শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দেশের অনেক কোম্পানিই এখন আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ তৈরি করছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সার্টিফিকেশন সনদও পেয়েছে বেশকিছু কোম্পানি। এ কারণে দেশে তো বটেই, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধের বাজার। এক সময় যেখানে চাহিদার ৮০ শতাংশ ওষুধ বাইরে থেকে আমদানি করতে হতো, সেখানে এখন আমদানি হয় মাত্র ৩ শতাংশ। দেশের ওষুধ খাতের এ উত্তরোত্তর সাফল্য পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানিগুলোর মুনাফায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

এদিকে কভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতিতে চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছিল। সংক্রমণ ঠেকাতে ঘোষণা করা হয় সাধারণ ছুটি। এ ছুটি শেষ হওয়ার পর জুন থেকে সীমিত পরিসরে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু হয়। সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই এ সময়ের পর থেকে সবকিছু আবার আগের মতো স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত সবক্ষেত্রেই মানুষের চলাচল স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এ অবস্থায় ব্যবসা-বাণিজ্যেও গতি ফিরতে শুরু করেছে। যদিও বেশকিছু খাতের ব্যবসা এখনো পূর্বাবস্থায় ফেরেনি। করোনার সময়ে ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি।পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩১টি কোম্পানির মধ্যে ১৫টি তাদের সর্বশেষ তথ্যে আগের বছরের তুলনায় ভালো ব্যবসা দেখিয়েছে। গত সপ্তাহ পর্যন্ত হিসাবে দেখা গেছে, এ খাতের ১৪টি কোম্পানি আগের বছরের চেয়ে খারাপ করেছে।

এখন পর্যন্ত পাওয়ার ফলাফল অনুসারে, এ সময়ে এসিআই লিমিটেডের ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ, এসিআই ফরমুলেশনন্সের ১২ দশমিক ৮১, একমি ল্যাবরেটরিজের ১১ দশমিক ৪৭, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ৯ দশমিক ৮৭, ইবনে সিনার ১২ দশমিক ৫১, রেনাটা লিমিটেডের ১৪ দশমিক ৮৫, সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালসের ১ দশমিক ৯০ এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের বিক্রি ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ছাড়ের সুযোগ রয়েছে। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকেও ওষুধ শিল্প বিকাশে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তারা জানান, বর্তমান উৎপাদনক্ষমতা আর বিশ্ববাজারের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ওষুধ রফতানিতে এশিয়ার শীর্ষে উঠে আসবে বাংলাদেশ। এ খাতের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকায় স্বাভাবিকভাবেই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির আয় বাড়ছে।

করোনার চিকিৎসায় ব্যবহূত বেশকিছু ওষুধ এবং মাস্ক ও পিপিই রফতানির মাধ্যমে এ সময়ে ভালো ব্যবসা করেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও বেক্সিমকো লিমিটেড। জানতে চাইলে বেক্সিমকো গ্রুপের নির্বাহী পরিচালম মোহাম্মদ আসাদউল্লাহ বলেন, করোনার কারণে ব্যবসায় খারাপ সময় আসবে সেটি অনুধাবন করতে পেয়ে আমরা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যবসায়িক কৌশল নির্ধারণ করেছি। ফলে একদিকে আমাদের ব্যবসা কমলেও অন্যদিকে করোনার চিকিৎসায় ব্যবহূত কিছু ওষুধ এবং মাস্ক ও পিপিই বিদেশে রফতানি করে সেটি পূরণ করছি বলে তিনি দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে জানান।

শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হাসান দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, “করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে জ্বর ও সর্দি-কাশির ওষুধের চাহিদা বাড়লেও প্রেসক্রিপশন মেডিসিনের চাহিদা কমেছে। ফলে ওষুধ খাতের মুনাফায় আমরা একটা মিশ্র ফলাফল দেখতে পাচ্ছি।”

