bank lagoশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: গত বছরের ডিসেম্বরে ব্যাংকিং খাতের ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) ৫ শতাংশের নিচে রাখার নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা মানছে না ২৫ ব্যাংক। এসব ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান ৫ শতাংশের উপরে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক যেমন আছে, একই সঙ্গে আছে বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকও।

চলতি বছরের মার্চভিত্তিক স্প্রেডের পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদনেই ব্যাংকগুলোর স্প্রেডের সীমা না মানার তথ্য উঠে এসেছে।

জানা গেছে, বর্তমানে দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী নয়টি বিদেশী ব্যাংকের মধ্যে ছয়টিরই স্প্রেড ৫ শতাংশ বা তার বেশি। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৫ শতাংশের উপরে স্প্রেড রয়েছে ১৮টির। আর রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে শুধু অগ্রণী ব্যাংকের স্প্রেড ৫ শতাংশের উপরে রয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধানের বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া আছে। ব্যাংকগুলোর পক্ষে সবসময় আমাদের দেয়া নির্দেশনা মেনে চলা সম্ভব হয় না।

যেসব ব্যাংক নির্দেশনার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে, তাদের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাধারণত কঠোর হয় না। তবে কোনো ব্যাংক যদি নির্দেশনা পালনের ক্ষেত্রে গাফিলতি করে, তাহলে তাদের ব্যাপারে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষয়টি আমাদের সংশ্লিষ্ট শাখা তদারকি করছে।

মার্চভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অগ্রণী ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর স্প্রেড ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। অগ্রণী ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান ৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। যদিও সম্মিলিতভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের স্প্রেড ৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

বিদেশী ব্যাংকগুলোর মধ্যে ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান সবচেয়ে বেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের। মার্চভিত্তিক হিসাবে ব্যাংকটির স্প্রেড ৯ দশমিক ৫৫। ব্যাংকটির আমানতের ক্ষেত্রে গড় ভারিত সুদহার ১ দশমিক ৭৮ ও ঋণের গড় ভারিত সুদহার ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। বিদেশী অন্যান্য ব্যাংকের মধ্যে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার স্প্রেড ৮ দশমিক ৬৮, সিটিব্যাংক এনএর ৬ দশমিক ৭৪, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের ৫ দশমিক ৬২, উরি ব্যাংকের ৬ দশমিক ৩৩ ও এইচএসবিসির ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান সবচেয়ে বেশি ব্র্যাক ব্যাংকের। মার্চভিত্তিক হিসাবে ব্যাংকটির স্প্রেড ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। বেসরকারি অন্যান্য ব্যাংকের মধ্যে দ্য সিটি ব্যাংকের স্প্রেড ৫ দশমিক ৪৫, আইএফআইসির ৫ দশমিক ৭৮, পূবালীর ৫ দশমিক ৩১, উত্তরা ব্যাংকের ৫ দশমিক ৯, ঢাকা ব্যাংকের ৫ দশমিক ৪৯, ডাচ্-বাংলার ৭ দশমিক শূন্য ৯, ওয়ান ব্যাংকের ৬ দশমিক ৬৭, এক্সিম ব্যাংকের ৫ দশমিক শূন্য ৬, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৫ দশমিক শূন্য ৩, ব্যাংক এশিয়ার ৫ দশমিক শূন্য ২ ও ট্রাস্ট ব্যাংকের ৫ দশমিক ২ শতাংশ।

মার্চভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে পাঁচটিরই ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশিত সীমার চেয়ে বেশি। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান ৫ দশমিক ৪৯, মেঘনা ব্যাংকের ৫ দশমিক ৫৩, ইউনিয়ন ব্যাংকের ৬ দশমিক ৫৮, এনআরবি ব্যাংকের ৬ দশমিক শূন্য ৬ ও মধুমতি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরুল আমিন এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, ব্যাংকিং খাতে স্প্রেড কমে আসছে। গড় স্প্রেড এখন ৫ শতাংশের নিচে। আমানতের সুদহারের বিপরীতে ঋণের সুদহার কমার গতিতে ব্যাংকভেদে কিছুটা তারতম্য থাকতে পারে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ও কিছু বেসরকারি ব্যাংকের স্প্রেড ৫-এর চেয়ে অনেক কমে এসেছে। বিদেশী ব্যাংক ও কিছু বেসরকারি ব্যাংকের স্প্রেড এখনো বেশি। এছাড়া ব্যাংকের কিছু ব্যয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমলে নেয় না। হিসাব-নিকাশে যা দেখা যায়, অনেক ব্যাংকের ক্ষেত্রে কার্যত তা আরো কম।

স্থায়ী কমিটিতে দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯০ সাল থেকে আর্থিক খাত সংস্কার কর্মসূচির আওতায় নমনীয় সুদহার নীতিমালা প্রবর্তন করা হয়। এর আওতায় চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোর আমানত ও ঋণের সুদহার নির্ধারণ হয়।

শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে ঋণের সুদহার সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ক্রেডিট কার্ড ও ভোক্তাঋণ ছাড়া অন্যান্য খাতে ঋণ এবং আমানতের গড়ভারিত সুদহারের ব্যবধান নিম্নতর এক অঙ্ক পর্যায়ে অর্থাৎ ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি আনিস এ খান বলেন, দেশে খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশ। এ রকম বোঝা নিয়ে ৫ শতাংশের আশপাশে স্প্রেড থাকলে নিঃসন্দেহে তা প্রশংসনীয়। আবার ঋণের সুদের হার কমার ধারাও অব্যাহত আছে। এ অবস্থায় কিছু কিছু ব্যাংকের স্প্রেড ৩ শতাংশের আশপাশে থাকে। আসলে স্প্রেড সবসময় নিয়ন্ত্রণও করা যায় না। এটি ওঠানামা করে।