bgmeশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পোশাক রপ্তানিতে দেড় শতাংশ হারে উৎসে কর কাটা হলে অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা প্রকাশ করছে বিজিএমইএসহ এ খাতের পাঁচ সংগঠনের নেতারা। শনিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমই এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।

বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, উৎসে কর বিক্রির উপর কর্তন করা হয়; লাভের উপর নয়। একটি কারখানা শ্রমিকদের মজুরি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল পরিশোধ, পরিবহন ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় করার পর মাত্র ৩ শতাংশ মুনাফা করে থাকে।

সেই কারখানাটির জন্য ১ দশমিক ৫ শতাংশ হারে উৎসে কর পরিশোধ করা খুবই কঠিন। ৩ শতাংশ মুনাফা হলে এর উপর প্রদেয় করহার দাঁড়াচ্ছে ৫০ শতাংশ। এই কর হার ব্যাংক, বীমাসহ যে কোনও শিল্প কিংবা সেবাখাতের উপর প্রযোজ্য কর হারের তুলনায়ও অনেক বেশি বলে তার অভিমত।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, পোশাকের রপ্তানিমূল্য অনেক কমে গেছে। বেড়েছে উৎপাদন খরচ। অন্যদিকে ডলার-ইউরোসহ বিভিন্ন মুদ্রার বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হয়েছে। ফলে ইতোমধ্যেই আমাদের রিস্ক ফ্যাক্টর বেড়ে গেছে ৩০ থেওকে ৩৫ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে উৎসে কর ১ দশমিক ৫০ প্রয়োগ করা হলে আমাদের নিট ও ওভেন পোশাক খাতের অধিকাংশ কারখানা ব্যবসায় টিকে থাকতে পারেবে না। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে।

লিখিত বক্তব্যে বিজিএমইএ প্রধান বলেন, বস্ত্রখাতের রপ্তানিমুখী স্পিনিং ও উইভিং খাতের মিল এবং পোশাক কারখানাগুলো ব্রেক ইভেন পয়েন্টে অর্থাৎ না লাভ না লোকসান- এভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এ অবস্থায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ উৎসে কর কাটার পর অনেক প্রতিষ্ঠানের কোনও লাভই থাকবে না। কিন্তু প্রতিষ্ঠানকে লোকসান গুণতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে উৎসে কর ১ দশমিক ৫০ হারে কর্তন করার সিদ্ধান্ত রপ্তানিমূখী শিল্প ও বিনিয়োগে উদ্যোক্তাদের চরমভাবে নিরুৎসাহিত করবে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের যে বাজেট পেশ করেছেন তাতে তৈরি পোশাক রপ্তানির উপর উৎসে কর দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন। এর পর থেকেই বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএসহ পোশাক খাতের অন্যান্য সংগঠন প্রস্তাবিত বর্ধিত কর হার প্রত্যহার করে আগের অবস্থায় আনার দাবি জানিয়ে আসছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল খাতে শীর্ষ পাঁচ সংগঠনের (বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ,  বিটিটিএলএমইএ ও বিজিএপিএমইএ) নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

পাঁচ সংগঠনের পক্ষে সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে  বিনিয়োগ ও জিডিপির অনুপাত ৩৪ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে, যা বর্তমানে ২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ রয়েছে। এ অবস্থায় যে খাতগুলো জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে সেগুলোর পথ সহজতর করে উৎসাহ প্রদান করাই বাঞ্ছনীয়।

২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে আমরা যে দশটি প্রস্তাব দিয়েছিলাম তার একটিও বাজেটে গৃহীত হয়নি। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কারণে গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল খাত সংকটময় পরিস্থিতে রয়েছে।

এফবিসিসিআই প্রথম সহ-সভাপতি এবং বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, দেশে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করা উচিত না যাতে বিনিয়োগ কমে যায়। বরং বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা উচিত। পোশাক শিল্পের উপযোগী বাজেট দেওয়া উচিত। এ শিল্পের সঙ্গে দেশের ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান, সহ-সভাপতি এ এইচ আসলাম সানি, বিটিএমএ সহ সভাপতি ফজলুল হক, বিটিটিএলএমইএ চেয়ারম্যান হোসেন মেহমুদ, বিজিএপিএমইএ সহ-সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন মনিসহ বিজিএমইএ ও অন্যান্য সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।