sharebazer lagoফাতেমা বেগম, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে আজ সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে লেনদেনের শুরুতে সুচকের কিছুটা উর্ধ্বগতি থাকলেও দিনশেষে পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে এক কার্যদিবসে ব্যবধানে কেন সুচকের পতন এ প্রশ্ন খোদ হাজার হাজার বিনিয়োগকারীদের। আজকে শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমে ফোন করে একাধিক বিনিয়োগকারী তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন।

বর্তমান বাজারের এ পরিস্থিতিতে তারা কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। কেন পুঁজিবাজারের এ বেহাল অবস্থা এ প্রশ্ন বিনিয়োগকারীদের। কেন পুঁজিবাজার এমন অবস্থা? এ প্রশ্ন খুজতে শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমের একটি টিম দ্বারস্থ হচ্ছে পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের কাছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংককের রিজার্ভের অর্থ চুরি ও ব্যাংকগুলোর বাড়তি বিনিয়োগের সম্বনয়কে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীরা চিন্তিত খুবই। আবার নতুন গভর্নর পুঁজিবাজারকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন সব মিলিয়ে তারা বাজারের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না। এছাড়া গত কয়েক সপ্তাহে সুচকের পতন অব্যাহত রয়েছে। সবমিলিয়ে অস্থিরতার ফলে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী এ্যাড. মাহামুদুল আলম বলেন, পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে বলার কিছু নেই। এমনিতেই পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের সক্ষমতা কমে গেছে। ফলে তাদের বাড়তি বিনিয়োগের পরিমাণও বেড়ে গেছে। এ বাড়তি বিনিয়োগ ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে সমন্বয়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এটি করতে হলে ব্যাংকগুলোকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করতে হবে। কিন্তু মন্দা বাজারে এ শেয়ার বিক্রি করা হলে তার চাপে বাজারে শেয়ারের দাম অনেক কমে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় অনেক বিনিয়োগকারী হাত গুটিয়ে বসে আছে। এতে বাজার মন্দার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে।

অন্যদিকে শীর্ষ ব্রোকারদের শেয়ার বিক্রির প্রবল চাপে মঙ্গলবার পুঁজিবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। এর প্রভাবে আজ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ৩২ পয়েন্ট বা দশমিক ৭১ শতাংশ কমেছে। মঙ্গলবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩২৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট। গতকাল লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪৩০ কোটি ৬৯ লাখ টাকার।

আলোচিত দিনে শীর্ষ দশ হাউজ মিলে ১৪ কোটি ১৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড বেশি বিক্রি করেছে। এ দিন দশটি প্রতিষ্ঠান মিলে মোট বিক্রি করেছে ১১৪ কোটি ২ লাখ ২২ হাজার টাকার। এর বিপরীতে তারা কিনেছে ৯৯ কোটি ৮৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকার শেয়ার।

শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিক্রি করা শেয়ার তাদের না। এগুলোর বেশির ভাগই ছিল বড় মানের বিনিয়োগকারীদের। বিক্রি করা শেয়ার তাদের না। এগুলোর বেশির ভাগই ছিল বড় মানের বিনিয়োগকারীদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিনিয়োগকারী  বলেন, আমার কাছে যেসব কোম্পানির শেয়ার আছে; তার বেশির ভাগই কিনা দামের নীচে। যেগুলোতে লাভ আছে; ওই গুলো বিক্রি করে ক্যাশ করে রাখছি। বাজার ভালো হলে আবার ওই টাকা দিয়ে শেয়ার কিনবো।

শীর্ষ দশ ব্রোকারের একজন বলেন, আমার জানা মতে, মঙ্গলবার বাজারে যে শেয়ার বিক্রি হয়েছে তার বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীদের। এই দিন বাজারের উপর বিক্রির চাপ কমাতে অনেকে ডিলার হিসাবে শেয়ার কিনেছেন। এরপরও পতন ঠেকানো সম্ভব হয়নি।

শেয়ার বিক্রির দিক দিয়ে টপটেন ব্রোকারেজ তালিকা প্রথমে ছিল লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি আজ ২২ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিক্রি করেছে। তবে এর বিপরীতে কিনেছে ১৬ কোটি ৬ লাখ টাকার। সেই হিসাবে কোম্পানিটি ৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকার বেশি বিক্রি করেছে।

দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড। কোম্পানিটি ১৮ কোটি ২৭ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিক্রি করেছে। আর ১৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার কিনেছে প্রতিষ্ঠানটি। তাতে ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকার শেয়ার বেশি বিক্রি করেছে।

আর ১৫ কোটি আড়াই লাখ শেয়ার বিক্রি করে তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে এআইবিএল ক্যাপিটাল মার্কেট সার্ভিসেস লিমিটেড। আজ প্রতিষ্ঠানটি ১১ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার কিনেছে। এতে ৩ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার বেশি বিক্রি করেছে।

চতুর্থ অবস্থানে ছিল শেলটেক ব্রোকারেজ লিমিটেড। আজ কোম্পানিটি ৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। এর বিপরীতে শেয়ার কিনেছে ৭ কোটি ২২ লাখ টাকার। ৫ম স্থানে ছিল সিটি ব্রোকারেজ লিমিটেড। কোম্পানিটি ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। এর বিপরীতে কিনেছে ৮ কোটি ১২ লাখ টাকার শেয়ার।

এরপর যথা ক্রমে এমটিবি সিকিউরিটিজ ৮ কোটি ৯৩ লাখ, আইডিএলসি সিকিউরিটিজ সাড়ে ৮ কোটি ৩০ লাখ, আইসিবি সিকিউরিটিজ ৭ কোটি ৩২ লাখ, ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজ ৭ কোটি ২৯ লাখ এবং পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেড ৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। এর বিপরীতে সবাই কমই কিনেছে।