শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে টানা তিন কার্যদিবসে বড় উত্থানের পর বৃহস্পতিবার দেশের শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। এদিন বিমা খাতের কোম্পানি বাদে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব খাতের শেয়ারের দাম কমেছে। এতে ৮৩ পয়েন্ট প্রধান সূচক কমেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)। দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ২১৩ পয়েন্ট সূচক কমেছে। পাশাপাশি কমেছে বেশির ভাগ শেয়ারের দাম ও লেনদেন। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারে বিনিয়োগকারীরা ফোর্স সেল আতঙ্কে রয়েছেন বলে গুজব রটছে। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ হঠকারী সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

তবে বিনিয়োগকারীদের সাথে আলাপকালে বলেন, ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের ৬৬ কোম্পানির শেয়ারে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে যে সব বিনিয়োগকারীরা শেয়ার আটকে রাখছেন তারা এখন ফোর্স আতঙ্কে রয়েছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ ধরনের সিদ্ধান্ত হঠকারী বলে মনে করেন। তবে বিএসইসি বড্ড অসময়ে ফ্লোর প্রাইস তুলে নিয়েছে বলে অনেকে সমালোচনাও করেছেন। বাজারে যখন লেনদেন ১৫০০-২০০০ কোটি হচ্ছিল এবং সূচকে তেজিভাব ছিল, ওইসময় ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেওয়া যেত বলে অনেকে মনে করেন। আর এই মুহুর্তে তুলে নেওয়াটাকে খামখেয়ালি বলেই মনে করছেন অনেকে।

২০২০ সালে বিশ্বব্যপী শুরু হওয়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর পুঁজিবাজারে ভয়াবহ দরপতন দেখা দেয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে সাবেক কমিশন তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে দেয়। ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয় ২০২০ সালের ১৯ মার্চ। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিকে চালু রাখেন।

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফ্লোর প্রাইস নিয়ে বিতর্ক চলছিলো। বিশেষ করে কোম্পানির বোনাস লভ্যাংশ ও রাইট শেয়ার ইস্যুর পরও ফ্লোর প্রাইসের কারণে প্রকৃত দর সমন্বয় হচ্ছিলো না। এমন পরিস্থিতিতে ফ্লোর প্রাইস রিভিউ করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। তবে সমন্বয়ের পর যে দর নির্ধারণ হবে তা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির প্রাইস ফ্লোর হিসেবে বিবেচিত হবে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়নে প্রাথমিকভাবে বুধবার ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইসের নির্দেশনা প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। শিগগিরই আরও ৫০টি প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হবে এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা। তারা বাজারে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়িয়েছে আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন, যার প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। ফলে ঊর্ধ্বমুখী পুঁজিবাজারে হঠাৎ করে পতন নেমে এসেছে।

এ কাধিক বিনিয়োগকারীরা বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক ৬৬ কোম্পানির উপর থেকে ফ্লোর প্রাইস (সর্বনিম্ন দর সীমা) তুলে নেওয়ার নির্দেশনায় পুঁজিবাজারে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, সেটা বুধবারের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। যা সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে লেনদেনের শুরু থেকেই বাস্তবে প্রমাণ মিলে। যে সিদ্ধান্তের কারণে পুঁজিবাজার দেখল বড় পতন।

বাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত তৈরি করে ফ্লোর প্রাইস। যে কোম্পানি লেনদেন হওয়ার কথা, সেটি লেনদেন হচ্ছে না। আর হলেও সেই কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ছে না। এসব কোম্পানির শেয়ার যেসব বিনিয়োগকারীর কাছে আছে তারা পারছেন না শেয়ার বিক্রি করতে। কারণ যে দরে ফ্লোর প্রাইস ধরা হয়েছে সে দরে কেউ কিনতে চান না।’

তিনি বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়ায় সে কোম্পানিগুলোর এখন হয় শেয়ারের দর বাড়বে না হয় কমবে। বিনিয়োগকারীরা স্বাধীনভাবে তাদের শেয়ার লেনদেন করতে পারবে।’‘লকডাউনের মধ্যে টানা তিন দিন সূচকের উত্থান হয়েছে। এক-দুই দিন কমবে। এটাই স্বাভাবিক। ‘সূচক পতন হয়েছে বলে যেসব বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে তাদের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই।’

বৃহস্পতিবার লেনদেন শুরুর মাত্র ২০ মিনিটে ডিএসইর প্রধান সূচক কমে ৭৮ পয়েন্ট। পরের ২০ মিনিট শেয়ারের দাম কিছুটা বাড়লেও দিনের বাকি লেনদেন হয় শেয়ার বিক্রির চাপে। ফলে বড় পতনের মধ্যদিয়ে এদিনের লেনদেন শেষ হয়। দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক আগের দিনের চেয়ে ৮২ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২৫৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএস ৩০-সূচক কমে ২০ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক কমেছে ১৬ পয়েন্ট।

এদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৭২ কোটি ৮১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। যেখানে এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫৮২ কোটি ৫২ লাখ ২৯ হাজার টাকার। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ৪৭টির, কমেছে ২৬৪টির। অপরিবর্তিত ছিল ৩৫টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। বৃহস্পতিবার ডিএসইতে দাম বাড়ার শীর্ষে থাকা ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- প্রভাতী, পূরবী জেনারেল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্স, অগ্রণী ইনস্যুরেন্স, লিব্রা ইনফিউশন, রুপালি ইনস্যুরেন্স, নর্দার্ন, ফেডারেল, সোনার বাংলা ইনস্যুরেন্স এবং এনভয় টেক্সটাইল লিমিটেড।

যথারীতি লেনদেন বাড়ার শীর্ষে রয়েছে- বেক্সিমকো, রবি আজিয়াটা, এশিয়া প্যাসিফিক ইনস্যুরেন্স, প্রভাতী ইনস্যুরেন্স,পূরবী জেনারেল, অগ্রণী, সোনার বাংলা ইনস্যুরেন্স, লঙ্কা বাংলা ফাইন্যান্স, দেশ জেনারেল ইনস্যুরেন্স এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিটিউক্যালস লিমিটেড। দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক আগের দিনের চেয়ে ২১৩ পয়েন্ট কমে ১৫ হাজার ২২১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিন সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩০ কোটি ৬৫ লাখ ৩১ হাজার টাকার। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ৪০টির, কমেছে ১১৫টির। অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।