পুঁজিবাজারে টানা কয়েক কার্যদিবস ধরে স্বল্পমুলধনী কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ছেই। কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই বাড়ছে স্বল্পমূলধনী কোম্পানির শেয়ার দর। কোন কারণে শেয়ার দর টানা উর্ধ্বমুখী তা নিয়ে উঠেছে নানান প্রশ্ন। তাই আলামতবিহীন বা মূল্য সংবেদশীল তথ্য ছাড়াই স্বল্পমূলধনী কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়াকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, আলামত বিহীন স্বল্পমূলধনী কোম্পানির শেয়ার দর বাড়া সন্দেহের জন্ম দেয়। মূল্য সংবেদশীল তথ্য ছাড়া এ শেয়ার দর বাড়া স্বাভাবিক বাজার রুপের বহি:প্রকাশ নয়। অকারনে বাড়া শেয়ার কিনে লাভবান হওয়ার চেয়ে পুঁজি হারানোর সম্ভাবনা বেশি সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান তারা। তাই স্বল্পমূলধনী কোম্পানির দর বাড়া নিয়ে চিন্তিত সাধারন বিনিয়োগকারীরা।

স্বল্পমূলধনী কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ার কারনে বাজারে স্থিতিশীলতা আসছে না বলে মনে করেন তারা। তাই বাজারের স্বাভাবিক রুপ ফিরয়ে আনতে স্বল্পমুলধনী কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর নিয়ন্ত্রনে বিশেষ হস্তক্ষেপ কামনা করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। এদিকে তালিকাভুক্ত স্বল্প পরিশোধিত মূলধনী কোম্পানির শেয়ার দরে ঝোঁক বাড়ছে।

কারন এসব কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা অল্প হওয়ায় সহজেই এগুলোর মাধ্যমে কারসাজি করে দর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করা সম্ভব। ইতিপূর্বেও এ ধরনের অভিযোগ শোনা গেছে। বাজার বিশ্লেষন করে দেখা গেছে দর বৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে থাকা বেশিরভাগ কোম্পানি স্বল্প পরিশোধিত মূলধনী ও দুর্বল ক্যাটাগরির। জানা যায়, টানা কয়েক কার্যদিবস ধরে দর বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছেন বিডি অটোকারর্স। এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মডার্ন ডায়িং অ্যান্ড স্ক্রিণ প্রিন্টিংয়ের পরিশোধিত মূলধন ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এছাড়া কোম্পানিটির নিজস্ব উৎপাদন নেই। ভাড়া দিয়ে চলছে মডার্ন ডায়িংয়ের আয়। এদিকে দর বৃদ্ধির তালিকায় আরো রয়েছে সাভার রিফ্যাক্টরীজ (পরিশোধিত মূলধন ১ কোটি ৪০ লাখ), ঝিল বাংলা সুগার (পরিশোধিত মূলধন ৬ কোটি টাকা), জেমিনি সী ফুড (পরিশোধিত মূলধন ১ কোটি ১০ লাখ টাকা), এবং মুন্নু জুট স্ট্যাফলার্স (পরিশোধিত মূলধন ৪০ লাখ টাকা)। এদিকে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর জন্য পৃথক মার্কেট গঠনের সুপারিশ পরিকল্পনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

গত ৪ বছরেও এর কোনো অগ্রগতি হয়নি। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোকে ঘিরে প্রায়ই কারসাজির ঘটনা ঘটছে। তাই এসব কোম্পানির জন্য আলাদা মার্কেট তৈরি করা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে,২০১১ সালের আগস্ট মাসে এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কাছে সুপারিশ করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি কমিশন।

ফলে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলো নিয়ে কারসাজির পথ এখনো উন্মুক্ত রয়ে গেছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। পুঁজিবাজারে ব্যাপক দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণে গত বছর স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে এসইসির বৈঠকে স্বল্প মূলধনী কোম্পানির জন্য আলাদা মার্কেট গঠনের বিষয়টি বারবার উঠে আসে। কমিশন বিষয়টি বাস্তবায়ন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার আশ্বাস দিলেও তার কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর জন্য পৃথক মার্কেট গঠনের প্রক্রিয়া অন্ধকারেই রয়ে গেছে।

এ প্রসঙ্গে সিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর শেয়ারে প্রায়ই কারসাজি চক্রকে সক্রিয় হতে দেখা যায়। যদিও বর্তমান বাজার পরিস্থিতি খারাপ রয়েছে, তবু কোনো প্রকার মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই প্রায়ই কোনো না কোনো কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ছে। যে কারণে আলাদা মার্কেট গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা খুব সহজেই এসব কোম্পানি সম্পর্কে জেনে-বুঝে লেনদেন করতে পারবেন।

তাই তাদের সক্রিয়তা রোধ করতে এ মার্কেটের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাছাড়া পৃথক মার্কেট হলে পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হয়ে পুঁজিবাজারে লেনদেনে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এতে করে বাজারে শেয়ার সরবরাহ বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, তালিকাভুক্তির বাইরে শত শত স্বল্প মূলধনী কোম্পানি রয়েছে। ৫০ লাখ থেকে ৫ কোটি পর্যন্ত মূলধন সম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে নিয়ে যদি আলাদা মার্কেট গঠন করা হয়, তাহলে এরা পুঁজি বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এছাড়া স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোকে নিয়ে আলাদা মার্কেট গঠন করা হলে এসব কোম্পানি নিয়ে কারসাজির পথ বন্ধ হবে। ফলে স্বল্প মূলধনী কোম্পানির দৌরাত্ম্য কমে যাবে। আর বিনিয়োগকারীরাও এসব কোম্পানি সম্পর্কে সচেতন থাকবে। ফলে বাজারের স্বচ্ছতা আরো বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।

ডিএসই’র একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, কোম্পানির শেয়ারের সাম্প্রতিক অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির পেছনে কোম্পানিরগুলো তেমন কোন অপ্রত্যাশিত মূল্য সংবেদশীল কোন তথ্য নেই। কিছু তথ্য থাকলেও তাতে দর বাড়ার কোন আলামত বহন করে না। শক্ত মৌলভিত্তিক কোম্পানির শেয়ার দর ছাড়া অন্য কোন কোম্পানির দর বাড়া কখনোই স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহন করা ঠিক হবে না। তাই স্বল্পমূলধনী শেয়ার দর বাড়ার বিষয়টি ডিএসই’র নজরে পড়েছে। তাই এ বিষয়টি আমলে নিয়েও ডিএসই কাজ করছে। এ কাজে অবশ্য বিএসইসি’র সহযোগিতা লাগবে বলে জানান তিনি।