পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা কিছুটা ভালো হওয়ায় কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক বাড়তে দেখা গেছে। খেলাপি ঋণ কমে যাওয়া ও বড় অঙ্কের বেশকিছু ঋণ পুনর্গঠন হওয়ায় চলতি অর্ধবার্ষিকীতে ব্যাংক খাতের মুনাফায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঞ্চিতি সংরক্ষণের পরিমাণ কমে আসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা বেড়েছে। তবে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগের আয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না থাকলেও খাতটির বাজার মূলধন বাড়ছে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, চলতি অর্ধবার্ষিকীতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে। আর ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) খাতের কোম্পানিগুলোর আয়ে মিশ্রাবস্থা দেখা গেছে। তবে এসব কোম্পানির শেয়ারদর অনেক নিচে থাকায় এবং অধিকাংশ কোম্পানি মুনাফায় ফিরে আসায় বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক এসব খাতে বাড়তে দেখা গেছে। গত সপ্তাহে দরবৃদ্ধির শীর্ষস্থানে ছিল এ দুটি খাত। গত সপ্তাহে এনবিএফআই খাতের বাজার মূলধন বেড়েছে ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ।

এছাড়া ব্যাংকের বাজার মূলধন ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ বেড়েছে। ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্ধবার্ষিকীতে ১৭টি ব্যাংকের মুনাফা আগের বছরের প্রথমার্ধের চেয়ে বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে ইসলামী ব্যাংক। এছাড়া প্রাইম, ট্রাস্ট, ঢাকা, ইউসিবিএল, উত্তরা, ইস্টার্ন ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

বিপরীতে স্ট্যান্ডার্ড, আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক, এসআইবিএল ও এক্সিম ব্যাংকসহ ১০টি ব্যাংকের মুনাফা আগের বছরের চেয়ে কমেছে। গত সপ্তাহে ওষুধ ও প্রকৌশল খাত লেনদেনের শীর্ষস্থানে থাকলেও ব্যাংক খাতের লেনদেনের পরিমাণ আগের সপ্তাহের চেয়ে প্রায় ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। গত সপ্তাহে গড়ে ৬১ কোটি ৮৩ লাখ টাকার কেনাবেচা হয়েছে ব্যাংক খাতে। এর মধ্যে ৪৮ শতাংশ এসেছে ইসলামী ব্যাংক ও আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার কেনাবেচা থেকে। গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি (১৮ শতাংশ) বেড়েছে আইএফআইসি ব্যাংক শেয়ারের দর।

এছাড়া পূবালী ব্যাংকের ১২ দশমিক ৪ শতাংশ, এসআইবিএলের ৯ দশমিক ১, সিটি ব্যাংকের ৬ দশমিক ৫ ও উত্তরা ব্যাংকের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ দরবৃদ্ধি ছিল উল্লেখযোগ্য। এদিকে এনবিএফআই খাতের আয়ে মিশ্রাবস্থা দেখা গেলেও গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এ খাতের বিভিন্ন শেয়ারের। বিনিয়োগকারীদের চাহিদায় গত সপ্তাহে প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ বাজার মূলধন বেড়েছে খাতটির। খাতটির ২৩ কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেডের শেয়ারদর।

দ্বিতীয় প্রান্তিকের লোকসানে অর্ধবার্ষিকীতে পিপলস লিজিংয়ের ইপিএস আগের বছরের তুলনায় কমলেও গত সপ্তাহে শেয়ারটির দর ১৫ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় প্রান্তিকে খাতটির প্রভাবশালী কোম্পানি আইসিবির ইপিএস সামান্য কমলেও গত সপ্তাহে এর শেয়ারদর ৮ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। মূলত আইসিবির ওপর নির্ভর করেই খাতটির বাজার মূলধন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ে। চলতি অর্ধবার্ষিকীতে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ২৩ কোম্পানির মধ্যে চারটি রয়েছে লোকসানে।

এছাড়া আট কোম্পানির ইপিএস আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। অবশিষ্ট নয় কোম্পানির আয় বেড়েছে। চলতি অর্ধবার্ষিকীতে আইডিএলসির ইপিএস ১ টাকা ২২ পয়সা থেকে বেড়ে ৩ টাকা ২৫ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। আগের বছরের প্রথমার্ধে ২ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে এবার উত্তরা ফিন্যান্সের ইপিএস ৪ টাকা ৩৪ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। আর বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফারইস্ট ফিনান্স, ফাস্ট ফিন্যান্স ও ফিনিক্স ফিন্যান্সের ইপিএস আগের বছরের অর্ধবার্ষিকীর তুলনায় এ বছর কমেছে।

বাজার চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সেবা ও ট্যানারি খাতের বাজার মূলধন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বিপরীতে মিউচুয়াল ফান্ড ও সিমেন্ট খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বড় মূলধনি কিছু শেয়ারের দরবৃদ্ধিতে ডিএসই ব্রড ইনডেক্সে ৩১ পয়েন্ট যোগ হয়েছে। যদিও অন্য দুটি সূচকে নেতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে। গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কেনাবেচার পরিমাণ কিছুটা কমেছে। আগের সপ্তাহের চেয়ে গড় লেনদেন ৯ শতাংশ কমে ৫৬৩ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

 

স্টাফ রিপোর্টার