আমিনুল ইসলাম : পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন পর ব্যাংক খাতের শেয়ারে সুবাতাস বইতে শুরু করছেন। দীর্ঘদিন পর ব্যাংক খাতের শেয়ারে দর বাড়ায় কিছুুটা হলেও স্বস্তিতে রেেয়ছেন বিনিয়োগকারীরা। তাছাড়া গতকাল বাজারে ব্যাংক খাতের শেয়ারের  একক আধিপত্য বিস্তার ছিল।  তেমনি ব্যাংকিং খাতের প্রতি আস্থা ফিরতে শুরু করেছে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের। পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন পর বাড়ছে ব্যাংকিং খাতের শেয়ার দর। পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনও।

গতকাল সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা এমনই মনোভাব ব্যক্ত করেছেন দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণের কাছে। তারা বলেন, ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজারের গতি ত্বরান্বিত করতে ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি কদর বাড়ছে। সামনে আরো বাড়বে। কারণ অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর কাছে ব্যাংকিং খাতের শেয়ারের প্রতি রয়েছে ব্যাপক আস্থা। যদিও শেয়ারবাজারের মন্দা সময়ে এ খাতের প্রতি আস্থা কম ছিল। কিন্তু বর্তমানে আবার এ খাতের শেয়ারের প্রতি ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা।

বাজার বিশ্লেষকরা জানান, পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কারণ শেয়ারবাজার উন্নয়নের স্বাভাবিক গতি বাড়াতে ব্যাংকিং খাতের শেয়ারে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। এ খাতের শেয়ার এখনো কিছুটা বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত। পাশাপাশি রয়েছে বিনিয়োগে সর্বোচ্চ আস্থাভাজন। তাই শেয়ারবাজারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ব্যাংকিং খাতের শেয়ারের গুরুত্ব অপরিসীম। তারা আরো জানান, ব্যাংকিং খাতের কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন এবং শেয়ার সংখ্যা বেশি।

যে কারণে বিনিয়োগকারীরা সাধারণত এ খাতকে বিনিয়োগ প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। আবার কোম্পানিগুলোর লেনদেন ও দর ওঠানামা অনেকটাই স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। অন্যান্য কোম্পানির মতো ঢালাওভাবে এ খাতের শেয়ার দর উত্থান-পতন হয় না। কয়েক বছর ব্যবসায়িক মন্দার কারণে বেশি মুনাফা দিতে পারেনি এ খাতের কোম্পানিগুলো। তারপরও অন্যান্য খাতের চেয়ে ভালো ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। শেয়ারবাজারের পতনের সময় বিনিয়োগকারীরা এ খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন।

ফলে এ খাতে বাজার সেলপ্রেসার বেশি হয়েছিল। পাশাপাশি প্রফিট টেক করেছে, যার প্রভাব পড়েছে পুরো খাতের ওপর। কিন্তু বর্তমানে শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ব্যাংক খাতে শেয়ার ধারণ বা বিনিয়োগ করতে হবে। তাই এ খাতে বিনিয়োগ বাড়লে পুরনো লেনদেনের চমকে ফিরে আসবে বলে জানান তারা। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকের এক পরিচালক জানান, ব্যাংক খাতের শেয়ার সংখ্যা বেশি। শেয়ারবাজারে সব ব্যাংকের শেয়ার দর সামান্য বাড়লে পুরো বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকে।

আবার সামান্য কমলে এর উল্টো চিত্র দেখা যায়। তাই ব্যাংকের শেয়ার দর খুব বেশি উত্থান-পতন হয় না। বিগত কয়েক বছরে এ খাতে শেয়ার দর খুব একটা ঊর্ধ্বমুখী হয়নি। কারণ ব্যবসায়িক মন্দা ছিল। এদিকে গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্যাংক খাতে থাকা সকল কোম্পানির শেয়ার দরে চাঙ্গা ভাব লক্ষ করা গেছে। ঐ সময় এ খাতের এক কোম্পানি বাদে সকল কোম্পানির শেয়ার দর সবুজ সংকেত দেখাচ্ছিল। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলো শিগগিরই তাদের প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।

বিনিয়োগকারীরা ভাল কিছুর প্রত্যাশায় এ খাতে আগ্রহী হচ্ছেন বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। ডিএসইতে ব্যাংক খাতে থাকা ৩০ কোম্পানির মধ্যে ২৭ কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে এবি ব্যাংকের দর বেড়েছে ০.৫০ টাকা, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ০.৪০ টাকা, ব্যাংক এশিয়ার ০.৬০ টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকের ৩ টাকা, সিটি ব্যাংকের ০.৬০ টাকা, ঢাকা ব্যাংকের ০.৬০ টাকা, ডাচ বাংলা ব্যাংকের ৩.৯০ টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংকের ০.৭০ টাকা, এক্সিম ব্যাংকের ০.২০ টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ০.২০ টাকা, আইএফআইসি ব্যাংকের ০.২০ টাকা, ইসলামী ব্যাংকের ০.৫০ টাকা,

যমুনা ব্যাংকের ০.৬০ টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ০.৩০ টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ০.৬০ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ০.১০ টাকা, এনসিসি ব্যাংকের ০.২০ টাকা, ওয়ান ব্যাংকের ০.২০ টাকা, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ০.১০ টাকা, প্রাইম ব্যাংকের ০.৫০ টাকা, পূবালী ব্যাংকের ০.৪০ টাকা,রুপালী ব্যাংকের ০.৮০ টাকা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ০.১০ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ০.২০ টাকা, ট্রাস্ট ব্যাংকের ০.৭০ টাকা, ইউসিবিএলের ০.৪০ টাকা এবং উত্তরা ব্যাংকের দর শেয়ারদর বেড়েছে ০.৩০ টাকা। উল্লেখ্য, গতকাল লেনদেন শেষে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথইষ্ট ব্যাংকের শেয়ার দর অপরবর্তীত ছিল। এছাড়া আইসিবি ইসলামি ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ০.১০ টাকা।