শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা:: নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত অংশীদার হিসাবে চীনের সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামের ৯৪৭ কোটি টাকার মধ্যে ৯০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে দেশের পুঁজিবাজারে। আগামী অক্টোবর মাসেই এই অর্থ বিনিয়োগ হওয়ার কথা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পুঁজিবাজারে মানুষের আস্থা বাড়ানোর পাশাপাশি তারল্য সংকট দূর করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা এখন সময়ের ব্যাপার বলে ডিএসইর ট্রেক হোল্ডারা মনে করেন। কৌশলগত অংশীদার হিসাবে চীনের সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামের টাকা পুঁজিবাজার ঢুকলে বাজারের চিত্র পাল্টে যাবে। বিনিয়োগকারীদের বাজারের প্রতি আস্থা বাড়বে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনা দুই প্রতিষ্ঠানের টাকা এলে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বড় বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ বাড়াবে। এতে বাজারের গতি বাড়বে। কারন সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সরকার চীনা দুই প্রতিষ্ঠানের টাকা শেয়ারবাজারে আনতে উৎসে কর ১০ শতাংশ কমিয়েছে। এর ফলে চীনা দুই প্রতিষ্ঠানের টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে উৎসে কর দিতে হবে ১৫ শতাংশের বদলে ৫ শতাংশ হারে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বলেন, ‘চীনের সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ আমরা দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবো। এ জন্য এনবিআর থেকে একটি এসআরও জারির অপেক্ষা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডিএসই’র শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে যারা চীনা দুই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ তিন বছরের জন্য দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবেন, তাদের উৎসে কর দিতে হবে ১৫ শতাংশের বদলে ৫ শতাংশ হারে। এ কারণে ডিএসই’র সব সদস্যই চীনা দুই প্রতিষ্ঠানের টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে চান।’

মো. রকিবুর রহমান আরও বলেন, ‘উৎসে কর ৫ শতাংশ করা হলে বাজারে বিনিয়োগ বেড়ে যাবে এবং বাজারের প্রতি মানুষের আস্থাও বাড়বে।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘এনবিআর থেকে এ সংক্রান্ত এসআরও জারি হলেই আমরা বিনিয়োগ শুরু করে দেবো। উৎসে কর ৫ শতাংশ কার্যকর হলে এবং ডিএসই’র সদস্যরা আরও ৩৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করলে; প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা নতুন করে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হবে।’

এদিকে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর শেয়ারহোল্ডাররাও এনবিআর থেকে এ সংক্রান্ত একটি এসআরও জারির অপেক্ষায় রয়েছেন। যদিও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্র বলছে, চীনের দুই প্রতিষ্ঠানের অর্থ বিনিয়োগের শর্তেই উৎসে কর ১৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার বিষয়ে গত সপ্তাহে সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উৎসে কর ১০ শতাংশ কমানোর বিষয়ে এনবিআর কর্মকর্তারা কাজ এগিয়ে রাখলেও এ সংক্রান্ত এসআরও জারি হতে সেপ্টেম্বর মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, এনবিআরের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এখন দেশের বাইরে রয়েছেন। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, ‘ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যরা ৯০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে শেয়ারবাজারে তারল্যের প্রবাহ বাড়বে। এতে বড় বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ বাড়াবেন। ফলে এই বাজারের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ আবারও বাড়তে পারে। এমনকি বিদেশিদের আস্থাও বাড়বে।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘পরিচালনায় চীনা দুই প্রতিষ্ঠান আসায় এই পুঁজিবাজারে চীনের বিনিয়োগ আসতে শুরু করবে। এছাড়া, চীনের দুই প্রতিষ্ঠান ডিএসই’র কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ায় শেয়ার বাজারে কারসাজি কমে আসবে। তারা যেহেতু বিদেশি প্রতিষ্ঠান, সেহেতু তাদের দেখে এই বাজারে আরও বিদেশি প্রতিষ্ঠান আকৃষ্ট হবে।’

এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনের দুই প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া প্রায় ৯৪৭ কোটি টাকার ওপর কর সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে এই সুবিধা নেওয়ার জন্য ওই অর্থ তিন বছরের জন্য শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের শর্ত দেন তিনি।

ওই অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স চার্জ করা হবে বলেও জানান তিনি। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, চীনা কনসোর্টিয়াম থেকে প্রাপ্ত ৯৪৭ কোটি টাকার ওপর ৫ শতাংশ হারে ৪৭ কোটি টাকার ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স দিতে হবে। বাকি ৯০০ কোটি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, ‘যেহেতু আমরা সরকারকে উৎসে কর ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ দিতে চাই, সেহেতু তিন বছরের জন্য চীনা দুই প্রতিষ্ঠানের টাকা দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে আমরা বাধ্য।’

এদিকে, গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রায় ৯৬২ কোটি টাকা ডিএসইর ব্যাংক হিসাবে জমা দিয়েছে চীনা কনসোর্টিয়াম। এরমধ্যে স্ট্যাম্প খরচ বাবদ ১৫ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে। বাকি ৯৪৭ কোটি টাকা পাচ্ছেন ডিএসইর সদস্যরা। বর্তমানে ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার রয়েছেন ২৩৭ ব্রোকার। এই হিসাবে প্রত্যেক ব্রোকারের নামে জমা হয়েছে তিন কোটি ৭৮ লাখ টাকা করে।

প্রসঙ্গত, ডিমিউচুয়ালাইজেশনের শর্ত বাস্তবায়নে ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার চীনা কনসোর্টিয়ামের কাছে বিক্রি করা হয়। ইতোমধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে শেয়ার হস্তান্তর করেছে ডিএসই। শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের আইটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল জি ওয়েনহাইকে ডিএসই পরিচালনা পর্ষদের সদস্যও করা হয়েছে।

সুত্র: দেশ প্রতিক্ষণ