suchokআরিফুর রহমান, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে বেশ কিছুদিন ধরে ব্যাংক খাতের শেয়ারের উর্ধ্‌বগতিতে বাজারে সুচক ও লেনদেন হু হু করে বাড়ছে। তবে ব্যাংত খাতের শেয়ারের দর বাড়াটা বাজারের জন্য শুভ লক্ষন নাকি এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মাঝে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। আজ লেনদেনের শুরুতে ব্যাংক খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার হল্টেডের পথে।

তবে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন ও দরবাড়ায় তালিকায় অধিকাংশেই ব্যাংক। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, পুবালী ব্যাংক, আল আরাফাহ ব্যাংক, এক্মিম ব্যাংক দর বাড়ছে অনেক। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তাছাড়া চাঙ্গা বাজারে বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের ২৮ ব্যাংকের শেয়ার দর এক থেকে দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরে লেনদেন হচ্ছে। তবে এ নিয়ে আশঙ্কার কিছু নেই বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্ট ও বিশ্লেষকরা।

তবে গত এক বছর আগেও দেশের পুরো শেয়ারবাজারে একদিনে ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন ছিল বহু আকাঙ্ক্ষিত। সেখানে গত সোমবার একদিনে ব্যাংক খাতেই ৫০০ কোটি টাকার ওপরে শেয়ার কেনাবেচা নজর কেড়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে সোমবার ব্যাংক খাতের ৩০ কোম্পানির ৫১২ কোটি ১৬ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা হয়। এর পরিমাণ বাজারের মোট লেনদেনের সাড়ে ২৩ শতাংশ।

অপর শেয়ারবাজার সিএসইতে তালিকাভুক্ত ২৯ ব্যাংক কোম্পানির প্রায় ৩৩ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়, যা এ বাজারের মোট লেনদেনের প্রায় ২৮ শতাংশ। ২০১০ সালের ডিসেম্বরের পর গত ছয় বছরে এ খাতে এত বেশি শেয়ার লেনদেন হয়নি।

ব্যাংক খাতের এ লেনদেনে ভর করে সোমবার দুই শেয়ারবাজারের লেনদেন দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা ছাড়াতে সর্বাধিক ভূমিকা রেখেছে। রোববারের তুলনায় এ লেনদেন ৫৩২ কোটি টাকা বা ৩০ শতাংশের বেশি। গতকাল ডিএসইর লেনদেন ৫১২ কোটি টাকা বেড়ে প্রায় দুই হাজার ১৮১ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া সিএসইতে প্রায় ১২০ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

ব্যাংক খাতের শেয়ারদর ও লেনদেন বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ৩১ ডিসেম্বর হিসাব বছর শেষে লভ্যাংশ ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসায় সক্রিয় বিনিয়োগকারীদের এক বড় অংশ বিভিন্ন ব্যাংকের শেয়ার কিনছে। এতে এ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বাড়ছে। পাশাপাশি লেনদেনও সাম্প্রতিক সময়ের তুলনায় বহু গুণ বেড়েছে।

তাদের মতে, দীর্ঘদিন ধরেই অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ার দর তলানিতে ছিল। এমনকি বেশকিছু ব্যাংকের শেয়ার দর অভিহিত মূল্যের নিচে অবস্থান করে। এতে করে এ খাতে নতুন করে বিনিয়োগের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে ৩১ ডিসেম্ভর এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাব বছর সম্পন্ন হওয়ায় ডিভিডেন্ড ঘোষণার সময়ও ঘনিয়ে এসেছে। সর্বশেষ প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকেও বেশিরভাগ ব্যাংকের মুনাফা ও শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস বেড়েছে।

ফলে পুঁজিবাজারের মৌলভিত্তি হিসেবে খ্যাত ব্যাংকিং খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। এদিকে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো নতুন করে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। আর ব্যাংকের আমানতের সুদ হার সর্বনিন্ম পর্যায়ে থাকায় বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকে টাকা না রেখে শেয়ারে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে শেয়ার দরে। এছাড়া পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল তাতে এ খাতে বিনিয়োগ করা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা দ্বিধা-দন্দ্বে ছিলেন। ইতোমধ্যে সেই জটিলতারও অবসান হয়েছে।

সার্বিক দিক বিবেচনায় ব্যাংকিং খাতের শেয়ার দর বাড়ার যথেষ্ট সুযোগ তৈরি হয়। তাই এ খাতের শেয়ার দর যেভাবে বাড়ছে তা স্বাভাবিক এবং এনিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বর্তমানেও এ খাত বিনিয়োগ অনুকূলে রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মশিহর সিকিউরিটিসের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) এ. এল. ভট্টাচার্য্য টুটুল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকিং খাতের শেয়ার দর যে অবস্থানে ছিল তাতে বাড়ার যথেষ্ট সুযোগ ছিল। অন্যদিকে বাংকের আমানতের সুদের হারও সর্বনিন্ম পর্যায়ে রয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকে টাকা না রেখে ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন। যার প্রভাব পড়েছে বাজার ও শেয়ার দরে। এনিয়ে আশঙ্কার কিছু নেই।