zশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে ক্রমেই ভারি হচ্ছে ‘জেড’ ক্যাটাগরির পাল্লা। ফলে এটা বাজারের জন্য অশনি সংকেত মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। কারন বিনিয়োগকারীদের টাকায় কোম্পানিগুলো ব্যবসা করলেও বছর শেষে মনগড়া নো ডিভিডেন্ড ঘোষনা করে। ফলে কোম্পানিগুলো ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে চলে যাচ্ছে। আর বিনিয়োগকারীরা দিনের পর দিন লোকসানের বোঝা বইছেন।

ব্যবসায় কাঙ্খিত মুনাফা করতে না পারায় বিনিয়োগকারীদের নিয়মিত ও ন্যূনতম লভ্যাংশ দিতে পারছে না পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি। ফলে এসব কোম্পানির এখন ঠাঁই হয়েছে ‘জেড’ক্যাটাগরিতে।

ফলে ক্রমেই ভারি হচ্ছে জেড ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠানের পাল্লা। সম্প্রতি এই তালিকায় যোগ হয়েছে আরও ৩টি কোম্পানি। এগুলো হচ্ছে বঙ্গজ, তাল্লু ও সিনো বাংলা। লভ্যাংশ না দিতে পারায় কোম্পানিগুলো জেড ক্যাটাগরিতে নেমে গেছে। ফলে এখন জেড ক্যাটাগরির কোম্পানি সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৭। যা মোট তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রায় ১৬ শতাংশ।

এদিকে কোম্পানিগুলো জেড ক্যাটাগরিতে থাকায় এসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। সংশ্লিষ্টদের মতে দুর্বল কোম্পানির আইপিওর অনুমোদন দেয়ার কারণেই ভারি হচ্ছে জেড ক্যাটাগরির পাল্লা।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের মন্দ ব্যবসার প্রভাবেই এবারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর নো ডিভিডেন্ড বা লভ্যাংশ না দেয়ার প্রবণতা বাড়ছে। ফলে শেয়ারবাজারেও ওই কোম্পানিগুলোর দর কমেছে। এখন পর্যন্ত এ বছর নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ৩০টি কোম্পানি।

কোম্পানিগুলো হলো : শাইনপুকুর সিরামিক,বেক্সিমকো সিনথেটিকস, ঝিল বাংলা সুগার, শ্যামপুর সুগার, বিডি ওয়েল্ডিং, সুহদ ইন্ডাস্ট্রিজ, আজিজ পাইপস, আইএসএন, জুটস স্পিনার্স, মেট্রো স্পিনার্স, বিআইএফসি, দুলা মিয়া কটন, দেশবন্ধু পলিমার, মেঘনা পেট, অলটেক্স, রহিমা ফুড,

সমতা লেদার, ইমাম বাটন, কে এ্যান্ড কিউ, বিডি সার্ভিসেস, বিচ হ্যাচারী, বঙ্গজ, ঢাকা ডাইং, সাভার রিফ্যাক্টরিজ, খুলনা প্রিন্টিং এ্যান্ড প্যাকেজিং, লিগ্যাসি ফুটওয়ার, ম্যাকসন্স স্পিনিং, সিনো বাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ ও তাল্লু স্পিনিং।

ডিএসইর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, জেড ক্যাটাগরিতে চলে যাওয়া এই কোম্পানিগুলো বেশিরভাগই আগের অর্থবছরে নো ডিভিডেন্ড দেয়ার কারণে জেড ক্যাটাগরিতেই ছিল। এই তালিকায় নতুন করে যোগ হয়েছে অলটেক্স, সিনো বাংলা, বঙ্গজের মতো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি।

এই তিনটি কোম্পানিরই সমাপ্ত অর্থবছরে মুনাফা করেছে। কিন্তু কোম্পানি তিনটির পরিচালনা পর্ষদ বিনিয়োগকারীদের জন্য কোন লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। ফলে কোম্পানি তিনটির দরও হঠাৎ করেই তলানিতে চলে গেছে। বড় ধরনের লোকসানে পড়ে গেছে বিনিয়োগকারীরা।

কিন্তু লাভে থেকেও কোন লভ্যাংশ ঘোষণা না করায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা উভয় স্টক একচেঞ্জের পক্ষ থেকে তদন্ত করারও নজির নেই। এই কারণে কোম্পানিগুলোরও কোন জবাবদিহিতা নেই। উল্টো এজিএমে ভাড়াটে লোক দিয়ে এজেন্ডা পাশ করানোর অভিযোগও বেশ পুরনো।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বঙ্গজের কোম্পানি সচিব ফিরোজ ইফতেখার বলেন, কোম্পানির আয় কমে যাওয়ায় আমাদের সীমাবন্ধতা বেড়ে গেছে। যে কারণে আমরা ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও শেয়ার শেয়ার লভ্যাংশ দিতে পারেনি। যার ফলে আমাদের কোম্পানি জেড ক্যাটাগরিতে নেমে গেছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ট্রেজারি বন্ড, ডিবেন্ডার, মিউচুয়াল ফান্ড ছাড়া প্রধান বাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন খাতের কোম্পানির সংখ্যা ২৯৪টি। এর মধ্যে ব্যাংক, বীমা, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ছাড়া বাকি সব কোম্পানিরই হিসাব বছর জুন মাসে শেষ হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নতুন আইন অনুসারে এই কোম্পানিগুলোই আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কোন লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, কোম্পানিগুলো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলেছে। তালিকাভুক্তির পর থেকেই মুনাফা কমতে কমা শুরু হয়েছে। প্রথম দুই তিন বছর লভ্যাংশ প্রদান করলেও আস্তে আস্তে লভ্যাংশ দেয়া কমিয়ে দিতে দিতে নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। তাই আইপিও অনুমোদন করার সময় সংশ্লিষ্টদের আরও যত্নবান হওয়া উচিত।  বিশেষ করে কোম্পানি সম্পর্কে তথ্য-যাচাই বাছাই করা ছাড়া আইপিও অনুমোদন দেয়া উচিত নয়।

এ প্রসঙ্গে সাবেক উপদেষ্টা মীর্জা আজিজুল ইসলাম বলেন কোম্পানির আইপও অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে একটু হিসাবি হওয়া দরকার। কারণ দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্তির সুযোগ পেলে তাতে বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিকিউরিটিজ এ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন অব বাংলাদেশের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. খায়রুল হোসেনও আইপিও অনুমোদনে এ দুর্বলতার কথা স্বীকার করেছেন।