mutual fund lagoশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজারে নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত মিউচুয়াল ফান্ড এখন বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে বিনিয়োগকারীদের কাছে। একের পর এক দরপতনে বেশিরভাগ ফান্ডের মূল্য এখন তলানিতে এসেছে। কিছুতেই যেন কাটছে না দুর্দিন। ফলে বাজার স্থিতিশীলতার এ মিউচুয়াল ফান্ড কিনে বিপাকে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, পুঁজিবাজারের প্রাথমিক বিনিয়োগকারীদের জন্য মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা সাধারণ একটি রীতি। কিন্তু পুঁজিবাজারের টানা দরপতন, ফান্ড ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম আর অদক্ষতার কারণে বড় অংকের লোকসানে পড়েছে। এছাড়া, ধারাবাহিক পতনে বেশিরভাগ ফান্ডের ইউনিটের সম্পদমূল্য ৬ থেকে ৭ টাকায় (১০ টাকার বিপরীতে) নেমেছে। লভ্যাংশ দেয়ার সক্ষমতাও নেই অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের। যার কারণে এর ওপর আস্থা হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, আমাদের বাজারে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর এ অবস্থার জন্য অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোই দায়ী। তারা ফান্ডগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারছে না। এক কথায় তাদের অব্যবস্থাপনা আর অদক্ষতার কারণেই ফান্ডগুলোর এ অবস্থা। মিউচুয়াল ফান্ডের এ দূরবস্থা থেকে উন্নয়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে বর্তমানে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ড রযেছে ৩৫টি। যেগুলোর বাজার মূলধন দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

কিন্তু ৩৫টি ফান্ডের মধ্যে ২৯টির বা ৮৩ শতাংশই দর অভিহিত মূল্যের নিচে। প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে ১৩ ফান্ডের দর। কোনো কোনো ফান্ডের ইউনিটের দর অভিহিত মূল্যের অর্ধেকের নিচে। আর এতে শত শত কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত  হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ১০ টাকার ফেসভ্যালুর ফান্ডের বর্তমান সবচেয়ে কম মূল্যে রয়েছে আইসিবি এএমসিএল ৩য় এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের। যার সর্বশেষে বাজার মূল্য চার টাকা ৪৭ পয়সা। আর সবচেয়ে বেশি ১২১ টাকায় অবস্থান করছে ৭ম আইসিবি মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবারের তথ্য অনুযায়ী, ফেসভ্যালুর নিচে থাকা কোম্পানিগুলো হলো ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ড ৫ টাকা ২০ পয়সা, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ৮ টাকা ১০ পয়সা, এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ৫ টাকা ৪০ পয়সা, এআইবিএল ফার্স্ট ৭ টাকা ১০ পয়সা, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ৬ টাকা ১০ পয়সা, ইবিএল ফার্স্ট ৫ টাকা ২০ পয়সা, ইবিএল এনআরবি মিউচুয়ালফান্ড ৫ টাকা টাকা,

এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট ৭ টাকা ৭০ পয়সা, ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড ৬ টাকা ৮০ পয়সা, গ্রিন ডেল্টা মিউচুয়াল ফান্ড ৫ টাকা ৮০ পয়সা, আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড ৮ টাকা ২০ পয়সা, আইসিবি এএমসিএল তৃতীয় এনআরবি ৪ টাকা ৮০ পয়সা, আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড মিউচুয়াল ফান্ড ৫ টাকা ২০ পয়সা,

আইসিবি এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ড মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান ৬ টাকা ৪০ পয়সা, আইসিবি এএমসিএল সোনালী ব্যাংক ফার্স্ট ৬ টাকা ৩০ পয়সা, আইএফআইসি ব্যাংক ফার্স্ট ৪ টাকা ৯০ পয়সা, আইএফআইএল ইসলামি মিউচুয়াল ফান্ড-১ এর ৭ টাকা, এলআর গ্লোবাল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ৬ টাকা ২০ পয়সা, এমবিএল ফার্স্ট ৬ টাকা ১০ পয়সা, এনসিসিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড-ওয়ান ৬ টাকা ২ পয়সা, ফোনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ৪ টাকা ৮০ পয়সা,

পিএইচপি ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ৪ টাকা ৯০ পয়সা, পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ৪ টাকা ৯০ পয়সা, প্রাইম ব্যাংক ফার্স্ট আইসিবি এএমসিএল মিউচুয়াল ফান্ড ৫ টাকা ৩০ পয়সা, রিলায়েন্স ওয়ান দা ফার্স্ট স্কিম অব রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ড ৭ টাকা ৮০ পয়সা, ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ৫ টাকা ২০ পয়সা এবং ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফিন্যান্স মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান ৯ টাকা ৬০ পয়সায় রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজারের মন্দাবস্থার কারণে ফান্ডগুলোও দূরবস্থার মধ্যে পড়েছে। যার কারণে মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা অনেক হতাশ। মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড অবসায়নকালে ইউনিটধারীরা সম্পদমূল্যের সমান অর্থ ফেরত পান।

কিন্তু কোনো ফান্ড সময়মতো অবসায়নে না গেলে তাদের কেবল বার্ষিক লভ্যাংশ আর কাগুজে লাভ-লোকসানই গুনতে হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রায় সবগুলো ফান্ডের ক্ষেত্রেই বছর শেষে বিনিয়োগকারীরা কোনো লভ্যাংশ পাচ্ছেন না। এছাড়াও লভ্যাংশ নিয়ে ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে জালিয়াতিরও অভিযোগ আছে।

তিনি বলেন, মেয়াদি ফান্ডগুলোকে সর্বাবস্থায় বিনিয়োগযোগ্য অর্থের ৬০ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হয়। মিউচুয়াল ফান্ডের গতি ফেরাতে প্রথমে বাজারকে ইতিবাচক ধারায় নিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে ব্যবস্থাপনায় যে ত্রুটি রয়েছে এগুলো শক্তভাবে ধরতে হবে।