স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দেশের ব্যাংক খাতের ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটজনক সময় পার করছে। প্রথমবারের মতো খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন মাসে শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের প্রায় ২৭ শতাংশ।

গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংক খাতের লুকানো খেলাপি ঋণ বের হয়ে আসছে। আবার আওয়ামী লীগ নেতা ও তাঁদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের ঋণও খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। তাতে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ এক বছরের ব্যবধানে ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

অর্থাৎ ব্যাংক খাতের বিতরণ করা ঋণের এক-চতুর্থাংশের বেশি এখন খেলাপি। আর তাতেই খেলাপি ঋণে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে এখন বাংলাদেশের নাম। মুলত ব্যাংক খাতে জালিয়াতির মাধ্যমে বিতরণ করা বড় অঙ্কের সব ঋণই এখন খেলাপি হচ্ছে। এ কারণে অপরিশোধিত ঋণের পরিমাণ বাড়ছে।

যা ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের বোঝা বাড়িয়ে দিচ্ছে। যেসব ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতি বেশি হয়েছে, সেগুলোতেই বর্তমানে খেলাপি ঋণের বোঝা বেশি। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণের কারণে জালিয়াতির শিকার ব্যাংকগুলোই বর্তমানে বেশি দুর্বল। এর মধ্যে অতি দুর্বল ৫টি ব্যাংক একীভূত করা হচ্ছে। এরমধ্যে একটি ইউনিয়ন ব্যাংক।

সূত্র জানায়, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে নজিরবিহীন লুটপাট হয়েছে। লুটপাট করতে ১১টি ব্যাংক দখল করা হয়েছে। বিশেষ করে ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক কয়েকটি ব্যাংকের অবস্থান এখন নড়বড়ে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইউনিয়ন ব্যাংক। ব্যাংকটির মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৯০ শতাংশই বর্তমানে খেলাপি। ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ইউনিয়ন ব্যাংক ২৮ হাজার ১৭৪ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে।

এর মধ্যে ২৫ হাজার ৩০২ কোটি টাকা, অর্থাৎ ৮৯ দশমিক ৮১ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকে রাখা আমানতকারীদের টাকা যেমন আত্মসাৎ করা হয়েছে, তেমনি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। পাচার করা টাকায় বিদেশে গড়ে তোলা হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিলাসবহুল প্রতিষ্ঠান।

পাচারের টাকায় জালিয়াতরা এখন দেশ থেকে পালিয়ে বিদেশে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন। মুলত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় দীর্ঘদিন ব্যাংকগুলো তাদের ঋণ খেলাপি ও নানা অসঙ্গতির সঠিক চিত্র প্রকাশ করতে পারেনি।

কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক খাত নিয়ে অত্যন্ত সচেতন থাকায় একে একে বেরিয়ে আসছে ব্যাংকগুলোর ঋণ খেলাপির আসল চিত্র। যেসব ব্যাংককে আমানতকারী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ ভালো বলে জানতেন, সেগুলোর ঋণ খেলাপিও বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। এর ফলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসির ঋণ খেলাপি বাড়ায় ব্যাংকটির আমানতকারীরা পড়েছেন ঝুঁকিতে। নতুন করে ব্যাংকটিতে আমানত রাখছেন না কেউ।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো, খেলাপি ঋণের বিরাট একটি অংশ ইচ্ছাকৃতভাবে পরিশোধ করা হয়নি। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে দেখা গেছে, ব্যাংকের ১১৯ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান প্রায় ৬ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ইচ্ছাকৃতভাবে ফেরত দিচ্ছে না। এদের আর্থিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তারা মূলধন বা মুনাফা পরিশোধ করছে না।

