেছে ৭৯১ কোটি ৬১ লাখ ৫ হাজার ৬৯৫ টাকা। এর আগের বছর যা ছিল ৪০১ কোটি ৯৯ লাখ ৩৫ হাজার ৫১৮ টাকা। এক্ষেত্রে প্রভিশন বেড়েছে ৯৭ শতাংশ। এই প্রভিশন বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে।
তথ্য বিশ্লেষণে আরও জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন শেয়ারে বিনিয়োগ করেছিল ২৭২ কোটি ৪৩ লাখ ৪২ হাজার ৩৬১ টাকা। বর্তমানে শেয়ারগুলোর বাজার মূল্য এসে দাঁড়িয়েছে ১৬৫ কোটি ৭৯ লাখ ৮ হাজার ৯৩৯ টাকা। এক্ষেত্রে আনরিয়েলাইজড লস বা লোকসানে রয়েছে ১০৬ কোটি ৬৪ লাখ ৩৩ হাজার ৪২২ টাকা।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ,২৫) শাহজালাল ইসলামি ব্যাংকের ইপিএস হয়েছে এক দশমিক ০৪ টাকা। এর আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল এক দশমিক ০৯ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ইপিএস কমেছে দশমিক ০৫ টাকা।
একাধিক বিনিয়োগকারীরা জানান, ব্যাংকটির ম্যানেজমেন্টের অদক্ষতা ও অসততা রয়েছে। যে-কারণে ৪২টি কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করলেও একটিও বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী লাভে নেই। মুষ্ঠিমেয় কিছু মানুষের স্বার্থ হাসিলে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যেই মূলত ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে এসব শেয়ারে। আর এ কাজে ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে পরিচালনা পর্ষদ জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রামে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ২৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করায় সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির পরিবারের সম্পত্তি হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি অর্থঋণ আদালত চট্টগ্রামের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম বলেন, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে ঋণ নেওয়ার পর তা পরিশোধ করেননি নুরুল ইসলাম বিএসসি। খেলাপি ঋণ আদায়ে গত বছর শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পক্ষে অর্থঋণ আদালতে মামলা করা হয়। খাতুনগঞ্জ শাখার পক্ষে সিনিয়র অফিসার মো. আরিফ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেছিলেন।
আদালত সূত্র জানায়, মামলায় নুরুল ইসলামের স্ত্রী সানোয়ারা বেগম, ছেলে মুজিবুর রহমান, জাহিদুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম ও ওয়াহিদুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সানোয়ারা বেগম সাবেক মন্ত্রীর মালিকানাধীন সানোয়ারা ডেইরি ফুডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান, মুজিবুর রহমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং অন্য তিন ছেলে একই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। বাদীপক্ষ থেকে জানানো হয়, ২২ কোটি ৮২ লাখ ৮৮ হাজার ৭০৭ টাকা ৩৬ পয়সা খেলাপি ঋণ আদায়ের দাবিতে এ মামলা করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে এই ঋণ বেড়ে ২৭ কোটি টাকা হয়েছে। নুরুল ইসলাম বিএসসির স্ত্রী সানোয়ারা বেগমের সম্পত্তি রায়ের আগে অগ্রিম ক্রোক করার আবেদন জানান বাদী। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, বিবাদীরা ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপি এবং ২০১৩ সালের আগে ঋণ গ্রহণের পর থেকে বারবার পুনঃতফসিল সুবিধা নিয়েও ঋণ পরিশোধ করেননি।
আদালতের আদেশে বলা হয়, তফসিলভুক্ত সম্পত্তি কেন ক্রোক করা হবে না, তা আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তফসিলভুক্ত সম্পত্তি হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো। এর আগে উত্তরা ব্যাংকের ৩০ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করায় নুরুল ইসলাম বিএসসি ও তার স্ত্রীর সম্পত্তি হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত।
গত বছরের ২১ অক্টোবর অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন। নুরুল ইসলাম বিএসসি ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার মালিকানাধীন সানোয়ারা গ্রুপের বিরুদ্ধে একাধিক আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে। এর মধ্যে সানোয়ারা ডেইরি ফুডস লিমিটেড এবং ইউনিল্যাক সানোয়ারা বিডি লিমিটেড নামে দুটি প্রতিষ্ঠান জামানত ছাড়াই উত্তরা ব্যাংক থেকে ৩৭ কোটি টাকার ঋণ নেয়। ব্যক্তিগত নিশ্চয়তার ভিত্তিতে এই ঋণ দেওয়া হলেও ১৪ বছর পরও কোনও অর্থ পরিশোধ করা হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠান দুটিকে ২০ কোটি টাকার এলসি ঋণসীমা, ১৫ কোটি টাকার ট্রাস্ট রিসিট ঋণ এবং দুই কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি দেওয়া হয়। তবে ২০১৫ সালে এসব ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, উত্তরা ব্যাংক সানোয়ারা গ্রুপকে অবৈধ সুবিধা দিয়েছে, যা আর্থিক খাতের সুশাসনের পরিপন্থি।
২০১৬ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ উপাদান দিয়ে আইসক্রিম উৎপাদনের অভিযোগে সানোয়ারা ড্রিংকস অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। তৎকালীন অভিযানে মেয়াদোত্তীর্ণ ১৪৫ কেজি স্ট্রবেরি ট্রপিং, ডার্ক কম্পাউন্ড চকলেট এবং ২০ কেজি হানি রিটেল জব্দ করে ধ্বংস করা হয়।

