শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: অস্থিরতা নয়, নতুন বছরে একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের প্রত্যাশা করেন বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে বাংলা বর্ষের শেষ দিন ছিল চাঙ্গা পুঁজিবাজার। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা এক কার্যদিবস নয়, নতুন বছরের প্রতিটি কার্যদিবস পুঁজিবাজার স্থিতিশীল থাকুক। কারন বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে ধারাবাহিক স্থিতিশীলতা জরুরী। কারন বাজার কয়েক বার স্থিতিশীলতার আভাস দিলেও শেষ পর্যন্ত বাজার টিকেনি। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা, নতুন বছরে তারা একটি স্থিতিশীল বাজারের পরিবেশ ফিরে পাবেন।

অন্যদিকে নতুন বছরে পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি আরও ভালো হবে বলে প্রত্যাশা করছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃপক্ষ। তারা জানান, চলতি বছর বাজার নিয়ে আরও কাজ করা হবে। এতে সম্প্রসারিত হবে পুঁজিবাজার। বাড়বে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ। এতে বাজারে স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হবে।

বাজার বিশ্লেষণ ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, গত বছর (বাংলা ১৪২৭) নানা চরাই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে। বছরজুড়ে বেশিরভাগ সময়ই বাজারের নাজুক পরিস্থিতি দেখা গেছে। পাশাপাশি কভিড-১৯-এর কারণে এ সময় পুঁজিবাজার ৬৬ দিন বন্ধ থাকে। লেনদেনও কমে যায়। ফলে বাজার ভালো হবে, এমন প্রত্যাশা নিয়ে যারা বাজারে এসেছিলেন, বছর শেষে তাদের বেশিরভাগ লোকসানের কাতারে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। এই বিনিয়োগকারীরা জানান, গত বছর বাজারে যে পরিস্থিতি ছিল, এ বছরও যদি তেমন হয় তাহলে তাদের অবস্থা আরও খারাপ হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক ও সভাপতি আবদুর রাজ্জাক ও মিজান উর রশিদ চৌধুরী বলেন, অতীতের সব কষ্ট, বেদনা ভুলে নতুন বছরে নতুন কিছুই করছি। আমাদের প্রত্যাশা একটি স্থিতিশীল বাজার। তিনি বলেন, ‘আমরা গত বছরের মতো দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে ব্যবসা করতে চাই না। আমাদের স্বপ্ন একটি স্থিতিশীল ও শক্তিশালী পুঁজিবাজার। আমার বিশ্বাস, নতুন বছরে আমাদের এই প্রত্যাশা পূরণ ও স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগোলে ভবিষ্যৎ ভালো যাবে বলা যায়। তিনি বলেন, সামনের দিনে নতুন নতুন ভলো প্রতিষ্ঠান বাজারে আসবে। এতে বিনিয়োগকারীরা আশান্বিত হবেন। সুতরাং হতাশ হওয়ার কিছু নেই, চড়াই-উতরাইয়ের পর অবশ্যই সম্ভাবনা আসবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, প্রথমেই সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে লকডাউন নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই বরং এখনই দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের উপযুক্ত সময়। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে অনেকে আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার কারণে বেশকিছু মৌলভিত্তি সম্পন্ন শেয়ারের দামও অনেক নিচে নেমে গেছে। তাই ট্রেডিং না করে পুঁজিবাজারে এখনই বিনিয়োগ করার সময় যাচ্ছে। কমপক্ষে এক বছরের জন্য হলেও বিনিয়োগ করা উচিত। তাতে ভালো মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ কিন্তু ভালো মৌলভিত্তি শেয়ারে করা উচিত। বিশেষ করে অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে যেসব কোম্পানির অবস্থা মজবুত তাদের শেয়ারে বিনিয়োগ করলে আশানুরূপ গেইন করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসতে পারে। কারণ তাদের অ্যানালাইসিসের আলাদা উইং রয়েছে। তারা যদি বাজারে ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন শেয়ারে বিনিয়োগ করেন তাহলে বাজার টেকসই হবে।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, নতুন বছরে বিনিয়োগকারী সহ বাজারসংশ্লিষ্ট সকলের প্রত্যাশা একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার। তবে কোভিড-১৯ মহামারি যখন অর্থনীতিতে আঘাত হানে তখন পুঁজিবাজারের কিছু না কিছু ক্ষতি হয়েছে। ফের দ্বিতীয় ধাপে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এতে অর্থনীতির ক্ষতি হলে পুঁজিবাজারের ক্ষতি হবে। এ সময় যাদের অর্থ আছে তারা ইচ্ছা করলে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে করতে পারে। কারন দীর্ঘমেয়াদে ভাল শেয়ার বিনিয়োগ করলে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। বিশেষ করে কিছু কিছু ব্যাংক এ বছর যে ভালো ডিভিডেন্ড দিয়েছে সে সকল ব্যাংকে বিনিয়োগ করার বিষয় তিনি উৎসাহিত করেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করছি। আগামী বছর (চলতি) আমাদের কাজের পরিধি আরও বাড়বে। আমাদের কিছু পরিকল্পনা রয়েছে, যা নতুন বছরে বাস্তবায়িত হবে। এ বছর বাজারে নতুন বন্ডের সংখ্যাও বাড়বে। আইপিও মার্কেটও আরও বড় হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে আইপিওর সংখ্যা আরও বাড়বে। এতে প্রাইমারি মার্কেট ভালো হবে। পাশাপাশি নতুন বছরে পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়বে বলেও আমরা আশাবাদী। আর বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বাড়লে পুঁজিবাজার আরও শক্তিশালী ও সম্প্রসারিত হবে, যা আমাদের অর্থনীতির জন্যও ভালো হবে।’সুত্র: দেশ প্রতিক্ষণ