meghna-condenএ কে এম তারেকুজ্জামান , শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ার দর কোন কারন ছাড়াই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তবে এ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়াটা বাজারের জন্য অশনি সংকেত। ২০১০ সালে এমন কিছু কোম্পানির শেয়ারের দর লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছিল। পরে পরিস্থিতি সবারই জানা।

বর্তমানে মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক শেয়ারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ কোম্পানির শেয়ারের দর কোন কারন ছাড়াই লাগাতর বাড়ছে। এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নজরদারীতে দাপট কমছে না মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের শেয়ার। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও এক ধরনের আশঙ্কা কাজ করছে।

বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন বাজার নিয়ে বারবার কারা খেলছে। তাদের আসল উদ্দেশ্য কি এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত। এছাড়া বেশ কিছুদিন ধরে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীল করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক সব ধরনের বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্টরা যার যতটুকু সাধ্য তা নিয়ে চেষ্টা করছেন।

কিন্তু তারপরও কোথাও যেনো একটি গলদ থেকে যাচ্ছে এবং বাজার উঠতে গেলেই একটি অদৃশ্য শক্তি সূচকের পেছন থেকে নিচের দিকে টেনে ধরে। মূলত এই অদৃশ্য শক্তিটিই বার বার পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে কাজ করছে।

২০১০ সালের পুঁজিবাজার ধ্বসে এদের সক্রিয়তা ছিল। এদের কারনে নিংস্ব হয়েছে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন এরা কারা? বিএসইসির চেয়ে কি এরা শক্তিশালী?

একাধিক বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএসইসিতে নাকি অত্যাধুনিক সার্ভিল্যান্স সফটওয়্যার আছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে বসানো হয়েছে এ সফটওয়্যার। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ সফটওয়্যারের কাজ কি? সবচেয়ে বড় কথা হলো যা খালি চোখে দেখলেই অস্বাভাবিক মনে হয় তার জন্য সার্ভিল্যান্সেরই কি প্রয়োজন?

এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারগুলো ননমার্জিনেবল, বেশিরভাগের মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) রয়েছে ৪০-এর উপরে। এসব শেয়ারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। আর ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় এসব শেয়ার কিনতে সিকিউরিটিজ হাউস বা মার্চেন্টব্যাংকগুলো ঋণ সরবরাহ করে না। কিন্তু তারপরও এসব কোম্পানির শেয়ারের দর প্রতিনিয়ত বাড়ছে। যাকে ‘ব্যাকরণ বর্হিভূত’বলে আখ্যায়িত করেছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা।

তবে বিষয়টি নজর এড়ায়নি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের। ইতোমধ্যে কয়েকটি কোম্পানিকে দর বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে নোটিস পাঠিয়েছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ। জবাবে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তাদের শেয়ারদর বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই।

mg-condenবাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ডিএসইতে এক মাসে মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের শেয়ারদর বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ২৪ নভেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৬ টাকা ৭০ পয়সা। ২৭ ডিসেম্বর তা ১০ টাকা ৩০ পয়সায় উন্নীত হয়।

লোকসানের কারণে ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৬ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক। এ সময় কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৩৫ পয়সা। ৩০ জুন পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি দায় (ঋণাত্বক এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৮ টাকা ৯২ পয়সা।

সর্বশেষ প্রকাশিত অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি হিসাব বছরের প্রথম (জুলাই- সেপ্টেম্বর) প্রান্তিকে এর শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৬৩ পয়সা, যেখানে আগের বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ১ টাকা ৮ পয়সা। ৩০ সেপ্টেম্বর এর শেয়ারপ্রতি দায় (ঋণাত্বক এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৯ টাকা ৫৫ পয়সা।

ডিএসইতে সর্বশেষ ১১ টাকা ৬০ পয়সায় মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের শেয়ার হাতবদল হয়।  গত এক বছরে এ শেয়ারের সর্বনিম্ন দর ছিল ৬ টাকা ৩০ পয়সা ও সর্বোচ্চ ১১ টাকা ৩০ পয়সা।