dse index 12-4শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: সরকারসহ নীতি নির্ধারকরা বাজার নিয়ে একের পর এক পদক্ষেপ নিলেও ভেস্তে যাচ্ছে পুঁজিবাজার।বাজারের প্রতি ধীরে ধীরে আস্থা হারিয়ে ফেলছেন বিনিয়োগকারীরা। যার ফলে পুঁজিবাজারের ভবিষ্যত নিয়ে দু:চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারীরা । গত সপ্তাহে বাজার পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক আচরন করলেও সপ্তাহের শুরুতেই দরপতন দিয়ে লেনদেন শুরু হয়। আর এ ধারা অব্যাহত থাকে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস পর্যন্ত।

তবে মঙ্গলবার দিনের শুরুতে সুচকের উর্ধ্বমুখী প্রবনতা থাকলে দিনশেষে সামান্য সুচকের উকি মারছে। তবে এ সুচকের উর্ধ্বমুখী স্থায়িত্ব হবে কিনা এ নিয়ে দু:চিন্তায় বিনিয়োগকারীরা। ফলে পুঁজি হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকটে ধীরে ধীরে প্রকট হচ্ছে। বাজারে মাঝে মধ্যে সুচকের উকি মারলেও এটা আইওয়াজ বাজারের লক্ষন বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা।

এই সংকট কাটাতে এখনই সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। অন্যথায়, দিন দিন পুঁজি হারিয়ে বিনিয়োগকারীরা বাজার বিমুখ পয়ে পড়বেন বলে আশঙ্কা রয়েছে। এ থেকে উদ্ধারের জন্য সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজন বলে বাজার বিশ্লেষকেরা মন্তব্য করেছেন। তারা বলেছেন কর্তৃপক্ষের কথায় নয় কাজে প্রমান দেখতে চায় বিনিয়োগকারীরা।

কারন বার বার আশার বানী শুনালেও দীর্ঘ ছয় বছরে বাজার পরিস্থতি স্বাভাবিক করতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বর্তমান বাজার দরপতনের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা দায়ী।

এছাড়া গত সপ্তাহে কিছুটা উর্ধগতির পরে পরপর টানা দুই কার্যদিবসে শেয়ার বিক্রির চাপ কিছুটা বাড়ার কারণে সূচকের পতন ঘটেছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সামিট পোর্ট এলায়েন্সের রাইট শেয়ারের চাঁদা গ্রহণ শুরু হয়েছে। এছাড়া সোমবার থেকে একমি ল্যাবরেটরিজের আইপিও এবং ১৭ এপ্রিল থেকে জিপিএইচ ইস্পাতের রাইট শেয়ারের চাঁদা গ্রহণ শুরু হবে।

মূলত বাজারে নতুন তারল্য প্রবাহ কমে যাওয়ায় প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগকারীরা হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করেই এইসব চাঁদার টাকা যোগাড় করছেন। যার কারণে সার্বিকভাবে বিক্রির চাপ বেড়েছে। এছাড়া বাজারে নতুন ফান্ডের অভাবকেই দায়ী করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, চাহিদা কম থাকলেও বাজারে নতুন শেয়ার ছাড়া এবং রাইটের মাধ্যমে চাঁদা গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে। কিন্তু সেই হারে নতুন টাকা ঢুকছে না, এই কারণে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থার ঘাটতি প্রকট আকারে দেখা গেছে।

বাজার বিশ্লেষনে দেখা যায়, শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রির পরিমাণ বেশি থাকায় সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস দেশের দুই শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে। এই নিয়ে চলতি সপ্তাহে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো শেয়ারবাজারে পতন হয়েছে। একইসঙ্গে উভয় বাজারে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। এদিন ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৯  দশমিক ৭৪ শতাংশ।

অন্যদিকে মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এর ডিএসইএক্স ইনডেক্স দিনের প্রথম ভাগে ক্রয়চাপের ফলে বেশ কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবনতা দেখা যায় এবং দিনভর কিছুটা মিশ্র প্রবনতাই লক্ষ্য করা যায় এবং দিনশেষে পুনরায় বিক্রয়চাপ বৃদ্ধির ফলে নিন্মমুখি প্রবনতাই লেনদেন শেষ হয়ে সূচক ৫.৭৩ পয়েন্ট বাড়ে।

