চলতি সপ্তাহে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস, ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিশ্ব পুঁজিবাজার
                শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বিশ্ব পুঁজিবাজারে দরপতন থেমেছে। গত সপ্তাহের শুরুর দিকে তীব্র পতনের ঝাঁকুনি সামলে কিছুটা উঠে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জাপানসহ উন্নত দেশগুলোর বাজারে সূচক বেড়েছে। তাতে একটু স্বস্তির বাতাস বয়ে যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রধান সব মূল্যসূচক বেড়েছে। ফলে বিশ্ব পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ফলে চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
এদিকে সপ্তাহজুড়ে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শেয়ার ক্রয়ের চেয়ে বিক্রির চাপে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিদায়ী সপ্তাহে সব ধরনের মূল্য সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে বিক্রির চাপের কারনে ডিএসইতে টাকার অংকে লেনদেন বেড়েছে। আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইতে ৩৩.০২ শতাংশ লেনদেন বেড়েছে। এর ফলে চলতি সপ্তাহের প্রথম দুদিন সূচক বৃদ্ধির পর মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার টানা পতন হয়েছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে বাজার মূলধনের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। মুলত মুদ্রার অবমূল্যায়ন, চলতি হিসাবের ঘাটতি ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। পাশাপাশি কঠোর অর্থনৈতিক নীতিগত সিদ্ধান্তের আশঙ্কাও বিরাজ করছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
ফলে বিনিয়োগকারীদের মাঝে শেয়ার বিক্রি করে দেয়ার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। এর প্রভাবে গত সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স ১ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। এ সময়ে এক্সচেঞ্জটিতে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
ঈদের ছুটির পর শুধু বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়। যে কারণে সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে তার আগের সপ্তাহ অর্থাৎ ২৪ থেকে ২৮ এপ্রিল পাঁচ কার্যদিবসের লেনদেন হিসাব করে তুলনা করেছে ডিএসই। বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইতে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে ২৪ থেকে ২৮ এপ্রিল পাঁচ কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ওই সপ্তাহের তুলনায় এক্সচেঞ্জটির লেনদেন বেড়েছে ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা বা ৩৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।
গত সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটিতে দৈনিক গড়ে ১ হাজার ৭৯ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে ২৮ এপ্রিল সমাপ্ত সপ্তাহে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৮১১ কোটি টাকা। গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এপ্রিলের শেষ সপ্তাহের তুলনায় ৯০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ কমে ৬ হাজার ৫৬৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৬ হাজার ৬৫৫ পয়েন্টে। সূচকের পতনে গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল সিটি ব্যাংক, বেক্সিমকো লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, গ্রামীণফোন, লাফার্জহোলসিম ও আইএফআইসি ব্যাংক শেয়ারের।
ডিএসইর অন্য সূচকের মধ্যে নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ কমেছে ৫৩ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১৯ শতাংশ। গত সপ্তাহ শেষে সূচকটি কমে ২ হাজার ৪০৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ শেষে যা ছিল ২ হাজার ৪৬১ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ওই সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ১৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ কমে ১ হাজার ৪৩২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ২৮ এপ্রিলে সমাপ্ত সপ্তাহে যা ছিল ১ হাজার ৪৪৭ পয়েন্টে। গত সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটির খাতভিত্তিক লেনদেনে শীর্ষে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত।
ডিএসইর মোট লেনদেনের ১২ শতাংশ ছিল খাতটির দখলে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিবিধ খাতের দখলে ছিল মোট লেনদেনের ১১ দশমিক ৭ শতাংশ। ১১ দশমিক ১ শতাংশ নিয়ে লেনদেনের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বস্ত্র খাত। ১১ শতাংশ দখলে নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে প্রকৌশল খাত। পরের অবস্থানে থাকা আর্থিক খাতের দখলে ছিল মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের দখলে ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
ডিএসইতে গত সপ্তাহে অধিকাংশ খাতে ঋণাত্মক রিটার্ন এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক রিটার্ন ছিল পেপার খাতে, ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। ৪ দশমিক ৯ শতাংশ নিয়ে পরের অবস্থানে রয়েছে ভ্রমণ খাত। অন্যদিকে ইতিবাচক রিটার্নে গত সপ্তাহে শীর্ষ ছিল সিরামিক খাত। এ খাত থেকে রিটার্ন এসেছে ১১ দশমিক ১ শতাংশ।
এছাড়া ১ দশমিক ৭ শতাংশ ধনাত্মক রিটার্ন এসেছে সেবা খাত থেকে। গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকায়। যেখানে আগের সপ্তাহের শুরুতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা।
ডিএসইতে গত সপ্তাহে মোট ৩৯৩টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২৩টির। কমেছে ২২৭টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ৩৫টির। লেনদেন হয়নি ৮টির।
দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহে প্রায় ১৬৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এ সময়ে এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ৩৫৩টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৮টির, কমেছে ১৮৩টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টির।