এর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকে ২০২১-২২ অর্থবছরে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) ও বিনিয়োগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের এমডি হাবিবুর রহমানের নাম উঠে এসেছে বিতর্কিত ঋণ অনুমোদনে। ইউনিয়ন ব্যাংকের ঋণপ্রস্তাবের অফিস নোটে তখন হাবিবুর রহমানের স্বাক্ষর দেখা গিয়েছে। নোটে লেখা ছিল, প্রধান কার্যালয়ের প্রথম ও শেষ অনুমোদন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিদর্শন প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাবিবুর রহমান ইউনিয়ন ব্যাংকে ছিলেন এবং তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন এস আলম গ্রুপের পক্ষে ২৬০৭ কোটি টাকার অনিয়মিত ঋণ অনুমোদনে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগ ৭ এর রিপোর্ট বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রিত প্রায় ৩০টি ‘নামসর্বস্ব’ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে পৃথকভাবে ২৩ কোটি টাকা থেকে ১৪৮ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন করা হয়। এসব ঋণের মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। এখন ওই ঋণগুলো খেলাপি হয়ে গেছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই অস্তিত্বহীন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একাধিক মামলা রয়েছে।

এক বিবরণে বলা হয়েছে, ২০০০ সালে তিনি মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ক্রেডিট বিভাগে থাকাকালে ‘প্যাট্রিক ফ্যাশনস’ নামের এক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ গোপন করে নতুনভাবে আট কোটি টাকার ঋণ অনুমোদনের জন্য মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগে তার বিরুদ্ধে প্রতারণা, যোগসাজশ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মামলা দায়ের করা হয় (মামলা নং ২৭২/২২)।

২০২৪ সালে ওই মামলায় চার্জশিট দাখিলের পর হাইকোর্ট (রিট নং ৫২১৭/২০২৪) বাংলাদেশ ব্যাংককে ৬০ দিনের মধ্যে হাবিবুর রহমান সম্পর্কে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়। এরপর তিনি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের এমডির পদ থেকে পদত্যাগ করেন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে তিনি পুনরায় স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্বে ফিরে আসেন। অভিযোগ আছে, হাবিবুর রহমান স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে ইউনিয়ন ব্যাংকের কয়েকজন বিতর্কিত কর্মকর্তা পুনর্নিয়োগ দিয়েছেন।

তাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান মানবসম্পদ প্রধান মনসুর আহমেদ ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মো. সালাহ উদ্দিন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে তাদের নামও এস আলম গ্রুপের অনুকূলে অনুমোদিত ঋণের তালিকায় আছে। দুদক সম্প্রতি হাবিবুর, মনসুর ও সালাহ উদ্দিনকে ইউনিয়ন ব্যাংকের অর্থপাচার সংক্রান্ত তদন্তে তলব করেছে বলে জানা গেছে।

আইনগত ও নিয়োগ সংক্রান্ত নীতিভঙ্গের অভিযোগও রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি সার্কুলার নং ৩ ও ৪১ অনুযায়ী ব্যাংকের সিএফও পদে থাকা জরুরি শর্ত হলো চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়া। বর্তমান সিএফও সালাহ উদ্দিন এই যোগ্যতা ছাড়া নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন এটি সার্কুলার লঙ্ঘন। একইভাবে প্রধান আইন কর্মকর্তা মো. আখতারুজ্জামানও সুপ্রিম কোর্টে তিন বছরের অভিজ্ঞতা ও বার কাউন্সিলের সদস্যপদ ছাড়া নিয়োগ পেয়েছেন। এটি নিয়োগনীতির সরাসরি লঙ্ঘন বলে অভিযোগ উঠেছে।

আরও একটি প্রাসঙ্গিক বিধান হল ২০২৪ সালের বিআরপিডি সার্কুলার নং ৫ [ধারা ২(ক)(৮)]। সে অনুযায়ী কোনো ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে যদি কারো বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য থাকে, সে ব্যক্তি কোনো ব্যাংকের এমডি বা সিইও হিসেবে নিযুক্ত হতে পারবেন না।

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের এমডি হাবিবুর রহমান বলেন, আমি তখন ইউনিয়ন ব্যাংকের এএমডি। আমার ঋণ অনুমোদনের কোনো সুযোগ ছিল না। ঋণ অনুমোদন করেন ব্যাংকের এমডি ও পরিচালনা পর্ষদ। ওই সময় ব্যাংক থেকে টাকা লুট করতে কী ধরনের কৌশল নেওয়া হয়, তা সবাই ইতোমধ্যে জেনে গেছে। আমি কোনো অন্যায় করলে নিশ্চয়ই এতদিন একটি ব্যাংকের এমডি থাকতে পারতাম না। এখানে এখন প্রধান প্রশ্নগুলো হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্টের ভিত্তিতে নেওয়া হবে কী ধরনের শাস্তিমূলক বা প্রশাসনিক ব্যবস্থা। একই সঙ্গে তদন্তে উন্মোচিত তথ্যগুলো যদি সত্যি হয়, তাহলে আর্থিক নিয়মবিধি ও নিয়োগনীতির আরও কড়া প্রয়োগের দাবি জেগে উঠবে।

