summit powerএস কে শুভ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের কোম্পানি সামিট পাওয়ার লিমিটেডের লেনদেন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ। ফলে আগামী রোববার থেকে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন বন্ধ থাকবে। তবে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত থাকায় এ কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন।

সামিট গ্রুপের অপর কোম্পানি সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে সামিট পাওয়ারের  একীভুতকরণ প্রক্রিয়ায় কিছু ত্রুটি থাকায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডকে তালিকাচ্যুতি বিষয়ে দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে নিয়ে জরুরী বৈঠক করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আজ বুধবার বিকাল ৩টায় এ বৈঠক শুরু হয়ে পাঁচটা পর্যন্ত চলে।

বৈঠক শেষে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেন, সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ারের অ্যামালগেমেশন নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ন বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সে বিষয়ে ডিএসই এবং সিএসই মিডিয়ার সাথে কথা বলবে। এ বিষয়ে আমরা কোনো কথা বলব না। তিনি পূর্বাঞ্চল পাওয়ার নিয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠকটির সিদ্ধান্ত জানার জন্য সাংবাদিকদের ডিএসইসির সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র বলেন, সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ারকে তালিকাচ্যুত করা নিয়ে একটি বড় ধরনের ভুল করেছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ। সে বিষয়ে বিএসইসিতে জরুরী বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে বিএসইসির পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক দুই স্টক এক্সচেঞ্জ কি ব্যবস্থা নেয় তা বিএসইসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে না জানিয়ে অফিস ত্যাগ করতে না বলা হয়েছে

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী একীভূত হওয়ার পর বুধবার উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে তালিকাচ্যুত করা হয় সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ার কোম্পানিকে। এদিন স্টক এক্সচেঞ্জে ছিল একীভূত সামিট পাওয়ারের লেনদেন। কোম্পানিটির একীভূতকরণের পরে মূলধন নিয়ে সমস্যা থাকার বিষয়টি নিয় বুধবার লেনদেন শেষে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চোখে পড়ে। জরুরীভিত্তিতে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সিডিবিএলকে তলব বিএসইসি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সামিট পাওয়ারের লেনদেন স্থগিত করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ।

বুধবার কোম্পানিটির লেনদেন শেষে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সিডিবিএলের মধ্যে রুদ্ধধার বৈঠক হয়।বৈঠকে বিএসইসি একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় কিছু সমস্যা থাকার পরও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় দুই স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে। ওই সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কোম্পানিটির লেনদেন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় তারা। এর প্রেক্ষিতে  ২৮ আগষ্ট থেকে সামিট পাওয়ারের শেয়ার লেনদেন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় দুই স্টক এক্সচেঞ্জ। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত লেনদেন স্থগিত থাকবে।

জানা যায়, ব্যবস্থাপনা ও কর ব্যয় কমিয়ে আরও বেশি মুনাফার সুযোগ তৈরি করতে গ্রুপের অন্য তিন বিদ্যুৎ কোম্পানিকে একীভূত করেছে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার।সামিট গ্রুপের কোম্পানি সামিট পাওয়ারের সঙ্গে সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ার কোম্পানি, সামিট উত্তরাঞ্চল পাওয়ার কোম্পানি এবং সামিট নারায়ণগঞ্জ পাওয়ার একীভূত হয়েছে।

এর মধ্যে সামিট পাওয়ার ও সামিট পূর্বাঞ্চল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। বুধবার থেকে দেশের উভয় পুঁজিবাজার থেকে সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ারকে তালিকাচ্যুত করা হয়েছে। তবে সামিট উত্তরাঞ্চল পাওয়ার কোম্পানি ও সামিট নারায়ণগঞ্জ পাওয়ার তালিকাভুক্ত নয়। এদিকে মঙ্গলবার মার্জারের রেকর্ড ডেটের কারণে তালিকাভুক্ত কোম্পানি দুটির শেয়ার লেনদেন বন্ধ ছিল। বুধবার সামিট পাওয়ারের আবার ফের চালু হয়।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, বুধবার লেনদেন শেষে বিএসইসি জরুরি তলব করা হয় দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ প্রধান রেগুলেটরী কর্মকর্তাদের। তাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বিএসইসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী। বৈঠক শেষ করার প্রায় চার ঘন্টা পরে ডিএসই ও সিএসই কর্তৃপক্ষ লেনদেন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়।

লেনদেন স্থগিত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, সামিট পাওয়ার তিনটি কোম্পানিটিকে একীভূত করেছে।  এরপর আজই (বুধবার) প্রথম লেনদেন ছিল। এ দিন মূলধনগত কিছু ত্রুটির কারন দেখা দেয়। যা দিনশেষে আমরা বুঝতে পারি। পরে আগামী কার্যদিবস থেকে (২৮ আগষ্ট রোববার) লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত কোম্পানিটির লেনদেন স্থগিত থাকবে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ২২৮ ও ২২৯ ধারা অনুসারে উচ্চ আদালতে তিন কোম্পানিকে সামিট পাওয়ারের সঙ্গে একীভূতকরণের অনুমোদন চাওয়া হলে শর্তসাপেক্ষে গত ১৪ জুলাই সামিট গ্রুপের তিন কোম্পানির একীভূতকরণের চূড়ান্ত অনুমতি দেন হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমদের বেঞ্চ। এর আগে বিধি মোতাবেক বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) শেয়ারহোল্ডার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিরও অনুমোদন নেয় কোম্পানি দুটি।

সামিট পূর্বাঞ্চলের একটি শেয়ারের বিপরীতে সামিট পাওয়ারের ১ দশমিক ৩০৯টি শেয়ার পাবেন শেয়ারহোল্ডাররা।সামিট উত্তরাঞ্চল পাওয়ার কোম্পানির একটি শেয়ারের বিপরীতে সামিট পাওয়ারের ১ দশমিক ৬৬৮টি এবং সামিট নারায়ণগঞ্জ পাওয়ারের একটি শেয়ারের বিপরীতে সামিট পাওয়ারের ১ দশমিক ৪৭৫টি শেয়ার দেওয়া হবে।

২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডকে মঙ্গলবার বাজার থেকে থেকে তালিকাচ্যুত (ডি-লিস্টেড) করার সিদ্ধান্ত নেয় দুই স্টক এক্সচেঞ্জ।