স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: চরম স্থবিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন দেশের পুঁজিবাজার হাটঁছে কোন পথে। আমাদের দেখার মতো কি কেউ নেই। ধারাবাহিক পতনে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি। ফলে টানা দরপতনে চলছে বিনিয়োগকারীদের রক্তক্ষরণ। এছাড়া ডুবতে থাকা পুঁজিবাজার টেনে তুলবে কোন কান্ডারী?

গত ১৪ মাস ধরে এক কার্যদিবস সূচক বাড়ে তো তিন কার্যদিবস পতন। বলতে গেলে পুঁজিবাজারটি একেবারেই সরকারের মনোযোগের বাইরে। দীর্ঘদিনের জঞ্জাল সরিয়ে একটি স্থিতিশীল ও আস্থার বাজারে পরিণত করার আন্তরিক প্রচেষ্টা অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দেখা যায়নি। ফলে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের পতনের রেকর্ড করেই যাচ্ছে।

মুলত ছাত্র-জনতার বিপ্লবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের অর্থনীতির অন্যান্য খাতে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন এলেও ব্যতিক্রম শুধু পুঁজিবাজার। প্রশ্ন উঠছে সব খাতে সংস্কারের পর ঘুরে দাঁড়ালেও পুঁজিবাজার কেন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে না এর রহস্য কী। এছাড়া গত ১৪ মাসে পুঁজিবাজারের বৃদ্ধি তো দূরের কথা, উল্টো প্রতিদিনই কমছে মূল্যসূচক ও বাজার মূলধন।

ফলে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতা ফিরে আসার ইঙ্গিত মিললেও পুঁজিবাজার চলছে সেই পুরানো উল্টো পথে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত ১৪ মাস পুঁজিবাজারের কোন উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বারবার আস্থার সংকট, দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এছাড়া দেশের অর্থনীতিতে তেমন কোন অবদান রাখতে পারছে না পুঁজিবাজার। বিনিয়োগকারীরা মনে করে বিএসইসির অদক্ষ্য ও অযোগ্য কমিশনের কারণে বেহাল দশা দেশের পুঁজিবাজারের। ফলে বর্তমানে পুঁজিবাজার ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তবে টানা দরপতন হলেও মুখ খুলছে না রাশেদ মাকসুদ কমিশন। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল না করে বাজার সংস্কারের নামে অস্থিতিশীল করছেন। ফলে ক্রমান্বয়ে পুঁজিবাজার ডুবতে বসেছে।

ফলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ কমিশনের ওপর আস্থা পাচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা। গত বছরের ১৮ আগস্ট চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচক কমেছে ৮১৫ পয়েন্ট। মুলত রাশেদ মাকসুদ কমিশন যখন দায়িত্ব নেয় তখন ডিএসই সূচক ছিলো ৫৭৭৮.৬৩ পয়েন্ট। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর সূচক এসে দাঁড়িয়েছে ৪৯৬৭.৯৪ পয়েন্ট।

এদিকে সপ্তাহজুড়ে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে পাঁচ কার্যদিবস দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে ৮ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। তবে ডিএসইতে লেনদেনে কিছুটা বাড়লেও সিএসইতে কমেছে। তবে বিদায়ী সপ্তাহে উভয় পুঁজিবাজারে বাজার মূলধন কমেছে ১৫ হাজার ২০৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সপ্তাহজুড়ে পুঁজিবাজারের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সমাপ্ত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে এই মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহ ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৮ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা বা ১.২৩ শতাংশ।

বিদায়ী সপ্তাহে কমেছে ডিএসইর সব কয়টি সূচকও। প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৫৪.২৮ পয়েন্ট বা ৩.০১ শতাংশ। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ৪৭.১৪ পয়েন্ট বা ২.৩৭ শতাংশ। আর ডিএসইএস সূচক কমেছে ৪৩.৪২ পয়েন্ট বা ৪.০১ শতাংশ। তবে সূচকের পতনের পরও ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৪২২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ২৮৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এক সপ্তাহে লেনদেন বেড়েছে ১৩৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

আর প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ২৭ কোটি ৭ লাখ টাকা বা ৫.৯২ শতাংশ। চলতি সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৮৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৪৫৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে ৩৮৯টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৪০টি কোম্পানির, কমেছে ৩৪০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৯টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩২৭.৫২ পয়েন্ট বা ২.২৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৯৫৮ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসই-৩০ সূচক ১.৮৮ শতাংশ কমে ১২ হাজার ৪১৩ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স সূচক ২.২৪ শতাংশ কমে ৮ হাজার ৬১৫ পয়েন্টে, সিএসআই সূচক ২.৬৬ শতাংশ কমে ৮৭৪ পয়েন্টে এবং এসইএসএমইএক্স (এসএমই ইনডেক্স) ০.০৩ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯৪৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯২ হাজার ১৩০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৭০৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৬ হাজার ৫৭৩ কোটি ৬ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ৯৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৯৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩২৭.৫২ পয়েন্ট বা ২.২৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৯৫৮ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসই-৩০ সূচক ১.৮৮ শতাংশ কমে ১২ হাজার ৪১৩ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স সূচক ২.২৪ শতাংশ কমে ৮ হাজার ৬১৫ পয়েন্টে, সিএসআই সূচক ২.৬৬ শতাংশ কমে ৮৭৪ পয়েন্টে এবং এসইএসএমইএক্স (এসএমই ইনডেক্স) ০.০৩ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯৪৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯২ হাজার ১৩০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৭০৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৬ হাজার ৫৭৩ কোটি ৬ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) লেনদেন হয়েছে ৯৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৯৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা।