শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে গত কয়েক কার্যদিবস ধরে ব্যাংক খাতে সুবাতাস বইছে। দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক খাতের অনাগ্রহ থাকলেও হঠাৎ ব্যাংক খাতের লভ্যাংশের চমকে এ খাতে আগ্রহ বাড়ছে। এছাড়া গত কয়েকদিন ধরে লভ্যাংশ ঘোষণা করছে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশোধন করা লভ্যাংশের মধ্যেই কোনো কোনো ব্যাংক সর্বোচ্চ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

ফলে এ খাতে আগ্রহী বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের। এছাড়া গত কয়েক মাস ধরে দর কমতে থাকা বিমা খাতের কোম্পানিগুলো মঙ্গলবার চমক দেখাল। তালিকাভুক্ত প্রায় ৯৫ শতাংশ বিমা কোম্পানির শেয়ারর দর বেড়েছে।

তবে বহুজাতিক ও দামি শেয়ারগুলো দর হারানোর কারণে সূচকে বড় ধাক্কা লেগেছে। এছাড়া এক মাসের কম সময়ে আবারও দাপটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা কোম্পানিগুলো। মঙ্গলবার লেনদেনে তালিকাভুক্ত ৪৯টি কোম্পানির মধ্যে দর কমেছে মাত্র একটির আর পাল্টায়নি দুটির। বাকি ৪৬টি দর বেড়েছে। বিমা কোম্পানির এমন দর বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক কিছু বলছেল না বাজার বিশ্লেষকরা।

অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘বিমা কোম্পানিগুলোর দর সে সময় অনেক বেশি বেড়েছিল এটা সত্য। কিন্ত তারপর আর বাড়েনি। ফলে অনেক কোম্পানির শেয়ার দর কমে আবার আগের জায়গায় ফিরেছে। ফলে বিনিয়োগারীরাও বিমা কোম্পানির শেয়ারের প্রতি আগ্রহী হয়েছে।’

গত কয়েক মাস ধরে দর কমতে থাকা বিমা খাতের কোম্পানিগুলো মঙ্গলবার চমক দেখিয়েছে। মঙ্গলবার লেনদেন ব্যাংক খাতের শেয়ার দর বেড়েছে। তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪টির দর বেড়েছে। কমেছে ১১টির। দর পাল্টায়নি ৯টির। দর বৃদ্ধি পাওয়া ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হলেও এ সময়ে যে কয়টি ব্যাংক তাদের শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে তার বেশির ভাগের দরই কমেছে।

যদিও লভ্যাংশ ঘোষণা করা সবকটি ব্যাংক যে পরিমাণ লভ্যাংশ দিয়েছে তা বতর্মানে ব্যাংকের স্থায়ী সঞ্চয়ের সুদের হারের তুলনায় অনেক বেশি। গত ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলো যখন তাদের পরিচালন মুনাফার হিসাবে প্রকাশ করেছিল তখনই বলা হয়েছিল এ সময়ে ব্যাংকগুলোর আয় অন্য সময়ের তুলনায় বেশি হবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, করোনার মহামরিতে ঋণ বিরতন না করায় মন্দ ঋণ কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে খরচ।

ফলে ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা ধারনা করেছিলেন এ বছর ব্যাংকগুলো অনেক বেশি হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য লভ্যাংশের সীমা বেধে দিয়ার পর এ খাতের অস্বিস্তী দেখা দিলে পুনরায় তা সংশোধন করায় স্বাস্তি ফিরে। যেখানে ব্যাংকগুলোর জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদ সহ ৩০ শতাংশ লভ্যাংশের সুযোগ প্রদান করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সর্বশেষ ফার্স্ট ফাইন্যান্স তাদের আর্থিত লোকসান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেয়ার হোল্ডারদের ২ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এমন খবরে মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর ১০ পয়সা বেড়ে ৪ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৫ টাকা হয়েছে। গত বছরের চেয়ে আয় কম হলেও লভ্যাংশ যত দেয়া সম্ভব ছিল, ততটাই দেয়ার প্রস্তাব করেছে ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং বা ডিবিএইচ।

