bsec lagoএইচ কে জনি, দেশ প্রতিক্ষণ: উন্নত বিশ্বের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক পরিস্থিতি ও দেশের অন্যান্য খাতের সূচকের ওপর ভিত্তি করে নতুন নতুন রিসার্চ পেপার দেয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো। যার মাধ্যমে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারে সাধারণ ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা।

কিন্তু বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষণা ও বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্ট তৈরি ও প্রকাশ না কারায় সঠিক দিক-নির্দেশনা পাচ্ছে না সাধারণ ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন অনলাইনে প্রকাশিত মূল্যসংবেদনশীল তথ্য ও গুজবে কান দিয়ে বিপাকে পড়ছেন তারা।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে নিয়ে যদি সিকিউরিটিজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে গবেষণাপত্র প্রদান করা হতো সেক্ষেত্রে গুজবনির্ভর বিনিয়োগ কমে যেত। অন্যদিকে, নতুন আয়ের উৎস সৃষ্টি হতো সিকিউরিটিজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর।

তাদের মতে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে যদি তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক পরিস্থিতি ও অতীত তথ্য পর্যালোচনা করে গবেষণাপত্র তৈরির জন্য রিসার্চ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করা হয় তবে লাভবান হবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

জানা যায়, ২০১০ সালে ধস-পূর্ববর্তী সময়ে দেশের খ্যাতনামা সিকিউরিটিজ হাউসগুলোর পক্ষ থেকে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক অবস্থা পর্যালোচনা করে রিসার্চ রিপোর্ট প্রদান করা হতো। কিন্তু এর পর থেকে ধীরে ধীরে রিসার্চ রিপোর্ট প্রদান করা বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পৃথক একটি রিসার্চ বিভাগ থাকলেও তা শুধু বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের জন্যই সীমাবদ্ধ। ফলে, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক অবস্থা ও শেয়ার দরের যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে পারে না। অনুসন্ধানে আরো দেখা যায়, পুঁজিবাজারে রিসার্চ ও বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্টগুলো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বাজার সম্পর্কে সম্যক ধারণা ও বর্তমান বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা দেয়।

দেশের পুঁজিবাজারে থাকা ট্রেকহোল্ডার অর্থাৎ স্টক ব্রোকারদের অনুমোদন না থাকার ফলে বাজার সংক্রান্ত কোনো গবেষণা করার অনুমতি পান না তারা।  জানা যায়, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ বেশি হয়। বিগত কয়েক বছরের হিসাবে দেখা যায়, দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে।

অর্থাৎ মার্চেন্ট ব্যাংকের রিসার্চ ডিপার্টমেন্টের তৈরি করা এসব গবেষণা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। এসব গবেষণার ওপর নির্ভর করে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়লেও পুঁজিবাজারে নতুন দেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে না। প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও’র মাধ্যমে টাকা তোলার সময় বিও অ্যাকাউন্টধারীদের আগ্রহ দেখা গেলেও লেনদেন শুরু হওয়ার সময়ই তারা বাজার থেকে শেয়ার বিক্রি করে চলে যান।

বাজার সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রে বাজারে বিনিয়োগকারীরা আসেন না। বাজার সম্পর্কে যথাযথ প্রচার করা হলে এবং সাধারণ মানুষের মন থেকে পুঁজিবাজারে আসলেই লোকসান হবে এই ভয় দূর করতে পারলে নতুন বিনিয়োগকারীদের আগমন ঘটবে এবং বাজারে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি হবে বলে মনে করছেন বাজার-বিশ্লেষকরা।

স্টক ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে মাত্র ১০ শতাংশ কোম্পানি গবেষণা কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে। এসব গবেষণা কাজের অধিকাংশই করা হচ্ছে বিদেশি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য। বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এ আশঙ্কায় স্টক ব্রোকারদের গবেষণা কাজের অনুমতি দেয়া হয় না। কিন্তু মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর এ সংক্রান্ত ব্যাপারে গবেষণা করার অনুমোদন ও তা করার জন্য দক্ষ জনবল উভয়ই আছে।

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে এসব রিসার্চ রিপোর্টের ব্যাপারে কোনো ধরনের প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থাও নেই। তাই বিনিয়োগকারী ও বাজার বিশ্লেষকদের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে বাজারকে গতিশীল ও কার্যকর করতে এসব রিসার্চ পেপার বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত করা।  সেই সঙ্গে ব্যাপক পরিসরে তা প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা করা যাতে বিনিয়োগকারীরা এর মাধ্যমে বিনিয়োগের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সুত্র: দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