আবদুর রাজ্জাক, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা:  পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশলী খাতের কোম্পানি এ্যাপোলো ইস্পাতের ক্যাটাগরি ধরে রাখতে নামমাত্রা ডিভিডেন্ড দিচ্ছেন। আর বঞ্চিত হচ্ছেন কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারা। কোম্পানির ঘোষিত লভ্যাংশ পাওয়ার মাধ্যমে লোকসান কাটানোর প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না বিনিয়োগকারীদের। বছর শেষে ভাল মুনাফা করলেও কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের চাহিদা মতো লভ্যাংশ ঘোষণা না দেয়ার কারণে বেশিরভাগ কোম্পানির দর কমেছে।

একাধিক বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, লভ্যাংশ দেয়ার নাম করে ক্যাটাগরি টিকিয়ে রাখতে চাচ্ছে কোম্পানিগুলো। যার কারণে রিজার্ভ বাড়ানোর নাম করে কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ কম ঘোষণা করছে। এটা এক ধরনের প্রতারনা বলে তারা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন। এর ফলে এ্যাপোলো ইস্পাতের শেয়ারহোল্ডারা হতাশ হয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে নানা বিতর্কের সৃষ্টি করে পুঁজিবাজার থেকে ২২০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছিল এ্যাপোলো ইস্পাত। পাঁচ বছর কোন রকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে অবশেষে লোকসানে পতিত হয়েছে কোম্পানিটি। বিদায়ী হিসাব বছরের শেষ প্রান্তিকে অনেক অবনমন হয়েছে। ব্যবসায় সম্প্রসারণ ও ঋণ পরিশোধের লক্ষ্যে পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করলেও তালিকাভুক্তির ৫ বছর পরে এসেও তা বাস্তবে রূপ পায়নি কোম্পানিটির।

এ্যাপোলো ইস্পাতের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই ১৭-মার্চ ১৮) শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছিল ০.১৩ টাকা। বছর শেষে এই মুনাফার পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ০.০৫ টাকায়। এ হিসাবে কোম্পানিটির শেষ প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ০.০৮ টাকা। কোম্পানিটি ২.৩৬ টাকা শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) দেখিয়ে শেয়ারবাজার থেকে ২২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এরমধ্যে ১৫৩ কোটি ১৬ লাখ টাকার ঋণ পরিশোধ ও ৬৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়ে নতুন প্রজেক্ট এনওএফ প্লান্ট চালুর করবে বলে প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করা হয়ছিল। তবে এরপরে ৫ বছর পার হয়ে গেলেও বাস্তবে তার দেখা মেলেনি।

প্রসপেক্টাস অনুযায়ি, কোম্পানিটির শেয়ারবাজারে আসার সময় ২০১২ সালের ৩০ জুন ব্যাংক ওভারড্রাফট, দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৪৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা। যা এখন বেড়ে দাড়িঁয়েছে ৪৪০ কোটি ৮৯ লাখ টাকায়। এ হিসাবে কোম্পানিটির ঋণের পরিমাণ কমার পরিবর্তে বেড়েছে ৯৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এদিকে কোম্পানিটির শেয়ারবাজারে আসার আগে ২০১১-১২ অর্থবছরে বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল ৪৯৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। যা সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কমে এসেছে ৪৭৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকায়। এছাড়া ২.৩৬ টাকার ইপিএস ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নেমে এসেছে ০.০৫ টাকায়।

এ্যাপোলো ইস্পাতকে প্রতিটি শেয়ার ২২ টাকা করে ইস্যুর জন্য অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যে শেয়ারটির দর শনিবার (৩ নভেম্বর) ৮.৭০ টাকায় দাড়িঁয়েছে। আইপিওতে উত্তোলিত ২২০ কোটি টাকা দিয়ে ব্যবসায় সম্প্রসারণ করতে না পারলেও প্রতিবছর বোনাস শেয়ার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ্যাপোলো ইস্পাতের পরিচালনা পর্ষদ। কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির পরে প্রতিবছরই বোনাস শেয়ার দিয়েছে।

তবে এরমধ্যে ২ বছর নামমাত্র নগদ লভ্যাংশও দিয়েছিল। এক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডারদের বিও হিসাবে শেয়ার সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়ে মুনাফা কোম্পানিতে রেখে দেওয়া হচ্ছে। কোম্পানিটির পর্ষদ নিয়মিত বোনাস শেয়ার ও আইপিও’র মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩৮৯ কোটি ৬২ লাখ টাকায় নিয়ে গেছে। যার পরিমাণ আইপিও’র আগে ছিল ১৫০ কোটি টাকা। এরমধ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ব্যবসায়ও ৩ শতাংশ বোনাস শেয়ারের ঘোষণা দিয়েছে। যা শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিক্রমে প্রদান করা হবে।

এসব কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, ১০ শতাংশের নিচে লভ্যাংশ দেওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ রয়েছে। তারা ইচ্ছে করেই শেয়ারদর বাড়িয়ে আমাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন আমরা পড়েছি লোকসানে। তাদের দেওয়া লভ্যাংশের মাধ্যমে কিছুটা লোকসান পোষাব তারও কোনো উপাই নেই।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, কোম্পানিগুলো অনেক সময় ইচ্ছে করেই কম লভ্যাংশ দেয়। নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্যই তারা এমন করে। তবে যারা খুব ভালো কোম্পানি বা বাজারে যাদের সুনাম রয়েছে তারা এমনটি করেন না। তারা শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থের কথা ভেবেই কাজ করেন।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যেসব কোম্পানি নামমাত্র লভ্যাংশ দিয়ে ক্যাটেগরি টিকিয়ে রাখতে চাই তাদের উদ্দেশ্য ভালো নয়। তারা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করার জন্য। তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকে না।