শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা:  জীবন বীমা ব্যবসার বাজার বড় হচ্ছে। এ খাতের কোম্পানির সংখ্যাও বেড়েছে। সব মিলিয়ে জীবন বীমা কোম্পানির সংখ্যা এখন ৩২। সংখ্যায় বাড়লেও এ ব্যবসার সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) তথ্য বলছে, জীবন বীমা ব্যবসার ৬০ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করছে মাত্র তিনটি কোম্পানি। এর মধ্যে মেটলাইফ একাই নিয়ন্ত্রণ করছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। পপুলার লাইফ ও ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের নিয়ন্ত্রণে আছে এ ব্যবসার যথাক্রমে ১২ দশমিক ২৫ ও ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ।

আইডিআরএর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) জীবন বীমা খাতের ৩২টি কোম্পানি প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে মোট ৩ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকার। এর ৩৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ বা ১ হাজার ৩২১ কোটি টাকাই সংগ্রহ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান মেটলাইফ। এর মধ্যে বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানিটি প্রিমিয়াম বাবদ ব্যবসা করেছে ৬৮০ কোটি ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ৬৪০ কোটি টাকার।

বাংলাদেশের বীমা বাজারে মেটলাইফের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৫২ সালে। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের ৫০টি দেশে ব্যবসা রয়েছে কোম্পানিটির। মেটলাইফের বাংলাদেশ, নেপাল ও মিয়ানমারের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. নূরুল ইসলাম।

বাংলাদেশের জীবন বীমা ব্যবসার সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রাহকদের অবিচল আস্থার কারণেই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। এ আস্থা আমরা অর্জন করেছি দীর্ঘ ৬৬ বছর ধরে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক বীমা দাবি পূরণ ও গ্রাহককেন্দ্রিক উন্নত সেবাদানের মাধ্যমে। আমরা উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহকসেবা আরো উন্নত করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি।

১২ দশমিক ২৫ শতাংশ দখল নিয়ে মেটলাইফের পরই আছে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স। জানুয়ারি-জুন সময়ে প্রিমিয়াম বাবদ কোম্পানিটি ব্যবসা করেছে ৪৬৪ কোটি টাকার। এর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে ব্যবসা হয়েছে প্রায় ২৭৬ কোটি ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১৮৯ কোটি টাকার মতো।

২০০০ সালে জীবন বীমা বাজারে যাত্রা করে ২০০৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় কোম্পানিটি। পপুলার লাইফের মোট শেয়ারের ২৮ দশমিক ৯২ শতাংশ উদ্যোক্তা-পরিচালক, ৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান, শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগকারী ও ৬৫ দশমিক ১৯ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

মার্কেট শেয়ারের বিষয়ে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিএম শওকত আলী বলেন, মূলত নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনামতো কার্যক্রম পরিচালনার ইতিবাচক প্রভাব আমাদের ব্যবসায় পড়েছে। এছাড়া আমরা নিজেরাও বীমা দাবি পরিশোধে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাচ্ছি। মূলত এ কারণেই আমাদের ব্যবসা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।

জীবন বীমার ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ বাজার দখল নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে কোম্পানিটি প্রিমিয়াম বাবদ ব্যবসা পেয়েছে ৪৬০ কোটি টাকার। এর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে ব্যবসা পেয়েছে ১২৯ কোটি ৫৭ লাখ ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৩৩০ কোটি ৮৯ লাখ টাকার।

২০০০ সালে ব্যবসা শুরু করা ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৫ সালে। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৩৬ দশমিক ১৮ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা-পরিচালকের হাতে। এছাড়া ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান, ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগকারী ও ২৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

চলতি বছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে গ্রস প্রিমিয়াম আয়ে শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে উপরের দিকে আছে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ২০১৮ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে কোম্পানিটির গ্রস প্রিমিয়ামের পরিমাণ ২৫০ কোটি টাকা, যা এ খাতের মোট প্রিমিয়ামের ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। এছাড়া ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের গ্রস প্রিমিয়াম ২২৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা, যা মোট ব্যবসার ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।

রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বীমা করপোরেশনের দ্বিতীয় প্রান্তিকে গ্রস প্রিমিয়ামের পরিমাণ ৯৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রথম প্রান্তিকে ১১৫ কোটি ২ লাখ টাকা প্রিমিয়াম অর্জন করেছিল রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিক মিলে জীবন বীমা করপোরেশনের গ্রস প্রিমিয়াম দাঁড়িয়েছে ২০৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা, যা ওই সময় এ খাতে সংগৃহীত মোট প্রিমিয়ামের ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ।

চলতি বছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিক মিলে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের গ্রস প্রিমিয়াম দাঁড়িয়েছে ১১৬ কোটি ৫ লাখ টাকা, যা ওই সময়ে এ খাতের মোট প্রিমিয়ামের ৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। একইভাবে ২০১৮ সালের প্রথম দুই প্রান্তিকে মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের গ্রস প্রিমিয়ামের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১১ কোটি ও প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১০৩ কোটি টাকা।

এদিকে নতুন অনুমোদন পাওয়া বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে গার্ডিয়ান লাইফের গ্রস প্রিমিয়ামের পরিমাণ ৩৮ কোটি ৭৮ লাখ ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৪৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। দুই প্রান্তিক মিলে কোম্পানিটি প্রিমিয়াম বাবদ ব্যবসা করেছে ৮২ কোটি ৬২ লাখ টাকার, যা ওই সময়ে এ খাতের মোট ব্যবসার ২ দশমিক ১৮ শতাংশ।

কোম্পানিগুলোকে ব্যবসা বাড়াতে হলে পলিসির আধুনিকায়ন করতে হবে বলে জানান আইডিআরএর নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন, যুগ্ম সচিব) খলিল আহমদ। তিনি বলেন, যাদের সক্ষমতা আছে, তারা ব্যবসা আনতে পারছে। যাদের নেই, তারা পারছে না।

বর্তমানে জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান ১ শতাংশেরও কম। তবে ২০২১ সালের মধ্যে তা ৪ শতাংশে উন্নীতের নির্দেশনা রয়েছে সরকারের। এ অবস্থায় পলিসি আধুনিকায়নের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোকে ব্যবসা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বাড়াতে হবে পলিসির সংখ্যাও। নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ থেকে এরই মধ্যে কোম্পানিগুলোকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।