শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের অপেক্ষায় থাকা নকল মাস্ক সরবরাহকারী ও নিন্মমানের কোম্পানি জেএমআই হসপিটাল লিমিটেড। মুলত স্বাস্থ্য খাতে লুটপাটের পর এবার পুঁজিবাজার থেকে লুটপাট করতে চায় জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড।

এ ধরনের প্রতারক ও বাটপার কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না করার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিকট দাবী জানিয়েছেন বিনিয়োগকারী ও বাজার বিশ্লেষকরা। কারন এ জাতীয় কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসে লুটপাট করতে, বরং সাধারন বিনিয়োগকারীদের কিছু দিতে আসে না।

পুঁজিবাজারে আসার প্রক্রিয়ায় থাকা জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফেকচারিং লিমিটেডের বিরুদ্ধে বড় ধরনের জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য এন-৯৫ ফেস মাস্ক এর নামে সাধারণ মানের সার্কিক্যাল মাস্ক সরবরাহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের তদন্তে বিষয়টি ধরা পড়েছে। অপরাধের বিষয়টি স্বীকার করে লিখিতভাবে ক্ষমা ও দায়মুক্তি চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

জেএমআই কর্তৃপক্ষ অবশ্য এটিকে অনিচ্ছাকৃত ভুল হিসেবেই দাবি করেছে। তাদের দাবি, সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক সরবরাহ করতে গিয়ে ভুলে এন ৯৫ মাস্ক এর প্যাকেটে ভরে ফেলা হয়েছে সেগুলো। যদিও এন ৯৫ মাস্ক প্রস্তুতের অনুমোদন পাওয়ার আগেই কোম্পানিটিতে এত বিশাল পরিমাণ প্যাকেট কী উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘মহাজন’ হিসেবে পরিচিত ছোট একটি কোম্পানির ‘বড় দান’ মারার লিপ্সায় মহামারি করোনার ঝুঁকিতে রয়েছেন ডাক্তার, নার্সসহ সম্মুখযোদ্ধারা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ভুয়া এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করে ঝুঁকিতে ফেলা হয়েছে তাদের। আর যারা এসব ভুয়া মাস্ক গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন তাদের বদলিসহ নানা হয়রানি করা হচ্ছে। আমেরিকায় উৎপাদিত এন-৯৫ এর কোনো পণ্য চালান দেশেই আসেনি। অথচ মহামারির সুযোগে ভুয়া মাস্ক তৈরি করে এন-৯৫ এর প্যাকেটে চালিয়ে দেয়া হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিএমএসডিকে ভুয়া এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করা জেএমআই সিরিঞ্জ এন্ড মেডিকেল ডিভাইস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। বৃহৎ করদাতা বিবেচনায় গত বছর সিআইপি নির্বাচিত হয়েছেন নোয়াখালীর এই ব্যবসায়ী।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিএমএসডির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে তার। তাদের মাধ্যমেই বড় বড় সরবরাহ আদেশ বাগিয়ে নেন তিনি। সর্বশেষ করোনাকালীন দুর্যোগময় সময়ে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, গ্ল্যাবসসহ মেডিকেল সরঞ্জাম সরবরাহের কাজও পেয়েছে তার কোম্পানি।

উল্লেখ, জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট লিমিটেড হচ্ছে জেএমআই গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। কোম্পানিটি বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করার প্রক্রিয়ায় আছে। ইতোমধ্যে এটি রোড শো করে নিলামের (Bidding) মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রির অনুমোদন চেয়েছে আবেদন জমা দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র কাছে।

এই অনুমোদন পেলে প্রতিষ্ঠানের কাছে শেয়ার বিক্রির পর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি প্রক্রিয়া শুরু করবে এই কোম্পানি। আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চায়।

জেএমআই হসপিটাল বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারবাজার থেকে ৭৫ কোটি টাকা উত্তোলন করতে গত বছরের ২০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টার রোড শো করে। ওই টাকা দিয়ে জমি ক্রয়, ভবন তৈরী, মেশিনারীজ ক্রয়, ঋণ পরিশোধ ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করতে চায়। এই টাকা উত্তোলনের কাজে ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট এবং জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

বর্তমানে জেএমআই গ্রুপের একটি কোম্পানি জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড ডিভাইসেস লিমিটেড পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আছে। এই কোম্পানির বিরুদ্ধেও নানা ধরনের কারসাজির মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করার অভিযোগ আছে। সর্বশেষ গত বছরের প্রথমভাগে কোম্পানি বড় ধরনের তথ্য জালিয়াতি করেছে বলে অভিযোগ আছে।

নিপ্রো নামে জাপানি কোম্পানির কাছে ১৬৪ টাকা শেয়ার বিক্রির চুক্তি করেও তা গোপন রেখে উচ্চ দরে শেয়ার বিক্রি করা হচ্ছে বলে রটিয়ে দেওয়া হয়। আর এ‌ই কারসাজির মধ্য দিয়ে ২শ টাকার শেয়ারের মূল্য এক মাসের ব্যবধানে প্রায় ৫শ টাকায় উঠে যায়।

জানা গেছে, গত মার্চ মাসে জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট কেন্দ্রীয় ওষুধাগারে (Central Medical Store Depot -CMSD) ২০ হাজার ৬০০ পিস ‘এন ৯৫’ ফেস মাস্ক সরবরাহ করে। মাস্কের কার্টনে এন ৯৫ ফেস মাস্ক লেখা থাকলেও বাস্তবে ভেতরে থাকা মাস্কগুলো এন ৯৫ ছিল না। এগুলো ছিল সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক। এন ৯৫ মাস্ক হচ্ছে উচ্চ প্রযুক্তিতে তৈরি বিশেষায়িত মাস্ক। এই মাস্ক বাতাসে ভেসে বেড়ানো বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর কণা ও জীবাণুর ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত আটকাতে পারে। সাধারণভাবে এটি এন ৯৫ মাস্ক নামে পরিচিত।

যুক্তরাষ্ট্রে এই মানের মাস্ককে এন ৯৫ বলা হলেও বিশ্বের অনেক দেশের স্বাস্থ্য খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিভিন্ন নামে এই মাস্ককে চিহ্নিত করে থাকে; যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়নে এটিকে বলা হয় এফএফপি ২, চীনে বলা হয় কেএন৯৫। এ বিষয় জেএমআই সিরিঞ্জ এন্ড মেডিকেল ডিভাইসের এমডি আব্দুর রাজ্জাকের মোবাইলে বারবার ফোন দেয়া হলে তিনি তা রিসিভ করেননি। সুত্র: দেশ প্রতিক্ষণ