এদিকে ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িত এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন বেসরকারি খাতের ইউনিয়ন ব্যাংক ২০২৩ সালের হিসাব সংশোধনের পর ২৯২ কোটি টাকার ক্ষতি দেখিয়েছে, যেখানে ব্যাংকটির আগের নিরীক্ষিত স্থিতিপত্র বা ব্যালান্স শিটে কৃত্রিমভাবে ওই বছরের জন্য ১৬২ কোটি টাকার মুনাফা দেখানো হয়। চতুর্থ প্রজন্মের এই ব্যাংক, যা বর্তমানে আরও চারটি ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ওয়েবসাইটে তাদের সংশোধিত আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করেছে। এতে ব্যাংকটি ২০২৩ সালের জন্য ঘোষিত ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ বাতিল করেছে, এবং বিপুল ক্ষতির কারণে কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সংশোধন আসে ব্যাংকের নিরীক্ষক এম এম রহমান অ্যান্ড কোং এর মাধ্যমে, যারা এর আগের লাভ-দেখানো স্থিতিপত্র-ও প্রস্তুত করেছিল। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হলেও, গত বছরের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত না হওয়ায় লভ্যাংশ বিতরণ সম্ভব হয়নি।

একই নিরীক্ষক সংস্থার প্রতিবেদনে এত বড় অমিল কীভাবে দেখা দিল এ বিষয় জানতে চাইলে ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আগের ম্যানেজমেন্ট ব্যাংকের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে সঠিক কাগজপত্র তখন দেয়নি। অডিটর বা নিরীক্ষকরা ক্লায়েন্টের সরবরাহ করা নথির ভিত্তিতেই প্রতিবেদন তৈরি করে।

গণমাধ্যমে দুর্নীতির খবর প্রকাশের পর অডিটররা নিজেরাই ব্যাংকের কাছে পুনরায় নিরীক্ষার প্রস্তাব দেন। সেই প্রেক্ষিতে ব্যাংক একই অডিটরকে পুনর্নিয়োগ করে, যারা এবার প্রকৃত আর্থিক চিত্র তুলে ধরেছে। হুমায়ুন কবির জানান, আদায় না হলেও আগের ম্যানেজমেন্ট এস আলম গ্রুপের ঋণকে নিয়মিত দেখিয়েছিল এবং প্রকৃত খেলাপি ঋণ গোপন করেছিল।

সংশোধিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জন্য ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে নেগেটিভ ২.৮ টাকায়, যেখানে আগে তা পজিটিভ ১.৫৮ টাকা দেখানো হয়েছিল। ১০ টাকার ফেসভ্যালুর বিপরীতে গতকাল বুধবার ডিএসইতে ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ারের দাম কমে দাঁড়ায় ১ টাকা ৬০ পয়সায়। ২৪ সেপ্টেম্বর এটি সর্বনিম্ন ১ টাকা ৫০ পয়সায় নেমে এসেছিল। তীব্র আর্থিক সংকটে থাকা ইউনিয়ন ব্যাংককে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক অন্য কয়েকটি ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে।

এর কারণ, ইউনিয়নের খেলাপি ঋণ জুনে যেখানে ছিল ১,০০০ কোটি টাকা, সেখানে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২৫,০০০ কোটি টাকায় মাত্র ছয় মাসে ২৫ গুণ বৃদ্ধি। মোট ঋণের মধ্যে খেলাপির হার ৩.৮২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮৭ শতাংশ পৌঁছায়, যার ফলে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতেও পারছিল না ব্যাংকটি। ২০১৩ সালে রাজনৈতিক প্রভাবে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইউনিয়ন ব্যাংক প্রায় এক দশক ধরে মন্দ ঋণ লুকিয়ে রেখেছিল, যাতে কৃত্রিমভাবে কম খেলাপি হার দেখিয়ে আর্থিকভাবে সুস্থ অবস্থার ভুয়া চিত্র তুলে ধরা যায়।

তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এসব গোপন সত্য প্রকাশ পেতে শুরু করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, সরকারের পতনের পর যে ১.৩৫ লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বাড়ার তথ্য উন্মোচিত হয়েছিল, তার ১৮ শতাংশের জন্যই দায়ী ইউনিয়ন ব্যাংক। খেলাপির এই বিপুল বৃদ্ধি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি বাড়িয়ে তোলে ১৪ হাজার কোটি টাকায় এবং মূলধন মারাত্মকভাবে ক্ষয় হয়। ফলে ব্যাংকটি টিকে থাকতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে আরও জানা যায়, ২০২২ সালে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ইউনিয়ন ব্যাংক পুরোপুরি এস আলম গ্রুপ পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল, যাদের শেয়ার ধারণ ছিল ২৬.১৮ শতাংশ। তদন্তে দেখা যায়, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির মোট ২৮ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে এস আলম গ্রুপের ঋণ ২০ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭২ শতাংশ।

বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ২৪টি নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি এবং আরও ২৫৯টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে এসব ঋণ নিয়েছিল, তবে এর খুব সামান্য অংশই ফেরত দিয়েছে। একই ধাঁচে, বাংলাদেশ ব্যাংকের জুলাইয়ের এক অডিটে দেখা যায়, এস আলম গ্রুপের পূর্বনিয়ন্ত্রিত গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকও ২০২৩ সালের জন্য প্রকৃত ২ হাজার ২৫৯ কোটি টাকার লোকসান গোপন রেখে ১২৮ কোটি টাকার মুনাফার মিথ্যা ঘোষণা দিয়েছে।

অডিটের ফলাফলের পর ব্যাংকটির ঘোষিত ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ বাতিল করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখা থেকে শুরু করে ঢাকার গুলশান, বনানী, দিলকুশা, হাটখোলা, কদমতলী, এমনকি উপকূলীয় অঞ্চল ও জেলা শহরগুলোর শাখা থেকেও ব্যাপক অঙ্কের ঋণ বিতরণ করা হয়েছে যেগুলোর বেশিরভাগই আদায় হয়নি।

উদাহরণস্বরূপ, আগ্রাবাদ শাখার গ্রাহক এস আলম অ্যান্ড কোম্পানি একাই ১১৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা খেলাপি হয়েছে। একই শাখার বিএলইউ ইন্টারন্যাশনাল ৯৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা এবং চৌধুরী ট্রেডার্স ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা পরিশোধ করেনি। বনানী শাখার গ্রাহক র্যাঙ্ক ডেনিম টেক্সটাইল মিল খেলাপি হয়েছে ৩৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকার। একই শাখার র্যাঙ্ক সোহেল কম্পোজিট ২০০ কোটি টাকা এবং রোট অ্যাপারেলস ১০৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা ফেরত দেয়নি।

দিলকুশা শাখার চিত্রও ভয়াবহ। চৌধুরী ট্রেড সেন্টার ৮৫ কোটি ৪৪ লাখ, অ্যাডভান্স ট্রেডিং ৬০ কোটি ৩২ লাখ, আল ফালাহ ট্রেডার্স ৬২ কোটি ২ লাখ টাকা খেলাপি করেছে। এ ছাড়া এম এম করপোরেশন ৭৩ কোটি ৪২ লাখ এবং মজিদ ট্রেডার্স ৫৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা ফেরত দেয়নি।

গুলশান শাখায়ও পরিস্থিতি একই রকম। এখানে পাওয়ারপ্যাক মতিয়ারা জামালপুর পাওয়ার প্লান্ট লিমিটেড ১৮৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা এবং বেঙ্গল অ্যান্ড এম সার্ভিস ১৮৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। একই সঙ্গে ইউনিভার্সাল ট্রেডিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান একাই খেলাপি করেছে প্রায় ১২০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