২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ১৫ শতাংশ নগদ অর্থাৎ শেয়ার প্রতি দেড় টাকা নগদ ও ১৫ শতাংশ বোনাস অর্থাৎ প্রতি ১০০ শেয়ারে ১৫টি বোনাস শেয়ার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ। মঙ্গলবার এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দরের কোনো পরিবর্তন না হয়ে ৯২ টাকা ৬০ পয়সায় অপরিবর্তীত ছিল।

সিটি ব্যাংক ২০২০ সালের জন্য তার শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার প্রতি এক টাকা ৭৫ পয়সা নগদ ও প্রতি ২০টি শেয়ারে একটি বোনাস হিসেবে দেয়ার প্রস্তাব করেছে। এমন খবরের পরের দিন ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি দর ৫০ পয়সা বেড়েছে। লেনদেনে ব্যাংকটির শেয়ার দর ২৫ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৬ টাকা ২০ পয়সা।

ডাচ বাংলা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ৯০ কোটি কাটা বা ৮ শতাংশ কমলেও চূড়ান্ত মুনাফা বাড়ে ২৭ শতাংশ। এই প্রতিষ্ঠানটি গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪টির দর বেড়েছে। ডাচ বাংলার শেয়ারধারীরা এবার নগদ দেড় টাকা আর ১৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি ১০০টি শেয়ারে ১৫টি বোনাস হিসেবে পাবেন। লভ্যাংশ ঘোষণা করা এই ব্যাংকটির শেয়ার দর মঙ্গলবার শেয়ার প্রতি ৫০ পয়সা কমে লেনদেন হয়েছে ৬৬ টাকা ৭০ পয়সায়।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ৩৩ শতাংশ বা ২০০ কোটি টাকা কমলেও চূড়ান্ত মুনাফা বাড়ে প্রায় ১৫ শতাংশ। এই ব্যাংকটি আগের বছরের চেয়ে দুই শতাংশ বেশি নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এই ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা শেয়ার প্রতি ৭০ পয়সা এবং প্রতি ২০টি শেয়ারে একটি বোনাস হিসেবে পাবেন।

মঙ্গলবার এই ব্যাংকের শেয়ার দর ৪০ পয়সা করে বেড়ে হয়েছে ২১ টাকা। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ৩০৩ কোটি বা ৪০ শতাংশ কমলেও চূড়ান্ত মুনাফা গত বছরের সমান হয়। এই ব্যাংকটি গত বছরের চেয়ে শেয়ার প্রতি ১০ পয়সা কম লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এই ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা শেয়ার প্রতি এক টাকা নগদ ও প্রতি ২০টি শেয়ারে একটি বোনাস হিসেবে পাবেন। ভালো লভ্যাংশ ঘোষণা করা এই ব্যাংকের শেয়ার দরও ২০ পয়সা কমেছে।

ব্যাংক এশিয়ার পরিচালন মুনাফা ২৪০ কোটি বা ২৫ শতাংশ কমলেও চূড়ান্ত মুনাফা বাড়ে ৫ শতাংশের মতো। এই ব্যাংকটি গত বছরের সমান লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এই ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা শেয়ার প্রতি এক টাকা নগদ পাবেন লভ্যাংশ হিসেবে। ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি দর ১০ পয়সা করে কমেছে মঙ্গলবার। লেনদেন হয়েছে ১৭ টাকা ১০ পয়সায়।

প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ১০ কোটি বা ২ শতাংশ বাড়লেও চূড়ান্ত মুনাফা ৩০ শতাংশের বেশি কমে যায়। এই ব্যাংকটি গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এই ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা শেয়ার প্রতি ১ টাকা ২৫ পয়সা নগদ ও প্রতি ৪০টি শেয়ারে তিনটি বোনাস হিসেবে পাবেন। এই ব্যাংকের শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৩০ পয়সা।

ফলে আগের দিনের ১৩ টাকা ৮০ পয়সার শেয়ার এসে দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকা ৫০ পয়সায় । দ্বিতীয় দিনের লেনদেনে দর হারিয়েছে এনআরবিসি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড। এদিন ব্যাংকটির ৫০ শতাংশ করে দর বাড়া বা কমার সুযোগ থাকলেও মঙ্গলবার ব্যাংকটির শেয়ার দর কমেছে ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। লেনদেন হয়েছে ১২ টাকা ৩০ পয়সায়।