ড্যাফোডিল কম্পিউটারের ডিভিডেন্ড না দিয়ে প্রতারণার অভিযোগ
                শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের কোম্পানি ড্যাফোডিল কম্পিউটার লিমিটেড বিনিয়োগকারীদের নি:স্ব করেছে। বিনিয়োগকারীদের টাকায় ব্যবসা করলেও সমাপ্ত অর্থবছর শেষে বিনিয়োগকারীদের কোন লভ্যাংশ দিচ্ছে না। অথচ কোম্পানিটি ঠিকই ব্যবসা করেছে। কোম্পানির এমন আচরন নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ড্যাফোডিল কম্পিউটার পরিচালনা পর্ষদ ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখে সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি ০.১৬ টাকা হিসাবে ৮০ লাখ টাকার নিট মুনাফা হয়েছে। এর বিপরীতে কোম্পানিটির পর্ষদ কোন লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। এর মাধ্যমে মুনাফার শতভাগ সংরক্ষিত মুনাফায় (রিটেইন আর্নিংস) রাখা হবে। এর ফলে ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স শাস্তির আওতায় আসছে। এছাড়া মুনাফা থাকা স্বত্বেও নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা দিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের সাথে প্রতারণা করছে কোম্পানিটি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ বঞ্চিত করে ৭০ শতাংশের বেশি মুনাফা সংরক্ষিত মুনাফায় (রিটেইন আর্নিংস) রাখা হবে। যে কারনে কোম্পানিটিকে রেখে দেওয়া ওই মুনাফার উপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের অনুমোদিত বাজেট অনুযায়ি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে মুনাফার কমপক্ষে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ আকারে শেয়ারহোল্ডারদেরকে দিতে হবে। যদি ৩০ শতাংশের কম দেওয়া হয়, তাহলে রিটেইন আর্নিংসে স্থানান্তর করা পুরো অংশ বা কোম্পানিতে রেখে দেওয়া পুরোটার উপরে ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করার বিধান রাখা হয়।
মুনাফার ৭০ শতাংশের বেশি রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্তের ফলে রিটেইন আর্নিংসে রাখতে চাওয়া ৮০ লাখ টাকার উপরে ১০ শতাংশ হারে অতিরিক্ত ৮ লাখ টাকার অতিরিক্ত কর দিতে হবে ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সকে। ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স আগের বছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৪ শতাংশ মুনাফা কমেছে। এ কোম্পানিটির আগের অর্থবছরের ০.২১ টাকার শেয়ারপ্রতি মুনাফা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে হয়েছে ০.১৬ টাকা। কোম্পানিটি মুনাফা থাকা স্বত্বেও নো ডিভডেন্ড ঘোষণা করায় বিনিয়োগকারীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে ঘোষিত ডিভিডেন্ডের পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে একাধিক বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে ড্যাফোডিল কম্পিউটার ভালো মৌলভিত্তি কোম্পানি হওয়া স্বত্বেও নো ডিভিডেন্ড ঘোঘণা করায় সবার মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন সরকারসহ নীতি নির্ধারকীমহল যেখানে পুঁজিবাজার ভাল করার জন্য মরিয়া হয়ে কাজ করছে, সেখানে ড্যাফোডিল কম্পিউটার মুনাফা থাকা স্বত্বেও কিভাবে নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে। এ কোম্পানির বিষয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিশেষ কমিটি গঠনের মাঝে তদন্ত করা দরকার। তেমনি কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের শাস্তির দাবী জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
সূত্র অনুসারে, সর্বশেষ বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১৬ পয়সা । আগের বছর শেয়ার প্রতি আয় হয়েছিল ২১ পয়সা। গত বছর কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ৩ টাকা ১৮ পয়সা। আগের বছর ক্যাশ ফ্লো ছিল ২ টাকা ৩০ পয়সা। গত ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১২ টাকা ৯০ পয়সা। আগামী ২৯ ডিসেম্বর, সকাল ১০ টায় ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ নভেম্বর।
সম্প্রতি ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স লিমিটেডের অবৈধ শেয়ার ইস্যু করার বিষয়ে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের ২৭তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) বেশিরভাগ শেয়ারহোল্ডারের মতামতকে মূল্যায়ন না করে অবৈধভাবে কোম্পানির পরিচালকদের আত্মীয়-স্বজনদের নামে নতুন ৪ কোটি ৬৭ লাখ শেয়ার ১০ টাকা ফেস ভ্যালুতে ইস্যু করার এজেন্ডা পাস করা হয়। বিএসইসির তদন্ত কমিটি এ অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখবে।
কী উদ্দেশ্যে কোম্পানির পরিচালকদের আত্মীয়-স্বজনদের নামে এত বড় অঙ্কের শেয়ার ইস্যু করার এজেন্ডা পাস করা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি। কোম্পানির বোর্ড ড্যাফোডিল পরিবারের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তার বিপরীতে শেয়ারে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা করে ৪.৬৭ কোটি শেয়ার ইস্যু করার অনুমোদন দেয় ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের পরিচালনা পর্ষদ, যা বিএসইসির অনুমোদন সাপেক্ষে করার কথা ছিল। তবে এর আগে কোম্পানিকে এ বিষয়ে এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোম্পানি তা করেনি। ফলে অবৈধভাবে শেয়ার ইস্যু করা হয়েছে বলে মনে করছেন শেয়ারহোল্ডাররা।
ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৬ সালে। বর্তমানে কোম্পানিটি ‘বি’ ক্যাটেগরিতে অবস্থান করছে। এ কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ৪৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা। সে হিসাবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার ৪ কোটি ৯৯ লাখ ১২ হাজার ২৬২টি।
২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তাদের হাতে ৪১.৪০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৬.১২ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.০৮ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ২২.৪০ শতাংশ শেয়ার আছে। এ কোম্পানির স্বল্পমেয়াদি ঋণ আছে ২৯ কোটি ১১ লাখ টাকা।
ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স ড্যাফোডিল পরিবারের একটি প্রতিষ্ঠান। কোম্পানিটি আইটি সলিউশন, কম্পিউটার অ্যাসেম্বলিং এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের ব্যবসা করে। তাছাড়া ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স লিমিটেডের প্রতিনিধিত্ব করা এমডি সবুর খান ই-কমার্স খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সদস্য।
তিনি বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান। বিগত সরকারের একডজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সবুর খানের। তাদের সুপারিশে তিনি শিক্ষাব্যবসা, টেস্টেড সফটওয়্যার, মেডিকেল সফটওয়্যার, ফার্মাসি ম্যানেজমেন্ট এবং ইআরপি সফটওয়্যারের একচেটিয়া ব্যবসা করেন। তার কোম্পানির বিরুদ্ধে পাইরেটেড সফটওয়্যার সরবরাহেরও অভিযোগ রয়েছে।

