BANK LAGOশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ২০১৬ সালে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল। যদিও উদ্যোক্তাদের নতুন বিনিয়োগ ছিল কম। তবে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের উপকরণ সরবরাহকারীরা ঋণ নিয়েছেন। মাঝারি ও ছোট ব্যবসায়ীরাও ভালো ব্যবসা করেছেন। এসব ঋণের বিপরীতে সুদ হিসাবই ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বাড়িয়ে দিয়েছে।

এদিকে বছরের শেষ সময়ে সব ব্যাংকই বড় অঙ্কের ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করেছে। ফলে সুদ আয় বেশি দেখানো সম্ভব হয়েছে। এ কারণে ডিসেম্বর মাসে একাধিক পর্ষদ সভাও করতে হয়েছে। এতে পরিচালন মুনাফাও বেড়েছে। ঋণ নবায়নে বিশেষ ছাড় ও পুনর্গঠন করা ঋণ নিয়মিত থাকার প্রভাবও পড়েছে মুনাফায়।

এতে আগের বছরের তুলনায় ২০১৬ সালে ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বাড়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে এ হিসাব প্রাথমিক। চূড়ান্ত হিসাব শেষে পরিচালন মুনাফা থেকে সঞ্চিতি ও কর কেটে প্রকৃত মুনাফা মিলবে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর কর কেটে রাখা হবে ৪০ শতাংশ, অন্যগুলোর সাড়ে ৪২ শতাংশ ও নতুন ব্যাংকগুলোর ৪০ শতাংশ।

এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, ২০১৬ সালে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল। অনেক বড় প্রকল্প স্বাক্ষরিত হয়েছে, কার্যক্রমও চলছে, যা ব্যবসায়ীদের মনোভাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। তবে বিনিয়োগ আরও বাড়তে পারত।
আনিস এ খান আরও বলেন, যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে পরিচালন মুনাফা বেড়েছে।

তবে হিসাবে ২০১৬ সালের খেলাপি ঋণ অনেক বাড়বে। এ কারণে ব্যাংকগুলোকে অনেক নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হবে। ফলে চূড়ান্ত হিসাবে মুনাফা কমেও যেতে পারে। ব্যাংকগুলোর ২০১৫ সালের পরিচালন মুনাফার তথ্য নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। আর ২০১৬ সালের তথ্য পাওয়া গেছে ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ইসলামী ব্যাংক সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। ২০১৫ সালে যা ছিল ১ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। যদিও চূড়ান্ত হিসাবে মুনাফা হয় ৩১৫ কোটি টাকা। ন্যাশনাল ব্যাংক ১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। ২০১৫ সালে ব্যাংকটি ৬৮১ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা দেখিয়েছিল। চূড়ান্ত হিসাবে মুনাফা হয় ৩৮৮ কোটি টাকা। ব্র্যাক ব্যাংক ৯২২ কোটি টাকা মুনাফার কথা জানিয়েছে। আগের বছর ৪৬২ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা দেখালেও চূড়ান্ত মুনাফা হয় ২৩২ কোটি টাকা।

সাউথইস্ট ব্যাংক ৮৬৩ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। আগের বছর ৫৬৭ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করলেও প্রকৃত মুনাফা ছিল ৩০৭ কোটি টাকা। দি সিটি ব্যাংক ৭৫৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। ২০১৫ সালে ছিল ৪৭৭ কোটি টাকা, আর প্রকৃত মুনাফা ৩৫৯ কোটি টাকা। আল-আরাফাহ্ ব্যাংক ৭৫৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছে এবার। আগের বছর ৪০৫ কোটি টাকা মুনাফা দেখানো হলেও প্রকৃত মুনাফা হয় ২২৩ কোটি টাকা।

ঢাকা ব্যাংকের মুনাফা ২৬১ থেকে বেড়ে ৫৭০ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংকের ২০০ কোটি বেড়ে ৪৩০ কোটি, যমুনা ব্যাংকের ২৪০ থেকে বেড়ে ৪৪২ কোটি, এনসিসি ব্যাংকের ২৭৫ থেকে ৪৭০ কোটি,

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ২২৯ কোটি থেকে ৩৬০ কোটি, ওয়ান ব্যাংকের ২৭০ থেকে ৪৭০ কোটি, শাহ্জালাল ব্যাংকের ১৭৮ থেকে ৩১৪ কোটি ও ট্রাস্ট ব্যাংকের পরিচালক মুনাফা ৩০৯ কোটি থেকে বেড়ে ৫০১ কোটি টাকা হয়েছে। কমার্স ব্যাংকের মুনাফা ১ কোটি থেকে বেড়ে ২৩ কোটি ও লোকসানে থাকা বেসিক ব্যাংক ১৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছে।

ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ৭৮ থেকে বেড়ে ১৮৫ কোটি, সাউথ বাংলার ৭৩ কোটি থেকে বেড়ে ১৫৪ কোটি, ফারমার্স ব্যাংকের ৪২ কোটি থেকে বেড়ে ৯৮ কোটি, মেঘনা ব্যাংকের ৫৪ কোটি থেকে বেড়ে ১০২ কোটি,

মিডল্যান্ড ব্যাংকের ৬২ কোটি থেকে বেড়ে ৯২ কোটি, এনআরবি ব্যাংকের ৩৪ কোটি থেকে বেড়ে ৮১ কোটি, এনআরবি কমার্শিয়ালের ৮২ কোটি থেকে বেড়ে ১৭১ কোটি ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ১১ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৮ কোটি টাকা।