শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শেয়ারহোল্ডাররা তথা ব্রোকারেজ হাউজের মালিকরা চীনা তহবিলের অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে এখন লোকসানে বড় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। পুঁজিবাজারে চীন অর্থ বিনিয়োগ বিনিয়োগ করে তারা হোঁচট খেয়েছেন, কারণ এর অর্থ বাজারে এনে এরই মধ্যে লোকসানে পড়েছে সিংহভাগ ব্রোকারেজ হাউজ। ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করেও প্রতিদিনই লোকসানের হিসাব কষতে হচ্ছে তাদের। ইতোমধ্যে অনেকেরই বিনিয়োগ করা অর্থের ৩০ শতাংশ পুঁজি উধাও হয়ে গেছে।

তবে বহুল কাঙ্খিত চীনা ফান্ডের টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে তাদের এ অবস্থা হয়েছে। যারা কর ছাড় নিয়ে এই অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন, এরই মধ্যে তাদের লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। অথচ চীনা ফান্ড থেকে প্রাপ্ত র্অর্থ পুঁজিবাজারের গতি ফেরাবে এমন ধারণা ছিল বাজার সংশ্লিষ্টসহ সবার।

একাধিক হাউজ-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে যায়, বিনিয়োগযোগ্য ও ভালো মানের শেয়ারে বিনিয়োগ করেও সুফল পাচ্ছেন না তারা। লাভের বদলে প্রতিদিনই হচ্ছে লোকসান। কেউ কেউ এই অর্থে কর সুবিধা নেওয়াকে ভুল বলে আখ্যায়িত করছেন। তাদের অভিমত, ১০ শতাংশ কর ছাড়ের চেয়ে এখনও আমাদের লোকসান বেশি হচ্ছে।

একটি বোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চীনা তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করে এরই মধ্যে প্রায় ৪০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় আমাদের লোকসানের মাত্রা আরও বেশি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এখন মনে হচ্ছে, ১৫ শতাংশ কর দিয়ে এই অর্থ অন্য খাতে বিনিয়োগ করা ভালো ছিল। তিনি বলেন, আমি যে শেয়ারগুলোয় বিনিয়োগ করেছি, সবই মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি। এখানে রয়েছে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার।

কিন্তু এর পরও লোকসান রোধ করতে পারিনি। আরও কয়েকটি হাউজ থেকেও একই ধরনের তথ্য মিলেছে। অনেকেই এরই মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা লোকসানে পড়েছেন। তারা বলেন, বাজারে এখনও ছোট ছোট কোম্পানির শেয়ার নিয়ে খেলা হচ্ছে। এই তালিকায় রয়েছে আরও কিছু দুর্বল ও ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানি। এসব কোম্পানির দৌরাত্ম্য থাকায় ভালো শেয়ারগুলোর দর বাড়ছে না। ফলে পুঁজিবাজারও তার স্বরূপে ফিরতে পারছে না।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, বর্তমানে বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো নয়, সে কারণে প্রায় সবাই লোকসানে রয়েছেন। এখানে ছোট-বড় বিনিয়োগকারী বলে কিছু নেই। হাউজ মালিকেরা যদি ভালো মানের শেয়ারে বিনিয়োগ করে থাকেন, তাহলে বিষয়টি নিয়ে তাদের চিন্তা করার কিছু নেই। কারণ ধৈর্য ধারণ করলে ভালো শেয়ার থেকে রিটার্ন আসবেই।

সুত্রে জানায়, যেসব হাউজ মালিক চীনা ফান্ডের অর্থে কর সুবিধা নিয়েছেন, তারা নির্দিষ্ট বিও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ শেষ করেছেন। এ সময়সীমা শেষ হয়েছে গত মার্চে। এ সময়ের মধ্যে তারা পুঁজিবাজারে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তিন বছরের আগে তারা ওই অর্থ পুঁজিবাজার থেকে তুলে নিতে পারবেন না। তবে এ সময়ের মধ্যে বিনিয়োগ করা শেয়ার ও ইউনিট থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ তারা তুলে নিতে পারবেন।

এদিকে অভিযোগ রয়েছে, এই ফান্ড থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের কথা বলে যারা কর সুবিধা নিয়েছেন, তারা অনেকেই এই অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেননি। তবে বিষয়টির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন ডিএসইর সদ্য সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান। তিনি বলেন, শেয়ারহোল্ডাররা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের কথা বলে চীনা ফান্ডের অর্থ থেকে কর সুবিধা নিয়েছেন।

এর জন্য তাদের সময় ছিল ছয় মাস, যা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। আমার জানামতে, সবাই এই অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছেন। কারণ, কর সুবিধা নিতে হলে এর বিকল্প নেই। ব্যতিক্রম হলে এর সংখ্যাও হবে খুবই সীমিত। আর এমন হলে তারা কর সুবিধা পাবেন না। এটি বোঝা যাবে তারা এক বছরের হিসাব দাখিল করার পর।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, চীনা ফান্ডের অর্থ থেকে ২৪০ জনের মধ্যে কর সুবিধা নেননি ৫৬ শেয়ারহোল্ডার। এদিকে তারা যে উদ্দেশ্য নিয়ে বিনিয়োগ করেছিলেন, এখন তার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। কারণ, এরই মধ্যে তারা গুনতে শুরু করেছেন লোকসান। একাধিক ব্রোকারেজ হাউজে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে।

উল্লেখ্য, চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি বাবদ ৯৪৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৬ হাজার ৬৪৫ টাকা পাওয়া গেছে। এখান থেকে প্রাপ্ত সব অর্থ পুঁজিবাজারে টানতে সরকারের পক্ষ থেকে ১০ শতাংশ কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে শেয়ারহোল্ডারদের এই অর্থ তিন বছর পুঁজিবাজারে রাখার শর্ত দেওয়া হয়েছে।