bsec lagoশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মূলধন বাড়াতে পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু শেয়ার ধারণের এ শর্ত পূরণ না করার পরও তালিকাভুক্ত কোম্পানির মূলধন বাড়ানোর অনুমোদন দিচ্ছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে মূলধন বাড়ানোর এ সুযোগ করে দিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এর মাধ্যমে বিএসইসি নিজেদের নিয়ম নিজেরাই ভাঙছে এবং আনফেয়ার প্রাকটিস হচ্ছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

১ জুন তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা দরে ৪০০ কোটি ৮০ লাখ ৮০ হাজার টাকার মূলধন সংগ্রহ করার অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি। এর আগে ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে একটিভ ফাইন কেমিক্যাল প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ৬০ টাকা দরে ২ কোটি শেয়ার ইস্যু করে।

মূলধন সংগ্রহের অনুমোদন পাওয়া ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পরিচালকরা সম্মিলিতভাবে ৫.০২ শতাংশ ও একটিভ ফাইন কেমিক্যালের পরিচালকরা ১২.০২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন।

সাধারণত তালিকাভুক্ত কোম্পানি বোনাস শেয়ার ও রাইট শেয়ারের মাধ্যমে মূলধন বাড়িয়ে থাকে। এ হিসাবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকরা ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ না করলে শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার ইস্যু করে মূলধন বাড়াতে পারে। কিন্তু ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারন না করা সত্বেও প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে দু’টি কোম্পানির মূলধন বাড়ানোর বিশেষ সুবিধা প্রদান করছে বিএসইসি।

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ না করা সত্ত্বেও প্রাইভেট প্লেসমেন্টে মূলধন বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া হলে বিএসইসির নির্দেশনারই ব্যত্যয় ঘটবে। এতে ওই নির্দেশনারই লঙ্ঘন ঘটবে। এছাড়া তালিকাভুক্তির পর প্লেসমেন্টে মূলধন বাড়ানোর অনুমোদন একটি আনফেয়ার প্রাকটিস, এটা ঠিক না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ  বলেন, ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ না সত্ত্বেও মূলধন বাড়ানোর সুযোগ দিয়ে বিএসইসি নিজেই নিজের তৈরি করা নিয়ম ভাঙছে। বিএসইসি এই সুযোগ দিতে পারে না, এটা দেওয়া উচিত না।

এখানে উল্লেখ্য, বিএসইসি ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের শেয়ার ধারণের শর্ত আরোপ করে নির্দেশনা জারি করে। কোম্পানির পরিচালকের জন্য স্বতন্ত্রভাবে ২ শতাংশ এবং পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারনের শর্ত আরোপ করা হয় নির্দেশনায়। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ না করলে ওই কোম্পানি রাইট শেয়ার ও পূন:গনপ্রস্তাবের (আরপিও) মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করতে পারবে না।

তালিকাভূক্তির পর প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করা যায় কি না জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, এমন কোন সুযোগ আছে বলে আমার জানা নেই।

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ও একটিভ ফাইন কেমিক্যালের প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি না দেখে আমি কিছু বলতে পারবো। এ বিষয়ে আমি আর কোন মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’ সাধারণত শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পূর্বে কোম্পানি প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করার অনুমতি পেয়ে থাকে।

তবে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ও একটিভ ফাইন কেমিক্যালকে এই বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে তালিকাভুক্তির পরও। মূলত কোম্পানি দুটিরই পরিচালকরা সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ না করায় প্রাইভেট প্লেসমেন্টের এ বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।