শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে ধারাবাহিকভাবে কমছে বিদেশি বিনিয়োগ। ২০১৭ সালে দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে গতি পেলেও গত দুই বছরে পিছুটান নিয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। আর শেয়ার বিক্রিতে মূলধন তুলে নেওয়ায় বিদেশিদের নিট বিনিয়োগ কমছে। মন্দাবস্থায় বাজারে ঢুকে এখন বিদেশিদের শেয়ার বিক্রি বেড়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ব্যাংকে সুদের হার বৃদ্ধি, বিদেশিদের শেয়ার বিক্রিতে পুঁজিবাজারের অস্থিতিশীলতা বেড়েছে। ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) কমানোয় তারল্যপ্রবাহ কমার সংকট সিআরআর কমালেও কাটেনি। উচ্চহারে আমানত সংগ্রহ করছে ব্যাংক। এদিকে নিজেদের কিছু দাবি দাওয়া নিয়ে পুঁজিবাজার বিমুখ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোম্পানির লভ্যাংশে প্রত্যাশার প্রতিফলন না পাওয়ায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার বিক্রি করছে। আর সব পক্ষের শেয়ার বিক্রিতে অস্থির হয়ে উঠেছে পুঁজিবাজার।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের ক্রমাগত নিন্মমুখীতায় কয়েকটি কারণের মধ্যে বিদেশিদের শেয়ার বিক্রি অন্যতম কারণ। পুঁজিবাজারে বিদেশিদের বিনিয়োগ দেশীয় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর আস্থা বাড়িয়ে তোলে। আর তাদের (বিদেশি) শেয়ার বিক্রি বাড়লে দেশের বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার বিক্রি করতে থাকে।

চলতি বছর পুঁজিবাজারে বিদেশিদের বিনিয়োগ টানা কমছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত জুলাই মাসে ৫২ কোম্পানিতে বিদেশির বিনিয়োগ কমেছে। অন্যদিকে, বেড়েছে ১৩ কোম্পানিতে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃক তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ধারণের পরিসংখ্যান থেকে এমন তথ্য মিলেছে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, যে ৫২ কোম্পানি থেকে বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার হয়েছে, সেগুলোর বাজারমূল্য ছিল প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা। আর যে ১৩ কোম্পানিতে বিনিয়োগ বেড়েছে, সেগুলোর বাজারমূল্য ছিল প্রায় ১১ কোটি টাকা। সার্বিক কেনাবেচার পর জুলাই শেষে বিদেশিদের নিট প্রায় ১৬৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রত্যাহার হয়েছে বলে ডিএসই জানায়।

তালিকাভুক্ত ৩১৮ কোম্পানির মধ্যে জুলাই পর্যন্ত ১৩৬টিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ ছিল। এর মধ্যে সংশ্নিষ্ট কোম্পানিতে অন্তত ১ শতাংশ মালিকানা ছিল ৭৫ কোম্পানিতে। ৫ শতাংশের বেশি শেয়ার ছিল ২৫টিতে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো বিদেশিদের শেয়ার ধারণের যে তথ্য প্রকাশ করে, তাতে প্রকৃত বিদেশিদের সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিদের শেয়ার ধারণের তথ্য যোগ করে প্রকাশ করা হয়। এখন পর্যন্ত আটটির শেয়ার ধারণের হালনাগাদ তথ্য মেলেনি। এগুলোর মধ্যে এপেক্স স্পিনিংও রয়েছে। গত জুন শেষে কোম্পানিটি বিদেশিদের ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ শেয়ার থাকার তথ্য দিয়েছিল।

বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে: গত জুনের তুলনায় জুলাই শেষে বিদেশিদের শেয়ারের অংশ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শীর্ষে ছিল জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইসেস। জুন শেষে এ কোম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল না। জুলাই শেষে মোট শেয়ারের ৫০ দশমিক ২৩ শতাংশ দেখাচ্ছে বিদেশিদের হিসাবে। জাপানি কোম্পানি নিপরো করপোরেশনের বিনিয়োগের কারণে মালিকানার ধরনে এ পরিবর্তন এসেছে।

গত মাসে সেকেন্ডারি বাজারে লেনদেনের মাধ্যমে বিদেশি বা প্রবাসী বাংলাদেশের সর্বাধিক বিনিয়োগ বেড়েছে প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সে। জুন শেষে বীমা কোম্পানিটিতে তাদের অংশ ছিল মোট শেয়ারের ৪ দশমিক ০৩ শতাংশ, যা জুলাই শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকা বাটা সুতে বিদেশিদের শেয়ার মোটের শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ৮৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা উত্তরা ব্যাংকে তাদের শেয়ার মোটের শূন্য দশমিক ০৮ শতাংশ বেড়ে ২ দশমিক ৯৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এর পরের অবস্থানে থাকা ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, মুন্নু স্টাফেলার্স, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, বেক্সিমকো লিমিটেড, বিবিএস কেবলসে বিদেশি বা প্রবাসীদের সম্মিলিত শেয়ার ধারণের হার শূন্য দশমিক ০২ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশ বেড়েছে।

বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে : গত মাসে বিদেশি বা প্রবাসীদের বিনিয়োগ হ্রাসে শীর্ষে ছিল সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ। জুনের শেষেও কোম্পানিটিতে তাদের শেয়ার ছিল মোটের ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ, যা জুলাইয়ের শেষে শূন্যে নেমেছে। অর্থাৎ কোম্পানিটি থেকে তারা পুরো বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেছেন। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল মুন্নু সিরামিক। কোম্পানিটি থেকে প্রবাসীদের শেয়ার মোটের ১ শতাংশ কমে মাত্র শূন্য দশমিক ০৮ শতাংশে নেমেছে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা রূপালী লাইফ থেকে প্রবাসীদের শেয়ার প্রায় ১ শতাংশ কমে ৩ দশমিক ০৫ শতাংশে নেমেছে।

এ ছাড়া ওরিয়ন ফার্মা, সিঙ্গার বাংলাদেশ, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, শাশা ডেনিমস, রূপালী ইন্স্যুরেন্স, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, স্কয়ার ফার্মা, মারিকো, ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা অয়েল, পাওয়ার গ্রিড, ফনিক্স ফাইন্যান্স, আইএফআইসি ব্যাংক, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, গ্রামীণফোন, বেক্সিমকো ফার্মা, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো, ডিবিএইচসহ আরও ৪৯ কোম্পানি থেকে বিদেশি বা প্রবাসীদের শেয়ার কমেছে।