riskশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন খাতের ১২ কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে। ফলে এসব কোম্পানিতে নতুন করে বিনিয়োগ করার ভরসা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। তাছাড়া এসব কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়লেও এতে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা।

এছাড়া পুঁজিবাজারে স্মরনকালের ধস, কোম্পানির আর্থিক ক্ষতি, সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের অনীহার কারণে অনেক কোম্পানির শেয়ারের দর তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। যে কারণে অভিহিত দরের নিচে অবস্থান করছে ৬৮টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার। আর অভিহিত দরের কাছাকাছি অবস্থান করছে এমন কোম্পানির সংখ্যাও অনেক। এর মধ্যে কিছু কোম্পানির অবস্থা খুবই নাজুক। বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার শীর্ষে অবস্থান করছে এসব কোম্পানির শেয়ার।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, তালিকাভুক্ত ছয় খাতের (মিউচ্যুয়াল ফান্ড বাদে) ১২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ একেবারেই নগণ্য। কোম্পানিগুলো হচ্ছে- ব্যাংকিং খাতের আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, আর্থিক খাতের বিআইএফসি, পিপলস লিজিং, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের মেঘনা পেট,মেঘনা কনডেন্সমিল্ক, ওষুধ ও রসায়ন খাতের বেক্সিমকো সিনথেটিক, সিরামিকস খাতের শাহিন পুকুর, বস্ত্র খাতের দুলামিয়া কটন, জেনারেশন নেক্সট টেক্সটাইল ও ম্যাকসন স্পিনিং।

অবশিষ্ট কোম্পানিটি হচ্ছে ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের ইউনাইডেট এয়ারওয়েজ। এ কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড না দেয়ায় ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে ৭টি কোম্পানি। বাকি তিনটির বর্তমান অবস্থান ‘এ’ ক্যাটাগরিতে।

উল্লিখিত কোম্পানিগুলোর শেয়ার সম্পর্কে জানতে চাইলে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার বিভাগের সিনিয়র অফিসার নূর-ই রব্বানী বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। এবার অধিকাংশ ব্যাংক ভালো ডিভিডেন্ড দিয়েছে। তারপরও কেন বিনিয়োগকারীদের এসব শেয়ারে আস্থা নেই তা আমার অজানা। তবে এ পরিস্থিতি বেশিদিন থাকবে না’বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ম্যাকসন স্পিনিংয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে আমাদের কোম্পানির অবস্থা ভালো নেই। এর প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। অবস্থার পরিবর্তন না হলে  বিনিয়োগকারীদের ভালো সংবাদ দিতে পারছি না। তবে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, যাতে বিনিয়োগকারীদের ভালো রিটার্ন দিতে পারি।’

প্রাপ্ত তথ্যমতে, পুঁজিবাজারে বর্তমানে সবচেয়ে কম দরে কেনা-বেচা হচ্ছে ব্যাংকিং খাতের আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার। এ কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ চার টাকা ১০ পয়সায় হাতবদল হয়। দীর্ঘদিন থেকে এ শেয়ারের দর চার থেকে পাঁচ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে।

পরের অবস্থানে থাকা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হচ্ছে পাঁচ টাকা ৭০ পয়সায়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর থেকে এ কোম্পানির  শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমতে থাকে।  যে কারণে দীর্ঘদিন থেকে অভিহিত দরের নিচে অবস্থান করছে কোম্পানিটি। ইউনাইটেড এয়ারের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার শীর্ষে অবস্থান করছে এ প্রতিষ্ঠানটি।

তালিকার তৃতীয় অবস্থানে থাকা ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি বেক্সিমকো সিনথেটিকের প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয় ছয় টাকা ১০ পয়সায়। পরের অবস্থানে থাকা ফার্স্ট ফাইন্যান্সের শেয়ার লেনদেন হয় ছয় টাকা ৩০ পয়সায়। ডিভিডেন্ড না দেয়ায় আর্থিক খাতের এ প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে।

পরের অবস্থানে থাকা একই খাতের অন্য কোম্পানি পিপলস লিজিংয়ের প্রতিটি শেয়ার গতকাল লেনদেন হয় ছয় টাকা ৮০ পয়সায়। সম্প্রতি ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করায় প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান হয়েছে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে।

এ তালিকায় থাকা পরের কোম্পানির নাম জেনারেশন নেক্সট টেক্সটাইল। বর্তমানে এ কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ছয় টাকা ৮০ পয়সা থেকে সাত টাকার মধ্যে। গতকাল সর্বশেষ এ শেয়ার লেনদেন হয় ছয় টাকা ৮০ পয়সায়।

এছাড়া বস্ত্র খাতের অন্য দুটি কোম্পানি দুলামিয়া কটন এবং ম্যাকসন স্পিনিংয়ের শেয়ার লেনদেন হচ্ছে সাত টাকা ১০ পয়সা করে। তালিকায় দশম স্থানে থাকা বিআইএফসির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয় সাত টাকা ৫০ পয়সায়।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু কোম্পানির শেয়ারের দর অনেক নিচে রয়েছে। এর মধ্যে কিছু ব্যাংকও রয়েছে। ব্যাংকিং খাতের কিছু সমস্যা ছিল। তবে ব্যাংকগুলো তাদের বিনিয়োগ সমন্বয় করায় এখন সে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। আশা করছি বিনিয়োগকারীদের এখন এ শেয়ারের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। তবে এ ক্ষেত্রে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের।’

একই বিষয়ে ভিশন ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘এসব কোম্পানির বেশিরভাগের বর্তমানে আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। যে কারণে বিনিয়োগকারী এসব শেয়ার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আমি মনে করি, এটি বিনিয়োগকারীদের সচেতনতার প্রতিফলন।’