sharebazar investশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে চলছে ডিভিডেন্ড ঘোষনার মৌসুম। প্রায় প্রতিদিনই থাকছে কোনো না কোনো কোম্পানির বোর্ড সভা। আর দীর্ঘ এক বছরের বিনিয়োগের বিনিময় পেতে অধীর আগ্রহে থাকছে বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি ঘোষিত ডিভিডেন্ডের পরিমানের ভিত্তিতে অনেক বিনিয়োগকারী নতুন বিনিয়োগের পরিকল্পনাও করছেন। তবে ডিভিডেন্ড মৌসুমে কোম্পানি থেকে ন্যায্য অধিকার টুকু না পেয়ে  বিনিয়োগকারীরা হতাশায় ভুগছেন।

অথচ তালিকাভুক্ত ৩৫ কোম্পানি বছরের পর বছর ডিভিডেন্ড না দিয়ে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জবাবদিহিতার অভাবে কোম্পানিগুলো দীর্ঘ সময় ধরে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। একে ‘দিনে দুপুরে ডাকাতি’ বলেও অভিহিত করেছেন তারা।

যে সব কোম্পানি নিয়মিত ডিভিডেন্ড দেয় না এবং যেগুলোর উৎপাদন বন্ধ, সেগুলো ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করে। নিয়মানুযায়ী সমাপ্ত হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিতে না পারলে ওই কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেয়া হয়। শুধু তা-ই নয় ওইসব কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা মার্জিন ঋণ থেকেও বঞ্চিত হয়।

এদিকে পুঁজিবাজার ২০১০ সালে মহাধসের কবলে পড়ায় অধিকাংশ বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়েছে। ধসের পর থেকে কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমে আসায় ডিভিডেন্ডের পরিমাণও কমেছে। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা সমন্বয় করতে না পেরে এখনো বয়ে চলছে লোকসানের বোঝা। আর যে সকল কোম্পানি ডিভিডেন্ড দিচ্ছে না সে সকল কোম্পানিতে বিনিয়োগিকারীরা মুল পুঁজি আদৌ ফিরে পাবেন কিনা তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ।

এমন অনেক কোম্পানি রয়েছে যেগুলো আইপিওর মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করে বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরের বছর থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছে। সঠিকভাবে খোঁজখবর না নিয়ে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করার অনুমোদন দেয়ার কারণে এসব দুর্বল কোম্পানির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদাসীনতাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ বলেছেন, “কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই। এমন কোনো আইনও নেই যেখানে কোনো কোম্পানি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকলে ফাইন হবে। অর্থাৎ কথিত আইনের মাধ্যমে বাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে দিনে দুপুরে মানুষের টাকাগুলো ডাকাতি করা হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার পর ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান নেয় তাদের তদারকির বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোনোভাবে দায় এড়াতে পারে না। তা ছাড়া কোম্পানিগুলোকে বাজারে আসার অনুমোদন দেয়ার আগে তাদের ভিত্তি সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া বিএসইসির দায়িত্ব। আর এতে ভালো কোম্পানি বাজারে আসবে। ফলে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে।’

যেসব কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের বছরের পর বছর ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত করেছে সেগুলো হলো : ম্যাকসন স্পিনিং, মেঘনা কনডেন্স মিল্ক, মেঘনা পিইটি, মেট্রো স্পিনিং, মাইডাস ফাইন্যান্স, মডার্ন ডায়িং, পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড,

প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, রহিমা ফুড, আরডি ফুড, আরএন স্পিনিং, সমতা লেদার ইন্ড্রাস্ট্রিজ, সাভার রেফ্রিজারেটর, সুহৃদ ইন্ড্রাস্টিজ, শ্যামপুর সুগার মিলস লিমিটেড, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, শাইনপুকুর সিরামিক লিমিটেড, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড, জিল বাংলা সুগার মিলস লিমিটেড।

আজিজ পাইপস লিমিটেড, বিডি অটোকারস, বিডি সার্ভিসেস, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, বাংলাদেশ ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড, বেক্সিমকো সিনথেটিক্স, দুলামিয়া কটন, ফাইন ফুডস, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, ইমাম বাটন, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, জুট স্পিনার্স, কে অ্যান্ড কিউ, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড (কেপিপিএল),

এর মধ্যে আজিজ পাইপস এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ডিভিডেন্ড দেয় না। এ ছাড়া দুলামিয়া কটন বিগত ৫ বছর, ইমাম বাটন ৫ বছর, মাইডাস ফাইন্যান্স ৪ বছর, প্রিমিয়ার লিজিং ৩ বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের কোনো ডিভিডেন্ড দেয় না। আইসিবি ইসলামী ব্যাংক বাজারে তালিকাভুক্তির পর থেকে এ পর্যন্ত ডিভিডেন্ড দেয়নি।

মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি। কোম্পানিটি ২০০৯ ও ২০১০ সালে ডিভিডেন্ড দিলেও এরপর থেকে এ পর্যন্ত আর দেয়নি। মেঘনা পিইটি ইন্ডাস্ট্রিজ ২০০১ সাল থেকে, নর্দার্ন জুট ২০০৬ সাল থেকে, সমতা লেদার ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের কোনো প্রকার ডিভিডেন্ড দেয়নি। শ্যামপুর সুগার ও জিলবাংলা সুগার মিলস ২০০০ সালের পর থেকে দীর্ঘ ১৫ বছরে বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের ডিভিডেন্ড দেয়ার রেকর্ড নেই।

এদিকে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সুহৃদ ইন্ড্রাস্টিজ ২০১৪ সালে বাজারে তালিকাভুক্ত হলেও তালিকাভুক্তির পর থেকে কোম্পানিটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থান পায়। বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড না দিয়ে আজও ‘জেড’ক্যাটাগরিতেই আছে তারা।

ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ক্ষেত্রে একই চিত্র লক্ষ করা গেছে। কোম্পানিটি তালিকাভুক্ত  হওয়ার বছর ২০১৪ সালে ১৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিলেও পরবর্তীতে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেয়া হয়।

খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের ক্ষেত্রে একই চিত্র দেখা গেছে। অথচ এসব কোম্পানির আইপিও বাতিল করার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছিল। তাতেও কোনো ধরনের পাত্তা দেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেছেন, ‘যেসব কোম্পানি সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি। তারপরও কোনো কোম্পানির বিরুদ্ধে নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কমিশন।’