শুধু বৃহৎ প্রতিষ্ঠান নয়, বিভিন্ন নামে-বেনামে গড়া ছোট-মাঝারি প্রতিষ্ঠানও এ তালিকায় আছে। নর্থ লিঙ্ক, ডাইমেনশন করপোরেশন, জুপিটার ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, নাবা অ্যাপারেলস, ফেমাস ট্রেডিং করপোরেশন, ইমেজ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, টিপসকো ইন্টারন্যাশনাল, নর্থপুল ইন্টারন্যাশনাল, নুপটম ট্রেডিং, রেডিয়েন্স ট্রেডিং, মুকিম ট্রেড এজেন্সি—এসব প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকের দায় রয়েছে ৫০ থেকে ১৫০ কোটির মধ্যে।

সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো, অনেক প্রতিষ্ঠানের নামই ব্যাংকিং খাতে অপরিচিত। এদের ব্যবসায়িক সক্ষমতা, কার্যক্রম ও অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে এ ঋণগুলোর প্রকৃত ব্যবহার নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। অনেকের অভিযোগ, এসব ঋণের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব, ভুয়া কাগজপত্র এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছিল।

ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে যেসব প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হয়েছে: ইউনিয়ন ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার ইচ্ছাকৃত খেলাপি গ্রাহকদের মধ্যে বিএলইউ ইন্টারন্যাশনালের ৯৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা, চৌধুরী ট্রেডার্সের ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, হরিজন এন্টারপ্রাইজের ৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, কর্ণফুলী পোলট্রি অ্যান্ড ডেইরি ফার্মের ৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, মার্স টেক্সটাইলের ৯৪ লাখ টাকা এবং এস আলম অ্যান্ড কোম্পানির ১১৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে। একই শাখার আওতাধীন বদরখালি উপশাখার গ্রাহক ডে টু ডে সুপার মার্টের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৯ লাখ টাকা।

বনানী শাখার বড় খেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে র্যাঙ্ক ডেনিম টেক্সটাইল মিল (৩৫১ কোটি ৮০ লাখ), র্যাঙ্ক সোহেল কম্পোজিট টেক্সটাইল মিল (২০০ কোটি), রোট অ্যাপারেলস (১০৯ কোটি ৫২ লাখ) এবং রোট ট্রেডিং করপোরেশন (১১১ কোটি ৫৭ লাখ)। কক্সবাজার শাখার গ্রাহক আলম ট্রেডিং অ্যান্ড বিজনেস হাউসের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬ কোটি ৪ লাখ টাকা। দিলকুশা শাখার খেলাপি গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে: অ্যাডভান্স ট্রেডিং (৬০ কোটি ৩২ লাখ), আকিজ মোটর (৪ কোটি ৪৩ লাখ), আল ফালাহ ট্রেডার্স (৬২ কোটি ২ লাখ), ব্লুবেরি ইন্টারন্যাশনাল (৭৬ কোটি ৪০ লাখ), চৌধুরী ট্রেড সেন্টার (৮৫ কোটি ৪৪ লাখ), সিটিজেন ট্রেড হাউস (৩৫ কোটি ৩৮ লাখ), ফিফু ট্রেড কর্নার (৬১ কোটি ৩৫ লাখ), এম এম করপোরেশন (৭৩ কোটি ৪২ লাখ),

মজিদ ট্রেডার্স (৫৮ কোটি ৩২ লাখ), মোস্তাক ট্রেডার্স (৫৪ কোটি ৬৬ লাখ), নাবা অ্যাপারেলস (৩ কোটি ৪৯ লাখ), ন্যাশনাল ট্রেডিং করপোরেশন (৭ কোটি ৭৯ লাখ), প্রাইম বিজনেস হাউস (৩ কোটি ৪০ লাখ), সোলেমান এন্টারপ্রাইজ (৩৯ কোটি ৪০ লাখ) এবং স্ট্যান্ডার্ড পেসিফিক করপোরেশন (৪৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা)। ফটিকছড়ি শাখার গ্রাহক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েটের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪১ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