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “জ্বর ও সর্দি-কাশির ওষুধ ফার্মেসি থেকে কিনে নিজেরাই খেয়েছেন অনেকে। কিন্তু আরেক দিকে মানুষ মহামারীর কারণে ডাক্তারের চেম্বারে বা হসপিটালে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। ফলে প্রেসক্রিপশন মেডিসিনের চাহিদা কমে গেছে।” তবে মহামারীর ধাক্কায় অন্যান্য খাতে যতটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ততটা পড়েনি বলে মনে করেন এমরান।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড: ১৯৮৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে  শেয়ার প্রতি ২ টাকা ৬৫ পয়সা মুনাফা করেছে। আগের বছর একই সময়ে মুনাফা ছিল ২ টাকা ১৩ পয়সা।

ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড: চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শেয়ার প্রতি ৩ টাকা ২৫ পয়সা মুনাফা করেছে ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যাল। আগের বছর এই সময় তাদের মুনাফা ছিল ২ টাকা ৮৬ পয়সা।

কোহিনুর কেমিকেল: কোহিনুর কেমিকেল এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শেয়ার প্রতি ২ টাকা ৮১ পয়সা মুনাফা দেখিয়েছে। আগের বছর এ সময় তাদের মুনাফা ছিল ২ টাকা ৫৫ পয়সা।

ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড: হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শেয়ার প্রতি ২৫ টাকা ৩ পয়সা মুনাফা করেছে ম্যারিকো বাংলাদেশ। আগের বছর এ সময় মুনাফা ছিল ২১ টাকা ২৪ পয়সা।

রেকিট অ্যান্ড বেনকাইজার: চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি ৩৩ টাকা ৯৩ পয়সা মুনাফা করেছে রেকিট অ্যান্ড বেনকাইজার। আগের বছর এই সময় মুনাফা ছিল ৩০ টাকা ৬৮ পয়সা।

রেনেটা লিমিটেড: রেনেটা চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শেয়ার প্রতি ১৩ টাকা ৯৭ পয়সা মুনাফা করেছে। আগের বছর এ সময় তাদের মুনাফা ছিল ১১ টাকা ৬২ পয়সা।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস: স্কয়ার তাদের প্রথম প্রান্তিকে চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শেয়ার প্রতি ৪ টাকা ৬৬ পয়সা মুনাফা করেছে। আগের বছর এ সময় মুনাফা ছিল ৩ টাকা ৯৭ পয়সা।

এসিআই: চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এসিআই লিমিটেড শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৬৯ পয়সা মুনাফা করেছে। আগের বছর এই সময় তাদের ৫ টাকা ২১ পয়সা লোকসান ছিল।

এসিআই ফরমুলেশন লিমিটেড: হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এসিআই ফরমুলেশন শেয়ার প্রতি ৪২ পয়সা মুনাফা করেছে। আগের বছর এই সময়ে তাদের মুনাফা ছিল ১৫ পয়সা।

একমি ল্যাবরেটরিজ বাংলাদেশ লিমিটেড: একমি ল্যাবরেটরিজ জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৯৬ পয়সা মুনাফা করেছে। আগের বছর এই সময় তাদের ১ টাকা ৮৯ পয়সা মুনাফা হয়েছিল।

বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড: জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস শেয়ার প্রতি ২৫ পয়সা মুনাফা করেছে। আগের বছর একই সময় এ কোম্পানি ১৮ পয়সা মুনাফা দেখিয়েছিল।

জেএমআই সিরিঞ্জ অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইস লিমিটেড: চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শেয়ার প্রতি ৮০ পয়সা মুনাফা করেছে জেএমআই সিরিঞ্জ। আগের বছর এ সময় তাদের মুনাফা ছিল ১ টাকা ২২ পয়সা।

ওরিয়ন ইনফিউশন: ওরিয়ন ইনফিউশন জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শেয়ার প্রতি ৪৭ পয়সা মুনাফা করেছে। আগের বছর এ সময় তাদের ৮৪ পয়সা মুনাফা ছিল।

ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেড: ওরিয়ন ফার্মা চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শেয়ার প্রতি ৮২ পয়সা মুনাফা করেছে। আগের বছর এই সময় তাদের মুনাফা ছিল ১ টাকা ১৭ পয়সা।

