শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত জীবন বীমা খাতের কোম্পানি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে অস্বাভাবিক আদেশ দেয়ার বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখতে এক সদস্যের ইন্সপেকশন কমিটি গঠন করেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেই সঙ্গে লভ্যাংশ ঘোষণার পর প্রথম কার্যদিবসেই শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার বিষয়টিও ক্ষতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এতে সোমবারের রেকর্ড দাম বাড়ার পরের দিনই মঙ্গলবার সোনালী লাইফের শেয়ার দরপতনের তালিকায় নাম লিখিয়েছে।

গত ১ জুলাই থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়া সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ ২০২০ সালের সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সঙ্গে ২০২১ সালের প্রথম তিন মাসের জন্য দুই শতাংশ নগদ অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে এই ঘোষণা দেয়া হয়।

লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে সোমবার কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়া বা কমার ক্ষেত্রে কোনো সার্কিট ব্রেকার ছিল না। এই সুযোগে লেনদেন শুরুর আগেই এক হাজার ৫০ টাকা করে কোম্পানিটির শেয়ার কেনার প্রস্তাব আসে। বিপরীতে বিক্রির প্রস্তাব আসে ১০ পয়সা করে। অবশ্য ক্রয় ও বিক্রয়ের এই অস্বাভাবিক দাম পরবর্তীতে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।

তবে শেয়ার ক্রয় ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এই অস্বাভাবিক দাম প্রস্তাবের বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, সোমবার সোনালী লাইফের শেয়ার ক্রয় ও বিক্রয়ের অস্বাভাবিক দাম প্রস্তাবের বিষয়টি কমিশন ক্ষতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে এক সদস্যের একটি ইনস্পেকশন কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে অস্বাভাবিক দামে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের প্রস্তাব আসার পাশাপাশি সোনালী লাইফের শেয়ার দাম বাড়ার ক্ষেত্রেও রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। ১৬ টাকা থেকে একদিনে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৭০ টাকা ৫০ পয়সা বা ৪৪০ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়ে ৮৬ টাকা ৫০ পয়সায় থিতু হয়। শেয়ারবাজারের ইতিহাসে কোনো কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণার পর একদিনে এমন দাম বাড়ার আর কোনো রেকর্ড নেই।

শেয়ারের এই দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে ডিএসইর একাধিক সদস্য বলেন, লভ্যাংশ ঘোষণার পর সোনালী লাইফের শেয়ার দাম যে হারে বেড়েছে তা স্বাভাবিক হতে পারে না। এর পিছনে কারসাজি থাকতে পারে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির উচিত বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, শেয়ারের দাম নির্ধারণ করা কমিশনের কাজ না। যদি সোনালী লাইফের শেয়ারের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক কিছু থাকে, তাহলে কমিশন তা ক্ষতিয়ে দেখে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এদিকে সোনালী লাইফ নিয়ে বিএসইসি তদন্ত করার উদ্যোগ নেয়ায় রেকর্ড দাম বাড়ার পরের দিন মঙ্গলবার কোম্পানিটি দরপতনের তালিকায় নাম লেখায়। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দাম ৫ টাকা ৫০ পয়সা বা ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ কমে ৮১ টাকায় নেমে এসেছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের গতি। আগের দিন কোম্পানিটির ৫১ কোটি ৫২ লাখ ৪৭ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হলেও মঙ্গলবার তা কমে ১৭ কোটি ৫১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় নেমে এসেছে।

প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) নতুন নিয়মে প্রথম কোম্পানি হিসেবে পুঁজিবাজারে আসা সোনালী লাইফের আইপিওতে ১০ হাজার টাকার আবেদন করা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ১৭টি শেয়ার বরাদ্দ পান। একইভাবে প্রবাসী (এনআরবি) বিনিয়োগকারীরা ৩৩টি এবং ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা ২২টি করে শেয়ার পান।

র্যানডম পদ্ধতিতে বিনিয়োগকারীদের এভাবে শেয়ার বরাদ্দ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে কিছু সাধারণ বিনিয়োগকারী ১৮টি এবং কিছু প্রবাসী বিনিয়োগকারী ৩৪টি করে শেয়ার পান। এছাড়াও যারা ২০ হাজার টাকা আবেদন করেন তারা ৩৪টি শেয়ার, যারা ৩০ হাজার টাকার আবেদন করেন তারা ৫১টি, যারা ৪০ হাজার টাকার আবেদন করেন তারা ৬৮টি এবং যারা ৫০ হাজার টাকার আবেদন করেন তারা ৮৫টি করে শেয়ার পান।

একইভাবে যেসব প্রবাসী বিনিয়োগকারী ২০ হাজার টাকা আবেদন করেন তারা ৬৬টি শেয়ার, যারা ৩০ হাজার টাকার আবেদন করেন তারা ৯৯টি, যারা ৪০ হাজার টাকার আবেদন করেন তারা ১৩২টি এবং যারা ৫০ হাজার টাকার আবেদন করেন তারা ১৬৫টি শেয়ার পান।

অপরদিকে যেসব ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী ২০ হাজার টাকা আবেদন করেন তারা ৪৪টি, যারা ৩০ হাজার টাকার আবেদন করেন তারা ৬৬টি, যারা ৪০ হাজার টাকার আবেদন করেন তারা ৮৮টি এবং যারা ৫০ হাজার টাকার আবেদন করেন তারা ১১০টি শেয়ার পান। আইপিওতে বিনিয়োগকারীরা সীমিত সংখ্যক শেয়ার পাওয়ার কারণে লেনদেন শুরুর পর সোমবারের আগে প্রতি কার্যদিবসে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ বাড়ে।

পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে অনুমোদন নিয়ে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে এক কোটি ৯০ লাখ সাধারণ শেয়ার ছেড়ে ১৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। এজন্য প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১০ টাকা। আইপিওর মাধ্যমে সংগ্রহ করা এই অর্থ কোম্পানিটি সরকারি ট্রেজারি বন্ড, ফিক্সড ডিপোজিট, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ও আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করবে।