ডি.এস.ই এক্স ইনডেক্সে আজ ইনভার্টেড হ্যামার ক্যান্ডেলস্টিক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইনভার্টেড হ্যামার ক্যান্ডেলস্টিক দ্বারা সাধারণত বাজারের গতি পরিবর্তনের সম্ভাবনা প্রকাশ পেয়ে থাকে। আশা করা যাচ্ছে ক্রয়চাপ বৃদ্ধি পেলে বাজার তার স্বাভাবিক গতি নিয়ে আবার আপ ট্রেন্ড শুরু করতে পারে। বর্তমানে ডিএসই এক্স ইনডেক্স এর পরবর্তী সাপোর্ট ৪৩৭০ পয়েন্টে এবং রেজিটেন্স ৪৪২৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।  আজ বাজারে আরএসএই ( জঝও) এর মান ছিল ৪৬.৫৯ ।

এদিকে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মঙ্গলবার ৪৭৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে; যা আগের দিনের তুলনায় ৫৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বা ১৩ শতাংশ বেশি। আগের দিন এ বাজারে লেনদেন হয়েছিল ৪১৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। মঙ্গলবার ডিএসইর প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৪০৭ পয়েন্টে।

অন্যদিকে সোমবার ঢাকার বাজারে সূচক কমেছে ২৯.৩৪ পয়েন্ট। এ পতনের ফলে ডিএসই সূচক ফের ৪ হাজার ৪০০ পয়েন্টে নেমে গেছে। দিনশেষে সূচক গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪০১.৭৮ পয়েন্টে। রবিবার সূচক কমেছিল ১১.৯৩ পয়েন্ট।

উল্লেখ্য, সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এর ডিএসইএক্স ইনডেক্স দিনের প্রথম ভাগে ক্রয় চাপের ফলে বেশ কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবনতা দেখা গেলেও দিনভর কিছুটা মিশ্র প্রবনতাই লক্ষ্য করা যায় এবং দিনশেষে পুনরায় বিক্রয়চাপ বৃদ্ধির ফলে নিন্মমুখি প্রবনতাই লেনদেন শেষ হয়ে।

বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকটের কারণে বারবার এই দরপতন হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও তাতে আস্থার সংকট কাটেনি। তাই বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে আরও অনেক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, বাজারে মাঝে মাঝে সুচকের উকি মারলে তা স্থায়িত্ব রুপ নিচ্ছে না। এ কারনে বাজারের প্রতি আস্থা বাড়ছে না বিনিয়োগকারীদের। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা, বিশেষ করে মার্চেন্ট ব্যাংক ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলো বর্তমানে বাজার থেকে দূরে অবস্থান করছে।

এর ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন। আবার ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় অনেকে বিনিয়োগে আসতে পারছেন না। পুঁজি হারিয়ে অনেকে বাজার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় বাজারে ধরে রাখতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক এক সিকিউরিটিজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আস্থা ও তারল্য সংকটের কারণে পুঁজিবাজার স্বাভাবিক রুপ নিচ্ছে না। তার মধ্যে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সামিট পোর্ট এলায়েন্সের রাইট শেয়ারের চাঁদা গ্রহণ শুরু হয়েছে। এছাড়া সোমবার থেকে একমি ল্যাবরেটরিজের আইপিও এবং ১৭ এপ্রিল থেকে জিপিএইচ ইস্পাতের রাইট শেয়ারের চাঁদা গ্রহণ শুরু হবে।

মূলত বাজারে নতুন তারল্য প্রবাহ কমে যাওয়ায় প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগকারীরা হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করেই এইসব চাঁদার টাকা যোগাড় করছেন। যার কারণে সার্বিকভাবে বিক্রির চাপ বেড়েছে। এই মুহূর্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। পরে ব্যবস্থা নিলে তাতে আর কোনো কাজ হবে না।