ফার্মা এইডস লিমিটেড: চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শেয়ার প্রতি ৪ টাকা ১ পয়সা মুনাফা করেছে ফার্মা এইডস লিমিটেড। আগের বছর এই সময় তাদের মুনাফা ছিল ৪ টাকা ৬৩ পয়সা।

ওয়াটা কেমিকেল: চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শেয়ার প্রতি ২ টাকা ৮ পয়সা মুনাফা করেছে ওয়াটা কেমিকেল। আগের বছর এই সময় তাদের ৩ টাকা ২৯ পয়সা মুনাফা ছিল।

এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড: চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি ৭৫ পয়সা মুনাফা করেছে এমবি ফার্মা। আগের বছর এ সময় মুনাফা ছিল ৮৫ পয়সা।

ইন্দো বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস: চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শেয়ার প্রতি ৩৪ পয়সা মুনাফা করেছে ইন্দো বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস। আগের বছর এ সময় তাদের মুনাফা ছিল ৪০ পয়সা।

সিলকো ফার্মাসিউটিক্যালস লি: সিলকো চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শেয়ার প্রতি ৩৩ পয়সা মুনাফা করেছে। আগের বছর এ সময় মুনাফা ছিল ২৮ পয়সা।

সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড: চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শেয়ার প্রতি ৩৫ পয়সা মুনাফা করেছে সিলভা। আগের বছর এই সময় মুনাফা ছিল ২৯ পয়সা।

ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ: ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শেয়ার প্রতি ২৩ পয়সা লোকসান করেছে। আগের বছর এই সময় তাদের ৭ পয়সা লোকসান ছিল।

সালভো কেমিকেলস: চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে সেলভো শেয়ার প্রতি ২০ পয়সা মুনাফা করেছে। আগের বছর এই সময় তাদের মুনাফা ছিল ১৪ পয়সা।

সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড: ২০১৯-২০ অর্থবছরে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস শেয়ার প্রতি ৯ টাকা ২৪ পয়সা লোকসান দেখিয়েছে। আগের বছর এ সময় তাদের ৪৮ পয়সা মুনাফা ছিল।

ফার ক্যামিকেল ইন্ডাসট্রিজ লিমিটেড: ফার ক্যামিক্যাল চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শেয়ার প্রতি ১ পয়সা লোকসান করেছে। আগের বছর এই সময় ১৮ পয়সা মুনাফা ছিল তাদের।

গ্লোবাল হেভি কেমিকেলস: গ্লোবাল হেভি কেমিকেলস চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শেয়ার প্রতি ৩৪ পয়সা লোকসান করেছে। আগের বছর এই সময় তাদের ৩৩ পয়সা মুনাফা হয়েছিল।

লিবরা ইনফিউশন লিমিটেড: লিবরা ইনফিউশন তাদের তৃতীয় প্রান্তিকে চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শেয়ার প্রতি ১১ টাকা ৩৮ পয়সা লোকসান করেছে। আগের বছর এ সময় তাদের লোকসান ছিল ১২ টাকা ১৩ পয়সা।

অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস: চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে অ্যাকটিভ ফাইন শেয়ার প্রতি ১৯ পয়সা মুনাফা করেছে। আগের বছর এই সময় তাদের মুনাফা ছিল ৮৭ পয়সা।

অ্যাডভেন্ট ফার্মা: চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শেয়ার প্রতি ৪১ পয়সা মুনাফা করেছে অ্যাডভেন্ট ফার্মা। গত বছর এই সময় তাদের ৬৩ পয়সা মুনাফা হয়েছিল।

এএফসি অ্যাগ্রো বায়োটেক লিমিটেড: এএফসি এগ্রো ২০১৯-২০ অর্থবছরে শেয়ার প্রতি ৩২ পয়সা মুনাফা করেছে। আগের বছর তাদের মুনাফা ছিল ২ টাকা ৯৩ পয়সা। সুত্র: দেশ প্রতিক্ষণ