টানা দরপতন থেকে বেরিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিচ্ছে পুঁজিবাজার, বাড়ছে লেনদেন
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের নাম মাত্রা উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে সূচকের কিছুটা উত্থান হলেও বাজার নিয়ে আতঙ্ক কাটছে না বিনিয়োগকারীদের। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মুল চ্যালেঞ্জ।
কারণ দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুঁজিবাজার সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুনর্গঠন করা হয়। তবে পুঁজিবাজারে সংস্কারের উদ্যোগে নতুন আশায় স্বপ্ন বুনতে থাকেন বিনিয়োগকারীরা। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রায় ১৪ মাস অতিবাহিত হতে চললেও বাজারে স্থিতিশীলতা আসেনি।
তবে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বাজার ভাল হবে এমন প্রত্যাশা ছিলো লাখ লাখ বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিতে বিশাল ফারাক। ফলে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগে সাহস পাচ্ছেন না। এছাড়া নতুন বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হচ্ছে না। যার ফলে আস্থা সংকটে কাটছে পুঁজিবাজার। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট দূরীকরণের সুশাসনের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন একাধিক বিনিয়োগকারীরা।
মুলত নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হতে যাচ্ছে এমন খবরে পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছিল। কিন্তু সরকার গঠনের পর থেকে আবার তা কমতে থাকে। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন নিজে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি। তারা বাজার বিশ্লেষণ করে ঠিক পদক্ষেপও নেয়নি।
আস্থার সংকটে ভালো শেয়ারেরও তাই দর কমছে। সরকার পতন, নতুন সরকার গঠন এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় পুঁজিবাজারে বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। এ ছাড়া পুঁজিবাজারে কারসাজির সঙ্গে জড়িত অনেকের বিরুদ্ধে বর্তমান কমিশন ব্যবস্থা নেয়ায় নতুন করে বড় বিনিয়োগ হচ্ছে না। আগের বিনিয়োগকারীরাও ভয়ে সরে যাচ্ছেন বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে লভ্যাংশ মৌসুমে শেয়ারে ভর করে পুঁজিবাজারে ঘুরে দাঁড়ানোর পূর্বাভাস দিচ্ছে। আশা করা যায় নতুন মাসের শুরুতে ঘুরে দাঁড়াবো পুঁজিবাজার। বিশেষ করে হঠাৎ সূচকের এই উত্থানকে ‘লভ্যাংশ মৌসুমে বাজারের প্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তন’ হিসেবে দেখছেন বাজার বিশ্লেষকরা। কারণ গত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক কোম্পানি ভালো ডিভিডেন্ড দিয়েছে। এতে কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদেও আস্থা বাড়বে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তাছাড়া গত এক মাসের দরপতনে অধিকাংশ শেয়ারের দাম তলানিতে চলে এসেছে। গত ৩৩ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৬১ পয়েন্ট দরপতন হয়েছে। এর ফলে অধিকাংশ শেয়ারের দাম ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ দরপতন হয়েছে। ফলে হঠাৎ সূচকের এই উত্থান ঘুরে দাঁড়ানো ও লেনদেনের বাড়ার আভাস দিচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর ও টাকার পরিমানে লেনদেন লেনদেন। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৯২ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৭৪ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৮২ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৪ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৭৫ টির, দর কমেছে ১৫৩ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৬ টির। ডিএসইতে ৫০৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৫২ কোটি ২৭ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৫১ কোটি ৩৭ লাখ টাকার ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ২৭৩ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৯৪ টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে ৯৪ টির দর বেড়েছে, কমেছে ৮১ টির এবং ১৯ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

