govt-lagoশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সত্ত্বেও পুঁজিবাজারে আসছে না সরকারি কোম্পানির শেয়ার। তবে গত ৬ বছওে মাত্র ৩টি সরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসার প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়েছে। আর ১৮টি প্রতিষ্ঠানেরই এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে শিগগিরই সরকারি ওসব কোম্পানির শেয়ার বাজারে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। অথচ মূলধ সঙ্কটে কোনো কোনো সরকারি কোম্পানি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।

কিন্তু শেয়ার আপলোডের ক্ষেত্রে ওসব কোম্পানিতে থাকা সরকারি আমলারা গড়িমসি করছে। নতুন নতুন অজুহাত এবং সরকারি আমলাদের অসহযোগিতার কারণেই সরকারি কোম্পানির শেয়ার বাজারে আসার প্রক্রিয়া পিছিয়ে যাচ্ছে। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারি কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে বাজার টেকসই হবে। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর অব্যবস্থাপনা অনেকাংশে কমে আসবে। তখন কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতার কারণে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বাড়বে। পুঁজিবাজারের স্বার্থে এবং স্বচ্ছতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই সরকারের উচিত যথাসময়ে কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করা। এমনকি বাজার অস্থিতিশীল হলেও সরকারি কোম্পানির শেয়ার সরবরাহ বন্ধ করা ঠিক হবে না।

কারণ ভালো শেয়ার এলে নতুন বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হবে। তাতে বিদেশী বিনিয়োগকারী এবং ভালো মিউচুয়াল ফান্ডও আসবে। ফলে বাজারের গভীরতাও বাড়বে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে মূল সমস্যা হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট। ওই সংকট কাটাতে ভালো শেয়ার থাকা জরুরি। যদিও এদেশের বিনিয়োগকারীরা হুজুগে দুর্বল বিনিয়োগ করে তবে ভালো শেয়ার এলে ওই প্রবণতা কমে আসবে।

সূত্র জানায়, বিগত ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সরকারি ৩৪ কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে তখন ওই উদ্যোগ বেশি দূর এগোয়নি। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে বাজারে ভালো শেয়ারের ভয়াবহ সঙ্কট দেখা দেয়। তারপর সঙ্কট কাটাতে সরকারি কোম্পানিকে বাজারে আনার উদ্যোগ শুরু হয়। ২০১০ সালের ১৩ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অর্থ মন্ত্রণালয় এক বৈঠকে সরকারি কোম্পানির ৫১ শতাংশ শেয়ার সরকারের হাতে রেখে বাকি শেয়ার পাবলিকের মধ্যে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ওই সময়ে কোম্পানিগুলোকে ২০১০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেয়ার ছাড়তে সময়সীমাও বেঁধে দেয়া হয়। তারপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আরেকটি বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়েছে কোম্পানিগুলোকে শেয়ার ছাড়ার তাগিদ দেয়া হয়। তবে তার মধ্যে কয়েকটি কোম্পানির সময়সীমা ২০১১ সালের ১৪ ও ৩০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু ওই সময়ে মোট কোম্পানির সংখ্যা ৩৪ থেকে কমে দাঁড়ায় ২৬টিতে।

সর্বশেষ শেয়ার ছাড়ার জন্য গতবছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হয়। তার মধ্যে গত ৬ বছরে ৫টি কোম্পানি শেয়ার ছাড়তে পেরেছে। ওগুলো হলো যমুনা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ও রূপালী ব্যাংক। কিন্তু বাকি ২১টি কোম্পানিই শেয়ার ছাড়তে ব্যর্থ হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, দীর্ঘদিন পর চলতি বছরের এপ্রিলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেন। সেই লক্ষ্যে গত ৫ মে তার সভাপতিত্বে সরকারি মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক হয়। বৈঠকে তিনটি কোম্পানি তাদের শেয়ার ছাড়ার ব্যাপারে আগ্রহের কথা জানিয়েছে। ওগুলো হলÑ এসেনসিয়াল ড্রাগস, বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস এবং লিক্যুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস।

ওই বৈঠকে বাকি কোম্পানিগুলোকে শেয়ার ছাড়ার ব্যাপারে চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে অগ্রগতি নিজ নিজ মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়। কিন্তু কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞদের মতে- সরকারি কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়তে অর্থমন্ত্রী একাধিকবার সময় বেঁধে দিয়েছেন। কিস্তু বাস্তবে তা সফল হয়নি। তবে অর্থমন্ত্রীর বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়া প্রয়োজন ছিল।

অন্যদিকে সরকারি কোম্পানিতে থাকা সরকারি আমলাদের মতে-পুঁজিবাজারের বতর্মান অবস্থা খুবই নাজুক। তলানিতে এসেছে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম। তারপর সরকারি শেয়ার ছাড়া হলে বাজার আরো খারাপ হবে। ফলে শেয়ারের ভালো দাম পাওয়া যাবে না।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. রকিবুর রহমান জানান, ২০১০ সালে ভালো শেয়ারের অভাবে বাজারে বিপর্যয় হয়েছে। কারণ বাজারে যে পরিমাণ বিনিয়োগকারী এসেছিল বিপরীতে ওই পরিমাণ ভালো শেয়ার ছিল না। অথচ নির্ধারিত সময়ে সরকারি শেয়ার ছাড়া সম্ভব হলে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার বিশ্ববাসীর কাছে দৃষ্টান্ত হতো।