ismot jerinইসমাত জেরিন খান : বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি অনেকটা ভালো হলেও নানাবিধ কারণে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না এখনও। বেশিরভাগ শেয়ারের দর পৌঁছে গেছে তলানীতে। বাজারে এখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসার প্রয়োজন রয়েছে। এরা বাজারে বিনিয়োগ করলে ছোট বিনিয়োগকারীরাও এগিয়ে আসবে।

এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আন্তরিকতায় পুঁজিবাজারকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আশা তৈরি হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো বাজার তার গতি ধরে রাখতে পারছে না। এর কারণ সামনে বাজেট ও রমজানকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীরা অনেকেই বাজার পর্যবেক্ষণ করছে। যার কারণে বাজেট নিয়ে অনেকেই ভয় পাচ্ছেন।

আগামী জুন পর্যন্ত বাজার ওঠানামা করতে পারে। কারণ ব্যাংক, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ইন্সুরেন্স কোম্পানি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যাদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসেব ক্লোজিং হয়েছে তাদের বেশিরভাগের রেকর্ড ডেট মে মাসে পার হবে। এ কারণে প্রত্যেক কোম্পানির রেকর্ড ডেট পরবর্তী শেয়ারের মূল্যে নিম্নমুখী প্রবণতা থাকতে পারে।

এতে করে সার্বিকভাবেও বাজারে নেতিবাচক প্রভাব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও জুনের প্রথম আর্জে বাজেট প্রভাব আসবে। সেহেতু সবারই একটা নেতিবাচক ভয় রয়েছে, এ জন্য লোকজন শেয়ার কেনা থেকে পিছিয়ে যাবে। এছাড়াও ফাইন্যান্সিয়াল ইয়ার ক্লোজিং ও আসন্ন ঈদ উপলক্ষে বিনিয়োগযোগ্য অতিরিক্ত অর্থের তারল্যের সংকট থাকতে পারে ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের। আর এসব কারণে জুন মাস পর্যন্ত বাজার নেতিবাচক পরিস্থিতি থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না।

বাজারে নতুন লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর অবস্থা দিন দিন এতটাই খারাপ হচ্ছে যে, নতুন কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের রয়েছে অনাস্থা। আর এদিকে নতুন বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যাও বাজারে বাড়ছে না। নতুন বিনিয়োগকারীরা বাজারে বিও অ্যাকাউন্ট খুললে ঋণ পেতে ১৫ কার্যদিবস সময় লেগে যায়। ঊর্ধ্বমুখী বাজারে এমন পদক্ষেপ নিলেও বাজারের স্বার্থে নতুন বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সুযোগ করে দেয়া উচিৎ।

অন্যদিকে, পুঁজিবাজারে ইতিবাচক ধারা বজায় রাখতে উৎসে কর কমানোসহ আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ছয় দফা অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। কিন্তু এতে আসলেই বাজার কতটুকু ইতিবাচক হবে তা এখন দেখার বিষয়।

বিনিয়োগকারীদের করমুক্ত লভ্যাংশ ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করার প্রস্তাব জানিয়েছে ডিএসই। ডিএসই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সক্ষমতা বাড়াতে বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবি  জানায়। আর এ জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে আরো ৫ বছর কর অবকাশ সুবিধার প্রস্তাবনা জমা দেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। এগুলো বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হলে হয়তো বাজারে ভালো পরিবর্তন আসতে পারে।

এছাড়াও ডিএসই, সিএসই, বিএসইসি, রাজস্ব বোর্ড, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংক, আইসিবি, সিডিবিএল সকলের সমন্বয়ের প্রয়োজন রয়েছে। এরা সকলে মিলে বাজারের স্বার্থে রোড শো, প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহী করতে পারে যাতে বিনিয়োগ বাড়ে।

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত ছিল। কিন্তু যখন বাজারবান্ধব সিদ্ধান্ত আসলো এবং পুঁজিবাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নমনীয় আচরণ দেখা গেল ঠিক তখন কিছু সময়ের জন্য বাজারে গতি ফিরেছে, তবে দীর্ঘ মেয়াদে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।

এদিকে, পুঁজিবাজারে এই মুহূর্তে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার দাবি করছেন বিনিয়োগকারীরা, কারণ তারা মনে করছেন কালো টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ না দিলে এই অর্থ দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে যা আমাদের অর্থনীতির উপর বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করছে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, কালো টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ আগেও ছিল তারপরও বিদেশে বিপুল অর্থ পাচার করা হয়েছে, হচ্ছে। এখন যদি কোনো টাকা অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকে সেই অর্থের উৎস রাষ্ট্র অবশ্যই জানার অধিকার রাখে। কিন্তু কালো টাকা যদি অপ্রদর্শিত অর্থ হয় তাহলে এ বিষয়ে সরকারের ভেবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।

তবে পুঁজিবাজারের স্বার্থে বাজেটে বাজার স্থিতিশীরকরণ ফান্ডের অনুমোদন দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ এ ধরনের নিম্নমুখী বাজারে যখন শেয়ারের দাম পড়তে শুরু করে তখন এ ধরনের ফান্ড থাকলে ভালো শেয়ার কিনে রাখা যায়। এতে বাজারও স্থিতিশীল হবে আবার পরবর্তীতে কম দামী শেয়ারের দর কমলে আবার শেয়ার বিক্রি করা যাবে। তবে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারকে পরিবর্তন করতে হলে সবার আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরো বেশি কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।

পুঁজিবাজারে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের দুর্বলতা কারসাজি কারকদের জন্য সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। যার কারণে এখনও বাজারে অস্বাভাবিকভাবে কিছু কিছু শেয়ারের দাম যেমন বাড়ানো হচ্ছে তেমনি আবার কমানো হচ্ছে। শুধু নীরব ভূমিকায় থাকছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

লেখক : বিজনেস এডিটর, এটিএন বাংলা