গুলশান শাখার খেলাপি গ্রাহকরা হলেন আহসান আজাদ (১০২ কোটি ৯৮ লাখ), অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার (১১১ কোটি ১৬ লাখ), আজাদ অটোমোবাইলস (২৪ কোটি ৬০ লাখ), বেঙ্গল অ্যান্ড এম সার্ভিস (১৮৫ কোটি ৬৯ লাখ), গোল্ড স্টার ট্রেডিং হাউস (৫ কোটি ২১ লাখ), গ্রিন ট্রেড (১৯ কোটি ৪৫ লাখ), জিম অ্যান্ড জেসি কম্পোজিট লিমিটেড (২২ কোটি ৮২ লাখ), মমতাজুল হক (৭৩ কোটি ১৮ লাখ), পাওয়ারপ্যাক মতিয়ারা জামালপুর পাওয়ার প্লান্ট (১৮৫ কোটি ৮৭ লাখ), আরএমএস গার্মেন্টস (২০ কোটি ৪৭ লাখ), এসবি ট্রেডার্স (২৮ কোটি ৪১ লাখ) এবং সুঘু ইন্টারন্যাশনাল (৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা)।

হাটখোলা শাখার খেলাপিদের মধ্যে আছে কন্টিনেন্টাল বিজনেস হাউস (৯৪ কোটি ১৪ লাখ), ইসলাম ট্রেডার্স (৯৫ কোটি ৭ লাখ), এম তমিজউদ্দিন (৯৯ কোটি ৭ লাখ), নিউ স্টার বিজনেস টেক (৪০ কোটি ১৩ লাখ), নিউ ভিশন ট্রেডার্স (১ কোটি ৮৭ লাখ) এবং ভিউ করপোরেশন (৪২ কোটি ৩০ লাখ টাকা)। কদমতলী শাখার খেলাপি গ্রাহকরা হলেন ডাইমেনশন করপোরেশন (৩২ কোটি ২৫ লাখ), জুপিটার ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (৪৯ কোটি ১৩ লাখ) এবং নর্থ লিঙ্ক (৪৬ কোটি ১৪ লাখ)।

কেরানিহাট শাখার গ্রাহক আব্দুল আউয়াল অ্যান্ড সন্সের খেলাপি ঋণ ১২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। রানিহাট শাখার গ্রাহক আমিন ট্রেডার্সের রয়েছে ১৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ। খুলনা শাখার গ্রাহক সঞ্জয় ট্রেডার্স (৮৫ লাখ) এবং ঐশী পোলট্রি ফার্ম (৩০ লাখ) খেলাপি ঋণে রয়েছে। কবিরহাট শাখার হার্ট অব মদিনা ট্রেডার্সের খেলাপি ঋণ ২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। লালদীঘি শাখার গ্রাহক লিডিং লিঙ্ক (৩০ কোটি ৫২ লাখ) এবং স্পটলাইট করপোরেশন (২০ কোটি ৩ লাখ) খেলাপি ঋণে আছে।

লিচুবাগ শাখার আবু হানিফের খেলাপি ঋণ ২০ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খেলাপির মধ্যে রয়েছে ইনভেনশন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (৩৮ কোটি ৯৩ লাখ), মনপুরা এগ্রো লিমিটেড (৩৪ কোটি ৫০ লাখ), কৃষিবিদ প্রপার্টিজ লিমিটেড (৩ কোটি ৮৩ লাখ), রোডস ডেভলপমেন্ট লিমিটেড (৬ কোটি ৭১ লাখ), জনতা এন্টারপ্রাইজ (৩ কোটি ৪৭ লাখ), সেকান্দর ট্রেডিং হাউস (৫ কোটি ৫৮ লাখ),

মেসার্স মুনিয়া ট্রেডার্স (৪৫ লাখ), ইলেকট্রিক প্লাস (৩ কোটি), মান্নান ট্রেডার্স (১০ কোটি ৮৭ লাখ), মর্ডান বিজনেস হাউস (২১ কোটি), বড় আউলিয়া ফার্নিচার মার্ট (১৫ লাখ), হারমোনিয়াজ বিজনেস হাউস (২০ কোটি ৯০ লাখ), নাবির ট্রেডিং করপোরেশন (১০ কোটি ৩২ লাখ), হোয়াইট হার্ট ইন্টারন্যাশনাল (৭ কোটি ৭৪ লাখ), আরাবি ট্রেডার্স (৬৬ লাখ) এবং হানিফ ইন্টারন্যাশনাল (১ কোটি ২৯ লাখ টাকা)।

