shepardশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: হঠাৎ মুনাফার ব্যাপক উল্লম্ফন দেখিয়ে সম্প্রতি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে শেয়ার ক্রয়ের আজ থেকে আবেদন সংগ্রহ করেছে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ।। ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের করতে চায় শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। তবে অর্থ উত্তোলনের আগেই কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক মুনাফার উল্লম্ফন, সম্পদের অতিরঞ্জিত প্রকাশ, যথাযথ ভাবে অবচয় নির্ধারনের অভিযোগ উঠেছে।

কিন্তু পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে কোম্পানির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করে, অর্থ উত্তোলনের অনুমোদনে দেওয়ার বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একইভাবে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজও মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখিয়েছে। তেমনি কোম্পানিটিতে আইনভঙ্গসহ নানা অসঙ্গতি রয়েছে।

কিন্তু মুনাফাধারী কোম্পানিটি যাথাসময়ে শ্রমিকদের বেতন বাতা পরিশোধ না করায় কোম্পানিটির কারখানায় বিভিন্ন সময়ে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিকদের দাবি, বেতন-ভাতা নিয়ে মালিক পক্ষের টালবাহানা অব্যাহত থাকলে যেকোন সময় কোম্পানিটির উৎপাদনে বড়ধরনে বিপত্তি ঘটতে পারে।

অভিযোগ রয়েছে, শ্রমিকদের কর্মঘন্টার অতিরিক্ত কাজ করানো হলেও অতিরিক্ত কাজের মুজরি প্রদান করা হয় না। যদি কেউ অতিরিক্ত কাজের মুজরি চায় তবে তাকে চাকুরি থেকে  অব্যহতি প্রদান করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

শ্রম আইন অনুযায়ী, কর্মসময় ৮ ঘন্টা হলেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের আটকে রেখে জোরপূর্বক ১০ থেকে ১২ ঘন্টা কাজ করায় এমন অভিযোগ শ্রমিকদের। অতিরিক্ত কাজের বিপরীতে শ্রমিকদের বোনাস দেওয়ার কথা থাকালেও গায়ের জোরে তা পরিশোধ করছে না কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া শ্রমিকদের সাথে নিয়মিত প্রতারণা করছে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, এমন অভিযোগও রয়েছে। একইসঙ্গে শ্রমিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। কোম্পানিটি ২০০৬ সালের বাংলাদেশ শ্রম আইনানুযায়ী, নীট আয়ের ৫শতাংশ হারে ফান্ড গঠন এবং বিতরণ কোনোটাই করছে না। ফলে শ্রমিকরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

হিসাববিদদের মতে, বিএএস-৩৬ অনুযায়ি যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ইমপেয়ারম্যান্ট লস হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু কোম্পানিগুলো তা না করে সম্পদ ও মুনাফা বেশি দেখায়। এ ক্ষেত্রে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজও এর ব্যতিক্রম না। কোম্পানিটিও সম্পদ এবং মুনাফা বেশি দেখিয়ে আসছে। যার প্রমাণ পাওয়া গেছে স্থায়ী সম্পদ বিক্রয়ের ক্ষেত্রে।

কোম্পানিটি ২০১৬ সালের এপ্রিল-জুনে ৬ লাখ টাকার মটর যানবাহন বিক্রয় করেছে। যে মটর যানবাহন ৮.১৪ লাখ টাকা হিসাবে সম্পদ দেখিয়ে আসছিল। অর্থাৎ সম্পদ বেশি দেখিয়ে আসছিল। এসব সম্পদের ক্ষেত্রে ইমপেয়ারম্যান্ট লস দেখাতে হয়। যাতে ব্যয় বেড়ে মুনাফা কম হয়। একইসঙ্গে সম্পদের প্রকৃত চিত্র থাকে। কিন্তু তা না করে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ সম্পদ ও মুনাফা বেশি দেখায়। এই কোম্পানিটিই আবার বলেছে ইমপেয়ারম্যান্ট লস হয়নি।

প্রাচীর, ফ্যাক্টরির ভিতরে রাস্তা, পার্কিং প্লেস, বাগান ইত্যাদি ল্যান্ড ডেভোলপমেন্ট। এসব সম্পত্তির নির্দিষ্ট আয়ুস্কাল আছে। যে কারণে বিএএস-১৬ অনুযায়ী, ল্যান্ড ডেভোলপমেন্ট অবচয়যোগ্য সম্পদ। কিন্তু শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এ সম্পদের ওপর অবচয় চার্জ না করে সম্পদ ও মুনাফা বেশি দেখিয়ে আসছে।

এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, তালিকাভুক্তির মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মাত্র ১৬ শতাংশ শেয়ার ছাড়লেও প্লেসমেন্ট বিক্রি ও প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে মালিকানার ৯২ শতাংশই ছাড়ছে কোম্পানিটি। ফলে, কোম্পানির ভবিষৎ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

এছাড়াও রোববার (৮ জানুয়ারি) কোম্পানিটির আইপিও আবেদন শুরু হলেও সোমবার রাতে (নিউজ লিখা পর্যন্ত) কোম্পানিটির প্রসপেক্টাস বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি। এতে করে কোম্পানিটির তর্থ প্রকাশে বিএসইসির অনিহাও ফুটে উঠেছে বিনিয়োগকারীদের সামনে।

শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করলেও শুধুমাত্র অভিহিত মূল্যে শেয়ারবাজারে আসছে। কোম্পানিটি ২ কোটি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চায়। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে শেয়ার ইস্যু করা হবে।

এ বিষয় শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে আইপিও মাধ্যমে এসে অধিকাংশ কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের টাকা লুটেপাটে খাচ্ছে। এখন কোম্পানিগুলো ইস্যু ম্যানেজারদের সহযোগিতায় বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারণা করছে। কোম্পানিতে কিছু না থাকলেও তারা সুন্দর করে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করে। এমন কোম্পানির আইপিও অনুমোদনে বিএসইসির সতর্ক হওয়া দরকার।

এসব বিষয়ে কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আতাউর রহমান  সাথে মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

চলবে …………………