শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বিপর্যয় সামলে পুঁজিবাজারের টানা উত্থান খানিকটা আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু সেই উত্থান টেকসই হয়নি। গত কয়েক সপ্তাহে বাজারের অস্বাভাবিক আচরণ ফের শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উত্থান-পতন পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক নিয়ম হলেও সাম্প্রতিক পরিস্থিতিকে কোনোভাবেই স্বাভাবিক বলা যাবে না।

একদিন লাফিয়ে উঠলেও পরদিনই ধপাস করে পড়ে যাচ্ছে দর। এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন বড় খেলোয়াড়রা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নানা পদক্ষেপের কথা বললেও কার্যত সিন্ডিকেটের লাগাম টানতে পারেনি।

সম্প্রতি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় কোস্পানির শেয়ারে কারসাজি হয়েছে কি না তা খুঁজতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। প্রাথমিকভাবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৯টি কোম্পানির শেয়ারে কারসাজির তথ্য পেয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গঠিত তদন্ত কমিটি।

এখন অধিকতর তদন্ত চলছে। বিষয়টি নিখুঁতভাবে যাচাই-বাছাই চলছে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শুনানি করা হবে। এসংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর থেকে বাজার টানা দরপতন ঘটছে। এদিকে শেয়ারবাজার নিয়ে প্রভাবশালী খেলোয়াড়দের এই কারসাজিরই খেসারত দিতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। আর কারসাজির হোতারা কামিয়ে নিচ্ছে শত শত কোটি টাকা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বাভাবিক গতিতে চলছে না পুঁজিবাজার। কারসাজি হচ্ছে। যার পরিণতিতে হুট করে বাজারের অস্বাভাবিক উত্থান-পতন। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। বিগত সময়ে যেভাবে পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে, সেখানে হঠাৎ করে সূচকের টানা পতন অস্বাভাবিক। বিনিয়োগকারীদের ধারণা ছিল, সূচক ৭ হাজার উপরের থাকবে। কিন্তু সেই ধারনা ভেঙ্গে ৭ হাজাা ছু ছু অবস্থান করছে।

পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, উত্থান-পতন পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা সহজে বিচলতি হয়ে পড়েন। ফলে পেনিক সেল বেড়ে যায়। তাই পতন নেমে আসে। বর্তমানে বাজার পরিস্থিতে বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, গত কয়েকদিনে বাজার একটানা যে হারে কারেকশন হয়েছে এখন বিনিয়োগের উপযুক্ত সময়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন থাকবে। তবে একটানা বাজার উত্থান ভাল নয়, তেমনি বাজার একটানা পতন কাম্য নয়। আশা করি বাজার এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াবো। তাই বিনিয়োগকারীদের লোকসানে শেয়ার বিক্রি উচিত নয়।

একই বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজারে এখন বেশিরভাগ শেয়ারই ক্রয়যোগ্য। তারপর বাজারের পতন একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। এর সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের মানিয়ে নেয়া জরুরি। বিনিয়োগকারীরা যদি কোনো কারণে ভীত হয়ে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন, তাহলে এমনিতেই পতন নেমে আসে।

এদিকে সাত কার্যদিবস পর গত বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে উত্থানে ফিরলেও আজ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস আবার বড় পতন হয়েছে। এদিন পুঁজিবাজারের সব সূচক কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর। তবে টাকার পরিমাণে লেনদেন আগের কার্যদিবস থেকে বেড়েছে।

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭০.৫২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ০৫.৭০ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৩০.৩৭ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১.০২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৪৮৭.৭৮ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৬৯৮.৩১ পয়েন্টে।

ডিএসইতে আজ এক হাজার ৪৭০ কোটি ৬৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিন থেকে ১৫৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বেশি। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৩১০ কোটি ৯৭ লাখ টাকার। ডিএসইতে আজ ৩৭৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৫৭টির বা ১৫.২০ শতাংশের, শেয়ার দর কমেছে ২৯২টির বা ৭৭.৮৭ শতাংশের এবং ২৬টির বা ৬.৯৩ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৪১.৫৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৫৫১.৭৭ পয়েন্টে। সিএসইতে আজ ২৮৮টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৮টির দর বেড়েছে, কমেছে ২১০টির আর ২০টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৪৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।