সবচেয়ে বড় খেলাপিদের মধ্যে রয়েছে অগ্রণী ট্রেডিং (১৬৫ কোটি ৩৩ লাখ), এলাইভ হোল্ডিং লিমিটেড (১০৭ কোটি ৭২ লাখ), এলাইন্স ইন্টারন্যাশনাল (১৫৫ কোটি ৯২ লাখ), এশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল (১৪৩ কোটি ৬৫ লাখ), ব্রডওয়ে ট্রেডিং কর্নার (৮৭ কোটি ১৭ লাখ), ফেমাস ট্রেডিং করপোরেশন (১৯৩ কোটি ৬৩ লাখ), হায়াত ট্রেডিং (৭৮ কোটি ৯২ লাখ), ইমেজ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (১৩৩ কোটি ৬৫ লাখ), ইনডেক্স ট্রেডিং কর্নার (৮৮ কোটি ৫১ লাখ), ইন্সাল্ট করপোরেশন (৫৫ কোটি ২৮ লাখ), ইন্টেলেক্সুয়াল করপোরেশন (১৩৮ কোটি ৯৪ লাখ), এমএম করপোরেশন (৮০ কোটি ৫ লাখ), এমটি ট্রেনিং কোম্পানি (৯৩ কোটি ৫ লাখ),

মালেক এন্টারপ্রাইজ (৯৮ কোটি ৩৬ লাখ), মামসু ল্যান্ড অ্যান্ড প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (১১২ কোটি ৫১ লাখ), মাসুদ ট্রেডিং (১৪৮ কোটি ৯৬ লাখ), মেক্সিমো করপোরেশন (১৭৯ কোটি ৪৮ লাখ), মেঘনা কনস্ট্রাকশন (৭০ কোটি ৫৬ লাখ), মুকিম ট্রেড এজেন্সি (১৬৫ কোটি ৪৬ লাখ), নিপটল ট্রেডিং কোম্পানি (৮৩ কোটি), নর্থপুল ইন্টারন্যাশনাল (১০৪ কোটি ৭৩ লাখ), নুপটম ট্রেডিং (৬২ কোটি ১৯ লাখ), প্যারাগন বিজনেস হাউস (৫৬ কোটি ৪ লাখ),

প্রাইম ট্রেডিং হাউস (৯৩ কোটি ৪২ লাখ), প্রপার্টি সলিউশন (১১৪ কোটি ৬৩ লাখ), রেডিয়েন্স ট্রেডিং (৫৪ কোটি ৭৯ লাখ), রফিক করপোরেশন (১১৭ কোটি ২৪ লাখ), রেপ তাস হাউসিং অ্যান্ড বিল্ডার্স (৬৯ কোটি ৮ লাখ), সেভ সিকিউরিটি অ্যান্ড ট্রেড সেন্টার (১৮৯ কোটি ২৪ লাখ), তাহের ট্রেনিং করপোরেশন (১২৩ কোটি ৪৪ লাখ), টিপসকো ইন্টারন্যাশনাল (৫৭ কোটি ৩২ লাখ),

ট্র্যাডিশনাল বিজনেস অ্যান্ড কমার্স (৬৮ কোটি ৮২ লাখ), উদয়ন কনস্ট্রাকশন (১০০ কোটি ৯৪ লাখ), ইউনিভার্সাল ট্রেডিং (১২০ কোটি ৬৩ লাখ), নিউ ফিল্ডএক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড ট্রেড (৯ কোটি ১৫ লাখ), মায়ের দোয়া ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ (১১ লাখ), মনসুন এন্টারপ্রাইজ (২১ কোটি ৪০ লাখ), সানফ্লাওয়ার ট্রেডিং হাউস (৮ কোটি ২০ লাখ), রহমান মেশিনারিজ (২৪ লাখ), রঞ্জন ট্রেডার্স (২৫ লাখ) এবং খান ফুড অ্যান্ড এগ্রো কোম্পানি (৬২ লাখ টাকা)।